Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সর্বনাশা পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে ভারতকে : আইপিসিসি

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হয়, তাহলে ভারতকে সর্বনাশা পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)। আইপিসিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ সেলসিয়াস বৃদ্ধি ভারতের দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে তারা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, খাদ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি, উপার্জন কমে যাওয়া, কর্মসংস্থানের বিভিন্ন সুযোগ হারানো, স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি বাস্তুচ্যুতির মুখোমুখি হবে। এছাড়া বিশাল জনসংখ্যা, বৈষম্য ও দারিদ্র্যের মাত্রা বেশি থাকায় অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি দেশটির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। দেশটির বৃহত্ এলাকাজুড়ে সমুদ্র উপকূল থাকায় সমুদ্রের আশপাশে বসবাসকারী অধিবাসী এবং জীবিকার জন্য সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীলদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে। অন্যদিকে তীব্র তাপমাত্রার ফলে ২০১৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানে যে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, ভবিষ্যতেও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় শহর কলকাতা ও পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর করাচি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনার সময় এখনো চলে যায়নি। তবে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য এটা খুব সহজ কাজ হবে না। প্রতিবেদনের প্রাক্কলিত হিসাব অনুসারে, ২০১৫ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে দেশগুলোকে ব্যয় করতে হবে প্রায় ৯০ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, হিসাবটি অবমূল্যায়িত। ২০২০ সালের পর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশ কত ব্যয় করবে, তা নিয়ে এরই মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক সমঝোতায় পৌঁছেছে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো। এর মধ্যে ভারত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার ও পাকিস্তান ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করবে বলে জানিয়েছে। দেশগুলো এ বিশাল অংকের অর্থ ব্যয়ের কথা জানালেও আরো একটি সমস্যা রয়ে যাচ্ছে, কারণ এ অর্থ কোথা থেকে আসবে সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। এছাড়া দ্য গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে সব দেশের নিয়মিত অর্থ জমা দেয়ার কথা থাকলেও এরই মধ্যে অনেক দেশ সেটা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য ভারত হয়তো সত্যিই অনেক চাপে রয়েছে। তবে এটাও সত্য, দেশটিকে পানি সংকট, তীব্র খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার দিকেও মনোযোগ দিতে হচ্ছে। ভারত দুর্যোগ মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনেক উন্নতি করেছে। তবে ভবিষ্যতে এ ব্যবস্থাপনার আরো উন্নয়ন করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, দেশটি এরই মধ্যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে এটাতে সফল হওয়াটাই দেশটির প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ দেশটিতে ব্যাটারির মূল্য ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা খুব দ্রুত কমবে বলেও মনে হচ্ছে না। অন্যদিকে ভারতের দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো, ক্রমবর্ধমান পরিবহন ব্যবস্থা। বর্তমানে দেশটিতে অসংখ্য মানুষের বাইসাইকেল ও রিকশা রয়েছে। কিন্তু আয় বৃদ্ধির ফলে মানুষ এখন মোটরসাইকেল ও স্কুটারের মতো যানবাহনের দিকে ঝুঁকছে। ফলে ভারতের বর্তমানে প্রচুর ইলেকট্রিক গাড়ি উত্পাদনের ওপর জোর দেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে বাস, ট্রেনের ওপর জোর দেয়ার পাশাপাশি মানুষের যাতায়াতের জন্য টেকসই পরিবহনের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রেও ভারতের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কারণ তাদের প্রযুক্তি ও আর্থিক সংস্থানের বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ