Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সালাউদ্দিন না পোটন, বাফুফের মসনদে বসবেন কে?

প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১১ এএম, ৩০ এপ্রিল, ২০১৬

জাহেদ খোকন : বহুল কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচন আজ। এই নির্বাচনে সভাপতি পদে মুখোমুখি হচ্ছেন দেশের কিংবদন্তী ফুটবলার কাজী মোঃ সালাউদ্দিন ও ফুটবলাঙ্গনের নতুন মুখ নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটন। রাজধানীর রেডিসন ওয়াটার বøু গার্ডেন হোটেলে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ পর্ব। এর আগে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে বাফুফের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। এবারের বাফুফে নির্বাচনে দুটি শক্তিশালী প্যানেল অংশ নেয়ায় একে ঘিরে এখন দেশের ফুটবলাঙ্গন দু’ভাগে বিভক্ত। দু’প্যানেল ছাড়াও এবার বেশ ক’জন স্বতন্ত্র প্রার্থীও লড়াইয়ে নেমেছেন। গতকাল শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাউন্সিলররা ঢাকায় এসেছেন। গত পরশু নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে এএফসি ও ফিফা প্রতিনিধি সি মুন ইয়ং ঢাকায় আসেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। অপেক্ষা শুধু ভোটগ্রহণের। তাই এখন সবাই ভোটের হিসাব-নিকাশ কষছেন। তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পেতে বাফুফের বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এই পদে লড়ছেন। সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থী হয়েওেছন তিনি। এই প্যানেল থেকে ইতোমধ্যে পার হয়েছেন বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন তিনি। এই পদে নির্বাচন না হওয়ায় সভাপতি, সহ-সভাপতি এবং সদস্য পদে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সালাউদ্দিনের সম্মিলিত পরিষদ পূর্ণ ২১ সদস্যের প্যানেলই দিয়েছে। বিরোধী পক্ষে থাকছে মনজুর কাদের-লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন ‘বাঁচাও ফুটবল’ পরিষদ। এই প্যানেল থেকে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কামরুল আশরাফ খান পোটন। ‘বাঁচাও ফুটবল’ পরিষদ সভাপতি ছাড়াও ৪ সহ-সভাপতি এবং ১৪ জন সদস্যসহ মোট ১৯ জনের প্যানেল নিয়ে নির্বাচন করছে। দুই প্যানেলের বাইরে বেশ ক’জন স্বতন্ত্র প্রার্থীও নির্বাচনে লড়াইয়ে নেমেছেন।
বাফুফে নির্বাচনে ১৩৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ ভোটেই একজন সভাপতি, ৪ সহ-সভাপতি এবং ১৫ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। যারা দেশের ফুটবল উন্নয়নে কাজ করে যাবেন আগামী চার বছর। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের ৬৭ ভোটার ছাড়াও বিভিন্ন সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ড, কোচেস ও রেফারিজ কমিটি থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলরা ভোট দিয়ে বাফুফের আগামী কার্যনির্বাহী নির্বাচিত করবেন। ফিফার রুলস এবং রেগুলেশন মেনে তৃতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাফুফের নির্বাচন। আগে সাধারণ সম্পাদকই ছিলেন বাফুফের প্রধান ক্ষমতাধর ব্যক্তি। যদিও সভাপতির কাছে তাকে জবাবদিহিতা করতে হতো। তারপরও সব কিছুর সিদ্ধান্তেই সাধারণ সম্পাদকের প্রভাব থাকত। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা নিয়ম বদলে দেয়ায় সভাপতিই বনে যান বাফুফের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তি। ফিফার নিয়ম মেনেই এর আগে দু’বার বাফুফের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর নতুন নিয়ম চালুর পর থেকেই সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন কাজী সালাউদ্দিন। তিনি প্রথমবার (২০০৮ সালে) যখন সভাপতি নির্বাচিত হন তখন বিরোধী পক্ষ খুব বেশি শক্তিশালী ছিলো না। বলতে গেলে অনেকটা উত্তাপহীন নির্বাচন জিতেই বাফুফে সভাপতির দায়িত্বে বসেন সালাউদ্দিন। পরের বার (২০১২ সালে) নির্বাচনে নামতেই হয়নি তাকে। তখন বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য সভাপতি নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট সস্পুর্ণ আলাদা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এবার সহজে পার পাবেন না সালাউদ্দিন। কারণ হিসেবে বলা যায়, অনেকটা শক্ত হয়েই এবার মাঠে নেমেছেন ‘বাঁচাও ফুটবল’ পরিষদ নেতা কামরুল আশরাফ খান পোটন। তিনি দেশের ক্রীড়াঙ্গনের রথী-মহারথীদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়েই নির্বাচন করছেন। তার সঙ্গে হেভিওয়েট ক্রীড়া সংগঠকদের পাশাপাশি সাবেক তারকা ফুটবলাররাও আছেন। বন্ধু যখন শত্রæ তখন সালাউদ্দিনের তৃতীয় মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হওয়াটা কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনজুর কাদের এবার তার সবচেয়ে বড় শত্রæ। কাদেরের সমর্থন পেয়েই দুর্দান্ত গতিতে নির্বাচনী মাঠে দৌড়াচ্ছেন পোটন।
নির্বাচনে নামার পর থেকেই সালাউদ্দিন ও পোটনের প্যানেল পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ-অনুযোগ করে চলেছে। পোটনের ‘বাঁচাও ফুটবল’ পরিষদ নেতাদের দাবি, গত দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করলেও দেশের ফুটবলের কোনো উন্নতি করতে পারেননি সালাউদ্দিন। উল্টো ফিফা এবং এএফসি’র কাছ থেকে পাওয়া টাকা লুটে-পুটে খেয়েছে বাফুফের বর্তমান কমিটি। অপরদিকে পোটন একজন ব্যবসায়ী। মাত্র ১৩-১৪ দিন ধরে ফুটবলাঙ্গনে এসে বাফুফের কি উন্নতি করবেন তিনি- সালাউদ্দিনের প্যানেল থেকে এমন তির্যক বাক্যই ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে। অভিযোগের মাত্রা এমন পর্যায়ে চলে গেছে বাফুফের নির্বাচনে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের বিষয়টিও উঠে এসেছে। দু’পক্ষই বলছে সরকারী নেতা-আমলারা নাকি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। সালাউদ্দিন তো আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। তিনি নিজের এবং কাউন্সিলদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাওয়ার কথাও বলেছেন সালাউদ্দিন।
নির্বাচন থেকে সালাউদ্দিনকে সরিয়ে দেয়া এবং কিংবা নিজে থেকে তার সরে যাওয়ার গুজব-গুঞ্জনও শোনা গেছে। দু’পক্ষ শুধু পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে ভোটারদের মনোরঞ্জনের জন্য গত ১৫ দিন বেশ ব্যস্ত থেকেছে। ভোটারদের উদ্দেশ্যে সালাউদ্দিনের কথা, ‘এটা আমার শেষ নির্বাচন। আমি যদি তৃতীয়বারের মতো বাফুফের দায়িত্বে আসতে পারি, তাহলে ফুটবলের সব অসমাপ্ত কাজ শেষ করব। জেলার ফুটবল উন্নয়নে আরো বেশি মনোযোগী হব। ফুটবলের হারানো জৌলুস আবার ফিরিয়ে আনব।’ সভাপতি পদে নির্বাচিত হলে আগামী চার বছর ২৫টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে সালাউদ্দিনের কমিটি কাজ করবে বলে সম্মিলিত পরিষদ ইশতেহারও ঘোষণা করেছে। আর ভোটারদের উদ্দেশে পোটন বলেছেন, ‘ফুটবলের উন্নতির জন্য টাকার প্রয়োজন। টাকা আমার কাছে কোনো সমস্যা নয়। আমি নির্বাচিত হলে জেলার ফুটবল উন্নয়নে বেশি কওে কাজ করব। তৃণমূল থেকে ফুটবলার বের করে আনব।’ ১৪টি বিষয় সামনে রেখে নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি দিয়েছে ‘বাঁচাও ফুটবল’ পরিষদের সভাপতি প্রার্থী কামরুল আশরাফ খান পোটন।
দুই প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গত কমিটির দুই সক্রিয় সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং পুলিশ কর্মকর্তা শেখ মো. মারুফ হাসান সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করছেন। অবশ্য নির্বাচনে নামলেও তাদের প্রচারণা খুব একটা চোখে পড়েনি। এছাড়া স্বতন্ত্র সদস্য পদে নির্বাচনে নেমেছেন আমের খান, আসাদুজ্জামান মিঠু ও ইকবাল হোসেন। এরাও প্রচারণায় তেমন সক্রিয় ছিলেন না।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যার আগে গুঞ্জন ওঠে, শেষ মুহুর্তে কাজী সালাউদ্দিনের সম্মিলিত পরিষদের সমর্থনে আর থাকছে না জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ। এই গুঞ্জন আরো ডানা মেলে যখন খবর আসে ‘বাঁচাও ফুটবল’ পরিষদের সভাপতি প্রার্থী কামরুল আশরাফ খান পোটন এবং জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সভাপতি আ জ ম নাছির উদ্দিন এক আলোচনা সভায় বসেন। তবে সুত্র জানায়, এটি নিতান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিলো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সালাউদ্দিন না পোটন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ