মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : ল্যাটিন আমেরিকার অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে
চীন। বিশাল বিনিয়োগের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ব্রাজিলের বিশাল বিশাল সয়াবিনের জমি ক্রয় করে নিচ্ছে দেশটি। অপরদিকে ল্যাটিন আমেরিকা থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য একটি ট্রান্স-কন্টিনেন্টাল রেলব্যবস্থাও করতে যাচ্ছে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, চীন আগামী এক দশকে ল্যাটিন আমেরিকায় ২৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এই বিনিয়োগই ল্যাটিন আমেরিকার অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেবে বলে মন্তব্য করছেন অর্থনৈতিক অঙ্গনের নীতিনির্ধারকরা। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ল্যাটিন আমেরিকায় চীনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আমেরিকার সঙ্গে দ্বৈরথও জমে উঠবে নতুন করে। কারণ, ল্যাটিন আমেরিকা নিয়ে ওবামা প্রশাসনও নতুনভাবে বেশ কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছে। ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের ইন্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) নীতিনির্ধারকদের তথ্যমতে, পরবর্তীকালে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খাদ্য উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হবে এই অঞ্চল। তাছাড়া ল্যাটিন আমেরিকা হলো পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম বিশুদ্ধ পানির উৎস। একই সঙ্গে এই উপমহাদেশে এমন কিছু খামার রয়েছে, যা চীনের জন্য বেশ উপকারী। তবে ল্যাটিন আমেরিকার সঙ্গে এখন পর্যন্ত কৌশলগত কোনো চুক্তি স্বাক্ষর না হলেও বেইজিং যে ক্রমেই ব্রাসিলিয়ার প্রিয়পাত্র হয়ে উঠছে, তা বিনিয়োগের অঙ্ক দেখলেই বোঝা যায়। কারণ, ২০০০ সালে চীন এবং ল্যাটিন আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের আর্থিক মূল্য ছিল মাত্র ১২ বিলিয়ন ডলার। অথচ ২০১৩ সালে এক যুগের ব্যবধানে তা গিয়ে দাঁড়ায় ২৮৯ বিলিয়ন ডলারে। তবে অনেকেরই ধারণা, ল্যাটিন আমেরিকার সঙ্গে চীনের সম্পর্কে বাণিজ্য ঘাটতি প্রকাশ পাবে। কার্নেগি-শিঙ্গুয়া গ্লোবাল পলিসির গবেষক ম্যাট ফেরচেন বলেন, চীন ল্যাটিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যে জড়ালে অসম সম্পর্কে রূপ নেবে। মেক্সিকোর সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্কে তা প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়েছিল। সেক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম শক্তির যারা, তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হবে। কিন্তু ল্যাটিন আমেরিকায় এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন বিশ্লেষক ক্যাটি ওয়াটসন। গত বছর ব্রাজিল সফর করে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কোকিয়াং ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তা বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। অপরদিকে, মেক্সিকোতে ২০১৩ সালে চীন বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আন্তরিকতার অভাবেরই চীন এবং মেক্সিকোর সম্পর্ক দূর পর্যন্ত গড়ায়নি। কিন্তু ল্যাটিন আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে এ ধরনের দূরত্ব নেই বলেই অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক স্থাপনে বড় কোনো বাধা থাকছে না। অপরদিকে, চীন এবং ল্যাটিন আমেরিকার মধ্যে বিরাজমান সাংস্কৃতিক দূরত্বও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন অনেকে। কারণ, বড় পরিসরে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রচিত হলে চীনের অনেককেই ল্যাটিন আমেরিকায় গিয়ে বসবাস করতে হতে পারে। সাংস্কৃতিক দূরত্বের কারণে তা সমস্যা সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলে মনে করেন ওয়াটসন। বরং এসব দূরত্ব জয় করে চীন এবং ল্যাটিন আমেরিকার মধ্যে অভূতপূর্ব সুসম্পর্কই স্থাপিত হবে বলে মনে করেন তিনি। কারণ, দু’পক্ষই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আন্তরিক। একই সঙ্গে চীনের বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ছোঁয়া পেয়ে ল্যাটিন অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া অর্থনীতির দেশগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে, যা অন্য কোনো উপায়ে এত সহজভাবে সম্ভব হবে না। প্রসঙ্গত, ল্যাটিন আমেরিকায় চীনের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে আমেরিকা। কারণ, আমেরিকাও এই অঞ্চল নিয়ে নতুন করে ভাবছে। এর অংশ হিসেবে তারা কিউবার সঙ্গে গত কয়েক দশকের রাজনৈতিক অচলাবস্থা সমাধানের যুগান্তকারী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে আবারো সুসম্পর্কের পথ উন্মুক্ত হয়। সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের কথাও হয় তাদের মধ্যে। তার মানে, ল্যাটিন আমেরিকায় বিনিয়োগ করা নিয়ে চীন এবং ওবামা প্রশাসনের মধ্যে অলিখিত প্রতিদ্বন্দ্বিতাই চলবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেষ পর্যন্ত চীনারাই শেষ হাসি হাসবে বলে ধারণা তাদের। বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।