Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সালাউদ্দিনের বিশাল জয়

প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ১ মে, ২০১৬

জাহেদ খোকন
বহুল কাঙ্খিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচনে বিশাল জয় পেলেন বর্তমান সভাপতি কাজী মো: সালাউদ্দিন। তিনি ‘বাঁচাও ফুটবল’ পরিষদের প্রার্থী কামরুল আশরাফ খান পোটন এমপি’র চেয়ে ৩৩ ভোট বেশি পেয়ে তৃতীয় মেয়াদের জন্য সভাপতি নির্বাচিত হন। সালাউদ্দিন পান ৮৩ ভোট। বিপরীতে পোটনের ভাগ্যে জুটে ৫০ ভোট। মোট ১৩৪ জন কাউন্সিলর নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেও একটি ভোট বাতিল হয়ে যায়। গতকাল উৎসবমুখর পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হয় বাফুফে নিবাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হোটেল রেডিসান ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তারা নির্বাচন চলাকালে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন, এমন কাউকেই হোটেলে প্রবেশ করতে দেননি। দুপুর ২টায় শুরু হয়ে বিকাল ৫টায় শেষ হয় ভোট গ্রহণ। এর দশ মিনিটের মধ্যেই সভাপতি পদের ভোট গণনা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে সহ-সভাপতি ও ১৫ সদস্যের ভোট গণনা শুরু করা হয়। বিকাল ৫টা ১৭ মিনিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ সভাপতি পদে সম্মিলিত পরিষদ প্রার্থী কাজী সালাউদ্দিকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেন। এমন এক বিজয়ের পর সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসতে কিছুটা বিলম্ব হলেও সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়েই সদস্য নির্বাচিত হবার পর হাজির হন সালাউদ্দিন। সকলের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা এই মানুষটির মুখে তখনও যেন কথা ফুটছিলো না। তবুও জানালেন নিজের প্রতিক্রিয়া, ‘এ জয় ফুটবল এবং সত্যের। সত্যের জয় সব সময়ই হয়। কাজ করতে গেলেই সমালোচনা হবে, কাজ না করলে তা হয়না। ভোটাররা আমাকে যোগ্য মনে করেছেন তাই ভোট দিয়ে আবারও জয়ী বানিয়েছেন। আমার পরবর্তী করণীয় কি হবে এবং আপনারা কি দেখতে চান, সে পরিকল্পনা আমি দু’দিন পরে বলবো। মাত্র তো নির্বাচন শেষ হলো। সবাইকে ধন্যবাদ। একটি সফল নির্বাচন করতে সহযোগিতা করার জন্য।’
বাফুফের নির্বাচন নিয়ে কাল দিনভর ছিলো গুঞ্জন। সালাউদ্দিন নন, বাফুফে সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন পোটনই। এমন গুঞ্জনের মূল কারণ ছিলেন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সভাপতি চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। নির্বাচনে জেলা ও বিভাগের ছিলো সর্বোচ্চ ৬৭ ভোট। যারা নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে প্রধান নিয়ন্ত্রক। আর এই পরিষদের নেতাই নাছির উদ্দিন। তাই নির্বাচনে নাছিরের সমর্থন ছিল একটি বড় বিষয়। শুরু থেকেই সালাউদ্দিনের সম্মিলিত পরিষদকে সমর্থন জানিয়ে আসছিলেন নাছির। কিন্তু নির্বাচনের একদিন আগে এমনকি কাল ভোটের দিন সকালেও গুজব ছিল মনজুর কাদেরের ‘বাঁচাও ফুটবল’ প্যানেলকে সমর্থন জানিয়েছেন নাছির। কাদের-পোটনের সঙ্গে নাছিরের গোপন বৈঠকের কথাও শোনা গেছে। দিনশেষে এমন গুজব-গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন নাছির নিজেই। ভোটাধিকার প্রয়োগ শেষে হোটেল রেডিসন ছাড়ার আগে আ জ ম নাছির বলেন, বাফুফের বার্ষিক সভা হয়েছে। যারা ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করবে আগামীতে তাদের নির্বাচিত করার পক্ষেই আমি। আর সমর্থন আগে যাদের দিকে ছিল এখনো তাদের পক্ষেই আছে। গুজবের কথা যেটা উঠেছে সেটা সত্য নয়।’
সালাউদ্দিনের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে হেরে গেলেও অসন্তুষ্ট নন কামরুল আশরাফ পোটন এমপি। নিবাচনের ফলাফল তিনি মেনে নিয়েছেন। হারের পর নিজের প্রতিক্রিয়া এভাবেই প্রকাশ করেন পোটন, নির্বাচনে হারজিৎ থাকবেই। আমি এই ফল মেনে নিয়েছি।’ পোটন অবশ্য আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, যদি তিনি নির্বাচনে হেরে যান তাহলেও সালাউদ্দিন ডাকলে তার ডাকে সারা দিবেন এবং ফুটবল উন্নয়নের কাজ করবেন। ঠিক বিপরীতে অবস্থান ছিলো সালাউদ্দিনের। নির্বাচনের একদিন আগে তিনি বলেছিলেন, ‘যে লোক ফুটবলের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট নন, তিনি জিতলে তার ডাকে সারা দিয়ে কাজ করব এমনটা হতেই পারে না।’
নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন বিজয়ী হিসেবে সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণার পর পরই হাসিমুখে নির্বাচনী কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন সালাউদ্দিনের একমাত্র কন্যা কাজী সারাজিন এবং জামাতা জার্মান প্রবাসী অ্যালেক্স। তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় সারাজিন বলেন, ‘আমি বাবাকে বলেছি, তুমি চিন্তা করো না। যাও, নির্বাচনে অবশ্য জিতবে। যারা নোংরামি করছে, তারা জিততে পারবে না। আমার কথার জবাবে বাবা (সালাউদ্দিন) চুপ করে ছিলেন। আমার বাবা যখন গভীর ভাবনায় থাকেন, তখন তিনি কোনো কথাই বলেন না।’ বাফুফের এবারের নির্বাচনকে ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেছেন ফুটবলবোদ্ধারা। তারা সালাউদ্দিনের বিজয়কে ফুটবলের জয় হিসেবে উল্লেখ করেন। স্বাধীনতার পর এমন নির্বাচন আর হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তারা। এর আগে দু’বার খুব সহজেই সালাউদ্দিন পার পেলেও এবার শক্তিশালী প্যানেল থাকায় বাফুফে নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস ছিলো। ২০০৮ সালে প্রথমবার আমিন আহমেদ চৌধুরীকে ৬২-৪৯ ভোটে হারিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন কাজী সালাউদ্দিন। এরপর ২০১২ সালে আব্দুর রহিম সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন কিংবদন্তী এই ফুটবলার। আর কাল হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে ৩৩ ভোটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সভাপতি পদে হ্যাটট্রিক করলেন কাজী মো: সালাউদ্দিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সালাউদ্দিনের বিশাল জয়
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ