বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ফেনীতে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর ২০ দিনেও সন্ধান পায়নি পুলিশ ও তার পরিবার। ধারণা করা হচ্ছে, গৃহবধূকে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে নির্যাতন চালাচ্ছে। বর্তমানে নির্যাতনের শিকার সে কিশোরী গৃহবধূ বেঁচে আছে না মরে গেছে তা জানে না তার মা আসমা আক্তার ও স্বজনরা। অকালে স্বামীকে হারিয়ে তার রেখে যাওয়া স্মৃতি মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলেন আসমা আক্তার। মেয়েকে পড়ালেখা করিয়ে অনেক বড় করার স্বপ্ন থাকলেও অভাব আর দরিদ্রতার কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
ফলে মায়ের অনিচ্ছা সত্বেও চাচা আর জেঠারা তাদের ভাগিনার কাছে বিয়ে দেন জান্নাতকে। বিয়েটাই তার জীবনে কাল হয়। স্বামী, শ্বশুর শাশুড়ির নির্যাতনের পর থেকে তারাই জান্নাতকে অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে রাখে বলে জানা গেছে। তার বিধবা মা মেয়ের সন্ধান না পেয়ে পাগলপ্রায় অবস্থায় ফেনীর আইনপ্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ঘটনার ২ দিন পর বিষয়টি ফেনীর পুলিশ সুপারকে জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন ভিকটিমের মা আসমা আক্তার। পুলিশ সুপার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল উক্য সিংকে দায়িত্ব দেন। নিখোঁজ গৃহবধূকে উদ্ধারের বিষয়টিতে গুরুত্ব না দিয়ে অভিযুক্তদের ২১ অক্টোবর সার্কেল অফিসে হাজির হবার নোটিশ দিয়ে দায় সারেন এএসআই মো. ফিরোজ আলম। এ ব্যাপারে জানতে উক্য সিংকে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি অবগত নন বলে জানান।
এ বিষয়ে গত ১৭ অক্টোবর মেয়েকে ফিরে পেতে ভিকটিমের মা আসমা আক্তার বাদী হয়ে ফুলগাজী থানায় এজাহার নং- ০৫/৯৩ দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান উপ-পরিদর্শক আনবিক চাকমা। তদন্তের দায়িত্ব পাবার ৩ দিন পর তিনি ছুটিতে চলে যান। ফিরে আসেন গতকাল শনিবার সকালে। ফলে ৬ দিন ধরে জান্নাতকে উদ্ধারে পুলিশের কোন ভূমিকা ছিল না। বাদীর এজাহার, ভিকটিমের স্বজন ও স্বাক্ষীগণের বক্তব্যে জানা গেছে, ছাগলনাইয়া উপজেলার চাঁদগাজী এলাকার জয়নগর গ্রামের মৃত মোশাররফ হোসেন ও আসমা আক্তারের কন্যা বিবি মরিয়ম জান্নাতের সাথে ধর্মীয় বিধানমতে পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিয়ে হয় ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের হাজী আবদুস সোবহানের পুত্র ইসমাইল হোসেন রিপনের। রিপন জান্নাতের আপন ফুফাতো ভাই।
বিয়ের পর ১ বছর জান্নাত তার মায়ের কাছে ছিল। পরে স্বামী ও তার স্বজনরা জান্নাতকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে ১৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে তার ওপর চলতে থাকে নির্যাতন।
সর্বশেষ গত ৮ অক্টোবর স্বামী, শ্বশুর আর শাশুড়িসহ অজ্ঞাত কয়েকজন মিলে জান্নাতকে ব্যাপক মারধর করে। বিষয়টি তাদের আত্মীয় ও এলাকার লোকজন জান্নাতের মাকে ফোন করে জানালে তিনি মেয়েকে উদ্ধারের জন্য বের হবার প্রস্তুতি নেন। এমন সময় নিজেকে বাঁচাতে রিপন জান্নাতের বাড়িতে গিয়ে উল্টো শাশুড়ি আসমার কাছে জানতে চায় তার স্ত্রীকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে। একপর্যায়ে সে শাশুড়িকে মারধর করাকালে চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ছুটে এলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। আসমাকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে ছাগলনাইয়া হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়।
হাসপাতাল থেকে ফিরে আসমা মেয়ের খোঁজ করেন। কিন্তু মেয়ে কোথায় আছে অদ্যাবধি তিনি জানেন না। সর্বশেষ ৮ অক্টোবর তার মেয়েকে মারধরের পর থেকে তার আর কোন খোঁজ তিনি পাননি। সে বেঁচে আছে না পাষন্ড স্বামী, শ্বশুর আর শাশুড়ির নির্মম নির্যাতনে মারা গেছে তা জানেন না সন্তানের জন্য পাগলপ্রায় এ মা। এ বিষয়ে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আনবিক চাকমার কাছে ফোন করা হলে জানান, ছুটি শেষে তিনি শনিবার ফিরে এসেছেন। আসামীদের গ্রেফতার ও ভিকটিমকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামীরা পলাতক রয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। এদিকে ১ নং আসামী ছাড়া বাকি ২ আসামী বাড়িতে অবস্থান করে বিভিন্ন মহলে দেন দরবার করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অজ্ঞাতে অবস্থান নিয়ে ১ নং আসামী মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি ধমকি দিচ্ছে বলে জানা গেছে। আসামীরা উকিলের মাধ্যমে জামিন নেয়ার চেষ্টা করছে বিভিন্ন মহল নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে জানতে আসামীদের বিভিন্ন নাম্বারে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।