মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পাকিস্তান জুড়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভের রাশ টানতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। কট্টরপন্থী বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে তাদের সঙ্গে অবশেষে চুক্তিতে উপনীত হয়েছে ইমরান খানের সরকার। এর ফলে সেখানকার পরিস্থিতি এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রনে এসেছে।
২০১০ সালে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে আসিয়া বিবিকে ফাঁসির সাজা দিয়েছিল পাকিস্তানি আদালত। এ রায় বাতিল করে গত বুধবার তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে পাক সুপ্রিম কোর্ট। তার পর থেকেই কট্টরপন্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান। সেই আন্দোলনের রাশ এখন ইমরানের জোট সরকারের সঙ্গী তেহরিক ই লাব্বাইকের হাতে। দেশের বিভিন্ন অংশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জাতীয় সড়ক। বন্ধ দেশের অধিকাংশ স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়। কট্টরপন্থীদের রোষের মুখে পড়েছেন বিচারপতি ও আইনজীবীরাও। আসিয়ার পক্ষে রায় দেওয়া বিচারপতি ও তার হয়ে আদালতে সওয়াল করা আইনজীবীদের মৃত্যুদন্ডের দাবি জানিয়েছে মৌলবাদী সংগঠনগুলি। এর পরই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন সইফুল। যদিও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলে মামলার প্রয়োজনে ফের দেশে ফিরতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় শুক্রবার মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধের নির্দেশ দেয় পাকিস্তান সরকার। রাজধানী ইসলামাবাদে টেলিফোন নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশটির সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখে। এরমধ্যেই শনিবার দুই পক্ষের সমঝোতার খবর সমানে আসে। কট্টর ইসলামপন্থী দল তেহরিক-ই-লাবাইকের (টিএলপি) সঙ্গে করা এ চুক্তিতে আসিয়া বিবির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। একইসঙ্গে এ ইস্যুতে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আটককৃতদের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। তবে সহিংসতায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী মামলা চলবে।
মুক্তির পর আসিয়া সপরিবারে দেশ ছাড়তে পারেন পারে এমন ইঙ্গিতের মধ্যেই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বিক্ষোভ বন্ধ করে দলীয় সমর্থকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নিয়েছে তেহরিক-ই-লাব্বাইক। ইতোপূর্বে এ ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। সর্বাত্মক বিক্ষোভের পাশাপাশি বিচারকদেরও প্রতিও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিল তারা। যদিও মৌলবাদীদের সঙ্গে পাক সরকারের এই বোঝাপড়ায় হতাশ দেশের উদারমনস্ক মানুষজন। এই চুক্তিকে ‘ফের আত্মসমর্পণ’-এর ঘটনা বলেছে পাকিস্তানের সব থেকে পুরনো সংবাদপত্র ডন।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী তেহরিক-ই-লাব্বাইকের সঙ্গে সরকারের চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিবিসি’কে তিনি বলেন, এ মুহূর্তেই কট্টরপন্থা দমন না করতে পারায় সমঝোতার পথে হাঁটতে হয়েছে সরকারকে। তার ভাষায়, ‘দুইটি রাস্তা আছে। শক্তি প্রয়োগ অথবা আলাপ আলোচনা। কিন্তু যখনই আপনি শক্তি প্রয়োগ করতে যাবেন, তখন লোকজনের প্রাণহানি ঘটতে পারে। একটি রাষ্ট্রের এমনটা করা উচিত নয়। আর আলোচনার মাধ্যমে কিছু পেতে হলে আপনাকে কিছু ছাড় দিতে হবে।’
কট্টরপন্থীদের কাছে সরকার আত্মসমর্পণ করছে না বলেও মন্তব্য পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সরকার যা করছে তা হচ্ছে আগুনে পানি ঢেলে দেওয়া। তবে সমাধান খুঁজে বের করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এর আগে আসিয়া বিবির খালাসকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত বিক্ষোভ মুখর পরিস্থিতি মোকাবেলায় শুক্রবার পাকিস্তান সরকার দেশটির মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। বিক্ষোভের মুখে বন্ধ করে দেওয়া হয় বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চলতে থাকে সড়ক অবরোধ। এরমধ্যেই শুক্রবার ‘তালেবানদের পিতা’ নামে পরিচিত মওলানা সামি উল হক হত্যাকান্ডে অস্থিরতা আরও বেড়ে যায়।
আসিয়া বিবির মামলা নিঃসন্দেহে গত এক দশকে পাকিস্তানের অন্যতম হাই প্রোফাইল মামলা। তাঁর মুক্তির দাবিতে সরব হয়েছেন সারা দুনিয়ার একাধিক মানবতাবাদী সংগঠন। পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট এবং পোপ ফ্রান্সিস, পরপর দুই খ্রিস্টান ধর্মগুরু তাঁর মুক্তির জন্য পাক সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি, আসিয়ার মৃত্যুদন্ডের দাবিতে চরমপন্থী অবস্থান নেয় কট্টরপন্থী রাজনৈতিক ও জঙ্গি সংগঠনগুলিও। আসিয়ার মুক্তির দাবিতে সমর্থন জানানোর জন্য আততায়ীদের হাতে খুন হন পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টি এবং পঞ্জাবের গভর্নর সলমন তাসির।
তিন সন্তানের জননী খৃস্টান নারী আসিয়া বিবি (৪৭) ২০০৯ সালের এক গরমের দিনে খামারে কাজ করার সময় মুসলমান সহকর্মীদের সঙ্গে তার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পরে মুসলমান শ্রমিকরা দাবি করে, আসিয়া বিবি ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। আসিয়া বিবি উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হওয়ার কথা স্বীকার করলেও ধর্ম অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। দেশটির প্রথম নারী হিসেবে ২০১০ সালে পাকিস্তানের ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত আইনে আসিয়া বিবিকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।