মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যার প্লাবন দেখা দিয়েছে। ৩০ বছরে আত্মহত্যার ঘটনা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের উপাত্ত বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, প্রতিবছর বয়স্ক লোকজন ছাড়া প্রতিটি বয়স গ্রুপে আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি। মধ্যবয়সী আমেরিকানদের মধ্যেও এই হার উল্লেখযোগ্য যা এক গভীর বেদনাদায়ক ইঙ্গিত প্রদান করছে যে এই গ্রুপটির আত্মহত্যার হার স্থিতিশীল ছিল বা ’৫০-এর দশক থেকে হ্রাস পেয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যেও আত্মহত্যার হার বাড়ছে।
সমীক্ষার সময়টিতে দেখা যায়, ৪৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যবয়সী নারীদের আত্মহত্যার হার অনেক বেড়ে ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে একই বয়স গ্রুপে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার বৃদ্ধি পায় ৪৩ শতাংশে। সমীক্ষায় দেখা যায়, যে কোনো বয়সের পুরুষদের হারই বেড়েছে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাটিসটিক্সে বলা হয়েছে, ১৯৯৯ থেকে ২০১৪ সালে সার্বিক আত্মহত্যার হার বেড়েছে ২৪ শতাংশ। এই সমীক্ষা শুক্রবার প্রকাশ করা হয়।
এই বৃদ্ধি এতই ব্যাপক যাতে দেখা যাচ্ছে আত্মহত্যার হার আমেরিকান জনগনের প্রতি ১ লাখ লোকের মধ্যে ১৩ যা ১৯৮৬ সাল থেকে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছর আত্মহত্যার হার বেড়েছে ২ শতাংশ এবং এই সমীক্ষার প্রথমদিকের সময়ে বার্ষিক বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ। সমীক্ষায় বলা হয়, ২০১৪ সালে আত্মহত্যাকারীদের সংখ্যা ৪২ হাজার ৭৭৩ জন অথচ ১৯৯৯ সালে আত্মহত্যা করেছিল ২৯ হাজার ১৯৯ জন। রবার্ট উড জনসন ফাউন্ডেশনের হেলথ কেয়ারের সিনিয়র উপদেষ্টা ক্যাথরিন হ্যাম্পস্টেড বলেন, এটা সত্যি বিস্ময়কর যে কার্যতো প্রতিটি বয়স গ্রুপেই আত্মহত্যার হার বেড়েছে। তিনি চাকরি ও ব্যক্তিগত আর্থিক অবস্থা নিয়ে চরম হতাশাকে মধ্যবয়সী গ্রুপের লোকদের আত্মহত্যা ও হার বৃদ্ধির মধ্যেকার যোগসূত্র হিসেবে চিহ্নিত করেন।
গবেষকরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করেন, ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যেও আত্মহত্যার হার বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধির হার প্রায় তিনগুণ। যদিও অন্যান্য গ্রুপের তুলনায় তাদের হার তুলনামূলকভাবে এখনো বেশ কম। ১৯৯৯ সালে যেখানে কম বয়সী মেয়েদের আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ৫০, সেখানে ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০। প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যানবিদ এবং এই রিপোর্টের প্রণেতা স্যালি কারটিন বলেন, নিঃসন্দেহে এটা ব্যাপক বৃদ্ধি।
সকল বর্ণ ও নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগত গ্রুপের মধ্যে আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের মধ্যে বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। তাদের নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেড়েছে ৮৯ শতাংশ এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে বেড়েছে ৮০ শতাংশ।
কেবল একটি বর্ণগত গ্রুপে হার কমেছে। কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার কমলে নারীদের হার ৭৫ শতাংশের উপরে।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের দুঃখ-দুর্দশার নতুন প্রমাণ হাজির করছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় কম শিক্ষিত শ্বেতাঙ্গদের দুঃখ-দুর্দশার উপর আলোকপাত করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, হাইস্কুলের শিক্ষা বা এর চেয়ে কম শিক্ষিতদের মধ্যে অতিরিক্ত মাদক গ্রহনে মৃত্যুর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি আত্মহত্যা, লিভার রোগ ও অ্যালকোহল বিষক্রিয়ার হার অনেক বেড়েছে। এই নতুন রিপোর্টে শিক্ষার মাধ্যমে আত্মহত্যার হার কমার কোন উল্লেখ নেই। তবে এসব বিশ্লেষণ পর্যালোচনাকরী গবেষকরা বলছেন বয়স ও বর্ণগত গ্রুপগুলোর প্যাটার্ন সাম্প্রতিক গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্য রয়েছে যা আমেরিকান সমাজে অনেকের চরম হতাশার চিত্রই তুলে ধরছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক পলিসির প্রফেসর ও ‘আওয়ার কিডস’ আমেরিকায় নতুন শ্রেণী বিভাজনের একটি তদন্তের লেখক রবার্ট ডি পুটন্যাম বলেন, আত্মহত্যার প্রবণতা ব্যাপক বৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য, আশাহীনতা ও স্বাস্থ্যের যোগসূত্রের প্রমান মিলছে।
আত্মহত্যার হার বৃদ্ধির ঘটনা অনেক বছর ধরেই ধীরে ধীরে ঘটছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন তারা তাদের সমীক্ষা শুরুর ভিত্তি বছর হিসেবে ১৯৯৯ সালকে বেছে নিয়েছেন কারণ সেটা ছিল জাতীয় পর্যায়ে আত্মহত্যা হারের একটি সর্বনি¤œ পয়েন্ট এবং তারা সম্প্রতিক ব্যাপক বৃদ্ধির পুরো সময়কালকে কাভার করতে চেয়েছেন।
আত্মহত্যার উপর ফেডারেল স্বাস্থ্য সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। এতে উল্লেখ করা হয় যে ৩৫ থেকে ৬৪ বছরের লোকদের মধ্যে আত্মহত্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তারপর থেকে হার আরো অনেক বেড়েছে। গত সমীক্ষার সময়কালের শেষ বছর ২০১০ সাল থেকে গোটা জনসংখ্যার ক্ষেত্রে এই হার বেড়েছে ৭ শতাংশ। ফেডারেল গবেষকরা বলছেন, এই ইস্যুতে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তারা একটি নতুন রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন।
নীতি নির্ধারকরা বলছেন, সারাদেশে আত্মহত্যা রোধের প্রচেষ্টা জোরালো নয়। কিছু হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আত্মঘাতি চিন্তাভাবনা রোধে কাজ করছে এবং ভালো চিকিৎসা কর্মসূচীও পরিচালনা করছে। তবে অনেকেই তা করছে না।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ’স সুইসাইড রিসার্চ কনসোর্টিয়ামের চেয়ারউইম্যান ডক্টর জেন পিয়ারসন বলেন, আমাদের আরো বেশী কার্যকর চিকিৎসা দরকার। তবে এটাকে কিভাবে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পুরোপুরি সম্পৃক্ত করতে হবে তা আমাদের খুুঁজে বের করতে হবে যাতে এটা অধিকতর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। এই কনসোর্টিয়াম আত্মহত্যা রোধ গবেষণার জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের তহবিল পরিচালনার বিষয়টি দেখভাল করে। তিনি বলেন, আমরা বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছি, কিন্তু সত্যিকার অর্থে সবগুলোকে এখনো আমরা সমন্বিত করতে পারিনি।
তিনি উল্লেখ করেন, আত্মহত্যা রোধ প্রকল্পের জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের তহবিল ২০১৬ সালে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারে বাড়ানো হয়েছে। ২০১২ সালে বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ২০ লাখ ডলার। বিষণœতার মতো মনোবৈকল্যসহ মানসিক অসুস্থতা গবেষণায় তহবিলের এই বৃদ্ধি খুবই কম। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।