Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডলার ও জীবনমান পতনের সাথে ধসের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি

রাশিয়ান টুডে | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১০:৫৮ পিএম | আপডেট : ১১:০৪ পিএম, ২৫ অক্টোবর, ২০১৮

মঙ্গলবার বিশ^বাজারে ব্যাপক বিক্রির পর মার্কিন শেয়ার বাজারে দরপতনকে বিশ্লেষকরা সামনে আরো খারাপ কিছু হওয়ার সংকেত হিসেবে দেখছেন। এ বিষয়টি গভীর ভাবে তলিয়ে দেখতে রাশিয়ান টুডে (আরটি) বিশিষ্ট স্টক ব্রোকার পিটার শিফের সাথে কথা বলে।

শুরুতে নাটকীয় দরপতনের পর মার্কিন শেয়ারবাজারগুলো ধাক্কা কাটিয়ে ওঠে, তবে ওয়ালস্ট্রিটে টালমাটাল অবস্থার পর মূল্য হ্রাসের মধ্য দিয়ে দিনের শেষ হয়। বন্ধের সময় দিনের প্রথম দিকের লোকসান অধিকাংশই পুনরুদ্ধারের পর ডাউ সূচক ছিল ১২৬ পয়েন্ট বা ০.৫ শতাংশ। নাসদাকের সমাপ্তি ঘটে ০.৪ শতাংশে, এসএন্ডপি ৫০০-এর ১৫ পয়েন্ট অবনমন ঘটে ০.৬ শতাংশ নিচে নেমে শেষ হয়।
বর্তমানে ইউরো প্যাসিফিক ক্যাপিটালের সিইও হিসেবে কর্মরত শিফ বলেন, সব লক্ষণই সেখানে রয়েছে। সেখানে কি ঘটছে দেখুন। শেয়ার বাজারের পতন হচ্ছে, এস এন্ডপির ৪০ শতাংশের ইতিমধ্যেই বাজার পতন ঘটেছে। হোমবিল্ডার্সদের দিকে দেখুন, গৃহায়ন শেয়ার, আর্থিক, খুচরা বিক্রেতাÑ এসবই হচ্ছে একই জিনিস যা ২০০৭ সালে সংঘটিত হয়ে সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
অর্থনীতিবিদ শুধু অর্থনৈতিক সংকটের জন্যই জনগণকে প্রস্তুত হতে বলেননি, একটি রাজনৈতিক সংকটের জন্যও প্রস্তুত হতে বলেছেন যার দায় বর্তমান প্রশাসনের উপর বর্তাতে পারে। শিফের মতে, মার্কিন
জাতীয় মুদ্রা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সুতরাং আপনাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে মার্কিন ডলার সম্পদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মার্কিন জীবনমানের সাথে সাথে ডলারের হতে যাচ্ছে বৃহত্তম মূল্যপতন। তিনি বলেন, বিদেশী শেয়ারবাজারগুলো, বিশেষ করে উদীয়মান বাজারগুলো, বর্তমানে শক্তিশালী ডলারেরকাবু হয়ে থাকলেও নিজেদের শক্তিশালী উত্থান দেখবে।
শিফ বলেন, ডলার যখন দুর্বল হবে তখন তারা শক্তিশালী হবে।
তিনি বলেন, সোনার দিকে দেখুন। আরো ৮ ডলার দাম বেড়েছে। তবে এখনো তা প্রায় ১২৩০ ডলার, সোনার দাম নতুন করে বাড়তে যাচ্ছে। ২০১১ সালে তা ছিল ১৯ শ’ ডলার। এবার তার দাম অনেক বেশি বাড়তে চলেছে।
এ বিশ্লেষক বলেন, প্রায় ১৫ ট্রিলিয়ন পরিমাণ মার্কিন পরিবার ঋণ দেশে জীবন মানের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতিনিধিত্ব করে।
শিফ বলেন, প্রত্যেকেই ঋণে জর্জরিত, এবং তা এমন নয় যে আমরা বিরাট পরিমাণ ঋণ ছাড়া আর্থিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেছি। ২০০৮ সালে আমাদের বিপুল পরিমাণ ঋণ ছিল। আসলে আর্থিক সংকট ছিল ঋণের ব্যাপারে, এটা ছিল ঋণ পরিশোধে আমাদের অক্ষমতার ব্যাপারে।
তিনি বলেন, কিন্তু সমস্যার সমাধান বা ঋণ পরিশোধের দিকে না গিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার শূন্য রেখে ও পরিশোধের জন্য দীর্ঘ সময় দিয়ে আমাদেরকে আরো গভীর ঋণের ফ্যাকাশে পথে ঠেলে দেয়। আসলে ফেডারেল রিজার্ভ আরো বেশি ঋণ গ্রহণ করে অতিরিক্ত ঋণ ভারাক্রান্ত জাতিতে পরিণত হতে উৎসাহিত করে।
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ জোর দিয়ে বলেন যে সুদের হার বৃদ্ধি শুধু বর্তমান পরিস্থিতিকে খারাপ করবে।
তিনি বলেন, প্রত্যকেই ঋণ ভারাক্রান্ত। তাহলে ব্যাপারটা অনুমান করুন। সুদের হার শেষ পর্যন্ত বাড়তে যাচ্ছে, যার অর্থ ঋণের সার্ভিসিং ব্যয়ও বাড়বে, আর তা ২০০৮ সালের মর্টগেজ হারের মত একটি বড় সমস্যা হতে যাচ্ছে। সে সময় এসব বিষয় পুননির্ধারণ করা হয়েছিল। মানুষ পাকা পরিশোধ করতে পারছিল না। ্খন জাতীয় পর্যায়ে একই ঘটনা ঘটতে চলেছে। সুদের হার বাড়ছে , আমরা পরিশোধে অসমর্থ হতে যাচ্ছি।
শিফের মতে, এ গোলযোগ এড়ানোর ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কোনো উপায় নেই। এটা অসম্ভব , কারণ আমরা দীর্ঘদন ধরে এটা ঘটতে দিচ্ছি। সুতরাং বিপদটাও বড় রকমের হবে। আমরা শিগগিরই এ বাস্তবতার সম্মুখীন হব। কিন্তু কোনো রাজনীতিক এ বাস্তবতার সম্মুখীন হতে চায় না। তারা সব কিছুকেই মহৎ হিসেবে দেখানোর ভান করে।
তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর কর্তন শেয়ার, অর্থনীতি ও জীবন মান সম্পর্কে বর্তমান উদ্বেগকে আরো বাড়াবে।
তার কথা যে সরতকার যদি কম রাজস্ব আদায় করে তাহলে ঘাটতি আরো বড় হবে , আর সরকারকে আরো বেশি পরিমাণ অর্থ ধার করতে হবে, তা আরো বড় সমস্যা হতে যাচ্ছে। আমাদের যা প্রয়োজন তা ছো সরকার, কিন্তু যিনি এখন সামাজিক নিরাপত্তা ও মেডিকেয়ারের রক্ষক সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ কেউই সংকুচিত সরকার চায় না।
শিফ বলেন, ট্রাম্প আরেকটি পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা চালু ও মহাকাশ প্রতিােগিতা শুরু করতে চান। এর সব কিছুরই অর্থ আরো বেশি ব্যয়। তাই ট্রাম্প আরো বেশি অর্থ ব্যয় ও একই সাথে কর কর্তন করতে চান । এটা সম্পূর্ণরূপে লাগামহীন ব্যাপার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনীতি

৩ জানুয়ারি, ২০২৩
২১ নভেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ