Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবরার ফাহাদের মতো পরিণতি হতে চলেছিল কুয়েট শিক্ষার্থীর

খুলনা ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বুয়েটে ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে মারা গিয়েছিল মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক একই পরিণতি হতে চলেছিল সিএসই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমানের। তবে তাকে মারপিট করে গুরুতর আহতবস্থায় পুলিশের হাতে তুলে দেয় ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা। একটি মোবাইল অ্যাপে সরকারবিরোধী মন্তব্য করার অভিযোগে তাকে গেষ্টরুমে নির্মমভাবে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। পরে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অন্যদিকে তাকে ভর্তি অবস্থায় গ্রেফতার দেখিয়েছে খানজাহান আলী থানা পুলিশ।
আহত জাহিদুর রহমানের স্বজনেরা ও কুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, গত রোববার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ রশিদ হলের গেস্ট রুমে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে ডেকে নিয়ে যায়। জাহিদকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প ও হকিষ্টিক দিয়ে বেদম পেটানো হয়। তাকে জামায়াত শিবিরকর্মী আখ্যা দিয়ে নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারালে ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা ভয় পেয়ে যায়। তারা তখন পুলিশকে খবর দেয়। খানজাহান আলী থানা পুলিশ খবর পেয়ে ওই রাতেই পুলিশ তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

জাহিদুর রহমানের বড় ভাই নাঈমুর রহমান বলেন, আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে যেসব কথা বলা হচ্ছে তা সত্য নয়। আমার ভাইকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। ও কোন সংগঠনের সঙ্গে কখনোই জড়িত না। আল্লাহর রহমতে আমার ভাইকে জীবিত পেয়েছি।

ওসি কামাল হোসেন খাঁন জানান, কুয়েটের সিকিউরিটি অফিসার মো. সাদেক হোসেন প্রামানিক বাদী হয়ে জাহিদুর রহমান এবং রেজওয়ান স্যাম নামে দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বর্তমানে জাহিদুর রহমান খুলনা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি রয়েছে। তাকে ভর্তি অবস্থায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে আক্রমণাত্মক মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করে কুয়েট ছাত্রদের মধ্যে অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। জাহিদুর রহমান ভোলা তজমুদ্দিন সোনাপুর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে। মামলার অপর আসামি রেজওয়ান স্যাম ভোলার বোরহানউদ্দিন মুশির হাট গ্রামের বাসিন্দা।

কুয়েটের সিকিউরিটি অফিসার সাদেক হোসেন প্রামানিকের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ড. এমএ রশিদ হলের প্রভোস্ট এমডি হামিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের কিছু শিক্ষার্থী বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করে জাহিদুর রহমান বিভিন্ন দেশবিরোধী গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছে সে। এটা আমাদের নজরে আসায় ছাত্ররা তাকে প্রথমে একটু জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা তাকে পুলিশে সোপর্দ করি। সে আমাদের কাছে বলেছে সে খেলাফতে বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন আহত জাহিদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হলের ছাত্রলীগের বড় ভাইরা তাকে গেস্ট রুমে ডেকে নেন। এরপর ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্টে তার কমেন্ট সম্পর্কে জানতে চান। একপর্যায়ে চড়, লাথি, ঘুষি মারা শুরু করেন। পরে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে সারা শরীরে পেটায়। সবচেয়ে বেশি মেরেছে পায়ে। তারা জানতে চেয়েছে, আমি কোন দল করি, আমার সঙ্গে কে কে আছে। আমি কোনো দল করি না শুনে রাত ১১টা পর্যন্ত থেমে থেমে মেরেছে। এরপর পুলিশে দেয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুয়েট শিক্ষার্থী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ