Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পর্যবেক্ষক না পাঠালেও নির্বাচনে নিবিড় নজরদারি করবে ইইউ

ডয়েচে ভেলে’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনসিয়ে তিরিঙ্ক

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

পর্যবেক্ষক না পাঠালেও বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে নিবিড়ভাবে নজরদারি করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। পাশাপাশি প্রকৃত, বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও সবার অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন প্রত্যাশা করে তারা। জার্মানীর অনলাইন ডয়েচে ভেলে’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসিয়ে তিরিঙ্ক।
সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েও কথা বলেন তিনি। বলেন, এ আইন নিয়ে মিডিয়া সংশ্লিষ্ট, নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলো, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। কথা হয়েছে সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গেও। এমন পরিস্থিতি সরকার কিভাবে মোকাবিলা করে সেদিকে তাকিয়ে আছেন অনেকে।
রেনসিয়ে তিরিঙ্ক বলেন, আমরা বাংলাদেশের চলমান ঘটনাপ্রবাহের দিকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বিশেষ করে যখন এখানে বহুত্ববাদ ক্রমেই আক্রমণের শিকারে পরিণত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের মধ্যকার বর্তমান সম্পর্ককে আপনি কীভাবে দেখছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে রেনসিয়ে তিরিঙ্ক বলেন,দু’পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো, দীর্ঘস্থায়ী। আগে এটা ছিল উন্নয়ন সহযোগিতা হিসেবে। কিন্তু এখন অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বাণিজ্য। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় গন্তব্য হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দিক থেকেও আমাদের মধ্যে ভালো ও আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। আমরা মানবাধিকার, সুশাসন, উন্নয়ন কর্মসূচি, সরকারি অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একত্রে কাজ করি। আমি সব সময়ই মনে করি, আরো বেশি কিছু করার সুযোগ আছে।
বাংলাদেশে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাইলে ইইউ রাষ্টদূত বলেন, আমরা এখানে বাংলাদেশে সবার কথা শুনেছি। যারা এ আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদের কথা শুনেছি। এর মধ্যে রয়েছে মিডিয়া, নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলো, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী। আমরা এ ইস্যুটি তুলে ধরেছি বাংলাদেশ সরকারের আইনমন্ত্রী ও অন্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে। এমন কি এ ইস্যুতে আমরা একটি বৈঠক করেছি। তাতে সভাপতিত্ব করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এসব বৈঠকে আইনটি সম্পর্কে আমাদেরকে আপডেট জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এখনও আইনটি সংস্কার করার সুযোগ আছে। তাই এটা ইতিবাচক হবে যদি সরকার বাস্তবেই আইনটি সংস্কার করে। সরকার কীভাবে জন-উদ্বেগ নিরসন করবে- সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিগুলোর দিকে আমরা নিবিড় নজর রাখছি। বিশেষ করে, যখন বহুত্ববাদ ক্রমাগত হুমকিতে রয়েছে। তিনি বলেন, মুক্ত মত ও মুক্ত সংবাদ মাধ্যম একটি সার্বজনীন মূল্যায়নের মানদন্ড, যা সমুন্নত রাখার জন্য সচেষ্ট ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেজন্য শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ কেমনভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখছে আমরা তা নজরদারি করছি।
বিরোধী দলগুলো ও নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলো অভিযোগ করছে যে, বাংলাদেশ সরকার ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কথা বলার স্থান সঙ্কুচিত করছে। এ অভিযোগগুলোকে আপনি কীভাবে দেখছেন-এমন প্রশ্নর জবাবে ইইউ রাষ্টদূত বলেন, এখানকার রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করা আমার পক্ষে আসলেই খুব কঠিন। প্রতিটি পক্ষেরই তার নিজস্ব বক্তব্য আছে। আমি আসলে এ দেশে কী ঘটছে তা দেখার ও বোঝার চেষ্টা করছি। আমি মনে করি, বিরোধী দল ও ক্ষমতাসীন দল নির্বাচন নিয়ে সংলাপে বসছে, এটা একটি ইতিবাচক দিক। এমন পটপরিবর্তনকে আমরা স্বাগত জানাই। বাংলাদেশে আসলে তুলনামূলকভাবে আমি একজন নবাগত। এখানে মাত্র এক বছর হলো এসেছি। আমাকে সব সময়ই বলা হয়েছে যে, যখন নির্বাচন আসে বাংলাদেশে, তখনই রাজনৈতিক অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাস্তায় রাস্তায় বিশাল সব বিক্ষোভ প্রতিবাদ হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত অবশ্যই আমি বলবো পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে আমরা আশাবাদী এবং নির্বাচনকে স্বাগত জানাই। এটা ভালো যে, এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিরোধীরা। আমরা আস্থাশীল ও আশাবাদী যে, এই নির্বাচন হবে জেনুইন, বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও সবার অংশগ্রহণমূলক।
কিন্তু নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশে পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রেনসিয়ে তিরিঙ্ক বলেন, আমরা পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছি না। কারণ, বিশ্বাসযোগ্য একটি পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানো একটি অত্যন্ত বড় অপারেশন। এর জন্য প্রয়োজন বিপুল সংখ্যক পর্যবেক্ষক, কয়েক মাসের প্রস্তুতি। বাজেটের দিক থেকে এটা বড় খরচের একটি বিষয়। আর তাতে প্রচুর উদ্যোগ ও প্রস্তুতির বিষয় থাকে। তাই আমরা এবার পর্যবেক্ষক টিম না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর অর্থ এই নয় যে, এই নির্বাচনকে আমরা ফলো করবো না। অবশ্যই আমরা বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির দিকে নিবিড় মনোযোগ রাখবো। তা ছাড়া বাংলাদেশে ভালো মানের স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা আছেন। সম্ভবত তারাই এই নির্বাচন মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে চমৎকারভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
আগামী মাস ও বছরগুলোয় বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র কীভাবে বিবর্তিত হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে রেনসিয়ে তিরিঙ্ক বলেন, আমার কাছে কোনো ক্রিস্টাল বল নেই। তাই আমি আগেভাগেই কোনো পূর্বাভাস দিতে চাই না। আমরা সামনে যেটা দেখতে চাই, তা হলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। দেশটিতে বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকুক এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করি। বাংলাদেশ আশাতীত ভালো পারফরম করেছে। বিশেষ করে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে। গত পাঁচ দশকে এ দেশের অর্থনৈতিক বিস্তৃতি আকর্ষণীয়। তাই আমরা এ দেশের উন্নয়নকে টেকসই হিসেবে দেখতে চাই। সব বাংলাদেশিকে দেখতে চাই সমৃদ্ধশালী হিসেবে।
সাক্ষাৎকারভিত্তিক ডয়েচে ভেলে’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সম্প্রতি বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার জেল দ্বিগুণ করেছেন বাংলাদেশের একটি আদালত। তার জেল ৫ বছর থেকে ১০ বছর করা হয়েছে। তার সমর্থকরা বলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে তা সাজানো। শাস্তি এভাবে দ্বিগুণ করায় ওই নির্বাচন নিয়ে আরো সংশয় বেড়েছে।
একদিন আগে অন্য একটি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের জেল দেয়া হয়েছে। এসব রায়ে প্রধান বিরোধী দল এক বড় বিপদের মুখে পড়েছে। অন্যদিকে, আসন্ন নির্বাচনে আবার বিজয় নিশ্চিত করে ক্ষমতা দৃঢ় করতে চাইছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসন ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করছেন সমালোচকরা। তারা সম্প্রতি পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন। এ আইনটির ব্যাপক সমালোচনা করেছে মিডিয়া ও অধিকারবিষয়ক গ্রুপগুলো। বলা হচ্ছে, এ আইনটি ভিন্ন মতাবলম্বী ও মুক্ত মত প্রকাশকে খর্ব করতে ব্যবহার করবে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সরকার বলছে, ভুল তথ্য প্রচার প্রচারণা থেকে দেশকে রক্ষা করতে তারা এ আইন করেছে। আগস্টে হাজার হাজার ছাত্র বিক্ষোভ করার পর সুপরিচিত একজন সাংবাদিক, আইনজীবী ও সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে সরকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

১৬ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ