পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসপাতালের বাইরে দালালের হাট!
চট্টগ্রামে সরকারি চিকিৎসা সেবাখাত রোগী বা সেবাপ্রার্থীদের জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানামুখী সমস্যা-সঙ্কট আর সীমাবদ্ধতায় ধুঁকছে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রায় দুই ডজন সরকারি হাসপাতাল। অধিকাংশ হাসপাতালে স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতার তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ রোগী ভর্তি এবং চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীর তীব্র চাপ সামাল দিতে গিয়ে বিরাজ করছে হিমশিম অবস্থা। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পুরনো ও সর্ববৃহৎ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনই রোগীর চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তিল ধারণের জায়গা নেই। রোগী ও স্বজনদের নিত্যদিনের দুর্ভোগের দৃশ্য অবর্ণনীয়। একই অবস্থা বারান্দায় ঠাঁই নেয়া রোগীদেরও।
অন্যদিকে নগরীসহ জেলার সর্বত্র প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিকের ব্যবসা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের সেখানে চিকিৎসা গ্রহণের আর্থিক সঙ্গতি নেই। আবার বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা চরম অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, অবহেলা, ভুল চিকিৎসা, দুর্ব্যবহার, যথেচ্ছ ফি-চার্জ হাতিয়ে নেয়া এবং রোগী ও তাদের স্বজনদের প্রকারান্তরে জিম্মি করে অর্থ লুটপাটের কারখানায় পরিণত হয়েছে। শিশু রাইফার করুণ মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরীর বহুল আলোচিত বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের কর্মকাÐে দুইটি সরকারি তদন্ত কমিটির (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক এবং জেলা সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে পৃথকভাবে গঠিত) প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সুপারিশে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে এলিট ফোর্স র্যাবের অভিযানে চরম অনিয়ম-অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার বহুমুখী চিত্র বেরিয়ে আসে।
এহেন চালচিত্র চট্টগ্রামের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের বলেও তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান। ইতোমধ্যে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নিরূপণী কেন্দ্রে সেবার বিপরীতে চার্জ-ফি ইত্যাদির তালিকা প্রকাশ্য জনসমক্ষে টানানোর নির্দেশনা প্রদান করা হলেও তার বাস্তবায়ন চোখে পড়ে না।
সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপে ‘ঠাঁই নেই’ অবস্থাকে পুঁজি করে কতিপয় অসৎ মালিকের প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকের নিয়োজিত দালাল চক্র সরকারি হাসপাতালের আশপাশে রীতিমতো হাট বসিয়েছে। ওরা রোগী ও রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের ‘এখানে চিকিৎসা পাবেন না, ডাক্তার নেই, অহেতুক ঘোরাঘুরি করতে করতে রোগী মারা যাবে’ ইত্যাদি কথাবার্তায় ‘অল্প টাকায় বেসরকারি ক্লিনিকে উত্তম চিকিৎসার’ নামে নানাভাবে প্রলোভন, পীড়াপীড়ি এমনকি চাপ প্রয়োগ করে রোগী ‘শিকার’ করে ধরে আনার মতো অবৈধ কাজ-কারবার প্রকাশ্যে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে।
অভাব, সমস্যা-সঙ্কট, সীমাবদ্ধতার পাহাড় আর অবহেলা-অব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের দুই ডজন সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নাজুকদশা বিরাজ করছে। অসংখ্য রোগীর চাপ ও চাহিদার তুলনায় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, কর্মচারী ও যন্ত্রপাতিসহ অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা খুবই অপ্রতুল। এতে করে দুর্ভোগই রোগীদের নিত্যসঙ্গী। আউটডোর, জরুরি বিভাগ থেকে শুরু ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রোগীর চাপে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বারান্দায় গুরুতর অসুস্থ রোগীর ভিড়। বারান্দায় ঠাঁই নেয়া আগুনে পোড়া যন্ত্রণাকাতর রোগীকে তার স্বজন হাত-পাখা দিয়ে বাতাস করে একটু স্বস্তি দিতে দেখা গেছে।
বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও চট্টগ্রামে আধুনিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা খাত বিশেষ করে অবকাঠামো সুবিধা অনেক পিছিয়ে আছে। সমুদ্র বন্দর-শিপিং, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প, কল-কারখানা, বিনিয়োগ, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকাÐকে ঘিরে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা অনুপস্থিত। চট্টগ্রামে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে অবস্থানরত বিদেশি ও পর্যটকদের উপযোগী আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতাল ওঠেনি।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা সেবাখাতে দলীয়করণ, দুর্নীতি-অনিয়ম ছাড়াও অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা বৃদ্ধি পেয়েছে। পোস্টিং বাণিজ্য পরিণত হয়েছে ব্যবসায়। অদক্ষরা ভালো পোস্টিং হাতিয়ে নিচ্ছে। স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট আইন-বিধি মোতাবেক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জিক্যাল রিক্যুইজিট (এমএসআর) নীতির আওতায় বার্ষিক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যয়সীমা সুনির্দিষ্ট বা সিলিং করে দেয়া আছে। তবে চমেক হাসপাতালসহ ২৪টি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের আড়াই হাজার শয্যার বিপরীতে সাধারণ রোগীরা উপযুক্ত সেবা থেকে বঞ্চিত। এ অবস্থায় চিকিৎসাবঞ্চিত অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল, মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেক রোগী চিকিৎসার আশায় হন্যে হয়ে ছুটছে প্রতিবেশী দেশে। জমিজমা বিক্রি করেও বিদেশে সুচিকিৎসার উপায় খুঁজছে। গরীব ও সীমিত আয়ের মানুষ সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটছে। অনেক সময়েই ফিরছে নিরাশ হয়েই। অনেক উপজেলা ও ইউনিয়নে চিকিৎসক, নার্স অনুপস্থিত থাকাটাই যেন ‘নিয়মে’ পরিণত হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে তদারকি ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল।
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে ২৪টি সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যা সংখ্যা আড়াই হাজার। এরমধ্যে চমেক হাসপাতালে সর্বোচ্চ দেড় হাজার। রোগী ভর্তি থাকে সারা বছর দ্বিগুণেরও বেশি। ১৯৬৮ সালে চমেক হাসপাতাল ৫শ’ বেড নিয়ে চালু হয়। তখন চট্টগ্রাম শহরের লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ২ লাখ। ১৯৯৬ সালে শয্যা বেড়ে হয় ৭৫০টি, ২০০১ সালে করা হয় ১০১০টি, এখন দেড় হাজার। অথচ চট্টগ্রাম নগরীতে জনসংখ্যা ৬০ লাখ। চমেক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠারও পূর্বে চট্টগ্রামের সবচেয়ে পুরনো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল স্থাপিত হয় ১৯০১ সালে। জেনারেল হাসপাতালেরও পূর্বে তদানীন্তন অবিভক্ত ‘আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে’র অধীনে ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতালটি সঙ্কুচিত হতে হতে বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে চট্টগ্রামের প্রায় প্রতিটি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, নার্স, অ্যাম্বুলেন্স, যন্ত্রপাতির অভাবসহ নানামুখী সমস্যা ও ঘাটতি বিরাজ করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।