Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

সাফ অনুর্ধ্ব-১৫ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে সেরা হলো বাংলাদেশ কিশোর দল। গতকাল দুপুরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্সে টুর্নামেন্টের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ টাইব্রেকারে ৩-২ গোলের জয় পেয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। নির্ধারীত ৯০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে ড্র থাকলে টাইব্রেকারে ফাইনালের ভাগ্য নির্ধারণ হয়। যেখানে সেই মেহেদী হাসানের কারিশমা দেখলেন ফুটবলপ্রেমীরা। সেমিফাইনালে ভারতকে হারানো ম্যাচের মতই ফাইনালের নায়ক বাংলাদেশ গোলরক্ষক মেহেদী। টাইব্রেকারে তিনি পাকিস্তানের তিনটি শট রুখে দিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করে হন ম্যাচসেরা পারফরমার।

স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষে ‘এ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচের ৩৪ মিনিটে লালকার্ড পেয়েছিলেন বাংলাদেশের নিয়মিত গোলরক্ষক মিতুল মারমা। ফলে বাকি ৫৬ মিনিট লাল-সবুজের গোলবার সামলাতে হয়েছে দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক মেহেদী হাসানকে। ওটাই ছিলো আন্তর্জাতিক ম্যাচে মেহেদীর অভিষেক। ওই ম্যাচে তার দল জিতে সেমিফাইনালে আসলে এখানে নিজের কারিশমা দেখান এই কিশোর গোলরক্ষক। শেষ চারে বাংলাদেশের সেরা একাদশে সুযোগ পেয়ে বাজিমাত করেন মেহেদী। বনে যান ভারতকে ৪-২ গোলে হারানোর নায়ক। টাইব্রেকারে ভারতের নেয়া প্রথম দু’টি শট দৃঢ়তার সঙ্গেই রুখে দিয়ে বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ফাইনালে। আর শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পাকিস্তানের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দেশকে এনে দেন সাফ সেরার খেতাব ।

২০১১ সালে শুরু হওয়া দক্ষিণ এশিয়ার কিশোরদের এই টুর্নামেন্টে এটি ছিলো বাংলাদেশের দ্বিতীয়বার ফাইনালে খেলা। দুইয়েই বাজিমাত। পাকিস্তানকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুললো বাংলাদেশ কিশোর দল। এ যেন তিন বছর আগের প্রতিচ্ছবি। ২০১৫ সালে সিলেটে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে প্রথম শিরোপা জিতেছিল লাল-সবুজরা। ওই ম্যাচটিও নির্ধারীত সময়ে ১-১ ব্যবধানে অমিমাংসিত ছিল। তখন অনূর্ধ্ব-১৬ দলকে নিয়ে টুর্নামেন্টটি হলেও ২০১৭ সাল থেকে এএফসি টুর্নামেন্টের সঙ্গে সঙ্গতি রাখার জন্য অনূর্ধ্ব-১৫ দলকে নিয়ে হচ্ছে সাফের আসর। এটা টুর্নামেন্টের পঞ্চম আসর। ঘরের মাঠে তৃতীয় আসরের শিরোপা জিতলেও পরের আসরে তা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। গত বছর এই নেপালে অনুষ্ঠিত সাফের চতুর্থ আসরে তৃতীয়স্থান পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৫ দলকে। বলা যায় এবার সেই হারানো শিরোপা পুনরুদ্ধারেরই মিশন ছিলো লাল-সবুজদের। টুর্নামেন্টের সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন ভারতকে সেমিফাইনালেই বিদায় করে উজ্জীবিত ছিল বাংলার অদম্য কিশোররা। সেই উজ্জীবিত ভাবই এবার রূপ নিল উচ্ছাসে। পাকিস্তানকে হারিয়ে এক আসর পর দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব ফিরিয়ে আনলো বাংলাদেশের কিশোররা।

কাল ফাইনালের শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণে পাকিস্তানের রক্ষণদূর্গকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে বাংলাদেশ ফরোয়ার্ডরা। যার ফল তারা পেয়ে যায় ম্যাচের ২৫ মিনিটে। এসময় বাংলাদেশের একটি কর্নার শট ফিরাতে গিয়ে পাকিস্তানের ডিফেন্ডার হাসিব হেড নেন। কিন্তু বল ক্লিয়ার না হয়ে চলে যায় তাদেরই জালে। ফলে আত্মঘাতি গোলে এগিয়ে যায় লাল-সবুজরা (১-০)। অবশ্য ৫৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচে ফিরে পাকিস্তান। এসময় পাকিস্তানের এক ফরোয়ার্ড বল নিয়ে বক্সে প্রবেশ করলে তাকে ফেলে দেন বাংলাদেশের হেলাল। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজালে তা থেকে গোল করেন পাকিস্তানের মহিবুল্লাহ (১-১)। ম্যাচ সমতায় আসার পর দু’দলই চেষ্টা করে এগিয়ে যেতে। কিন্তু নির্ধারিত ৯০ মিনিটে আর কোন গোল হয়নি। পরে অমিমাংসিতভাবে খেলা শেষ হলে সরাসরি টাইব্রেকারের ব্যবস্থা করা হয়। তবে টাইব্রেকার পর্বের শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। রাজন হাওলাদারের নেয়া প্রথম শট ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে গেলে হতাশা নেমে আসে বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু পাকিস্তানের জুনায়েদের নেয়া প্রথম শট বাম দিকে ঝাপিয়ে রুখে দেন গোলরক্ষক মেহেদী হাসান। প্রতিদ্ব›দ্ধীতায় ফিরে আসে বাংলাদেশ।
টাইব্রেকারের দ্বিতীয় শটে হৃদয় গোল করলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ১-০ ব্যবধানে। তবে পাকিস্তানের আদনানের নেয়া দ্বিতীয় শট ডান দিকে ঝাপিয়ে পড়ে রুখে দিয়ে গোলরক্ষক মেহেদী লাল-সবুজদের দেখান জয়ের স্বপ্ন। আর পাকিস্তানের মোদাসসের নজরের নেয়া পঞ্চম শট ঠেকিয়ে তিনি বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন। এর আগে অবশ্য বাংলাদেশের রবিউল পঞ্চম শট পাকিস্তানের গোলরক্ষকের হাতে তুলে দিয়ে দলকে চাপে ফেলেছিলেন। টাইব্রেকারে বাংলাদেশের পক্ষে ৩ গোল করেন যথাক্রমে হৃদয়, রাজা আনসারী ও রুস্তম। পাকিস্তানের হয়ে দু’টি গোল করতে সক্ষম হন মহিবুল্লাহ এবং ওয়াসিফ।

দক্ষিণ এশিয়ার কিশোর ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই সাফ অনুর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় শিরোপা জিতে বাংলাদেশ ছুঁয়ে ফেললো ভারতকে। এর আগে ভারতীয়রা ২০১৩ ও ২০১৭ সালে দু’বার টুর্নামেন্টের ট্রফি ঘরে তুলেছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ