বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেলেও তাদের ওপর মক্কার কুরাইশরা যে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল, তা সহজে বিস্মৃত হওয়ার মতো ছিল না। এ জন্য হুজুর (সা.) দারুণভাবে মর্মাহত ছিলেন।
তা ছাড়া মদিনায় ইহুদিদের উপস্থিতিও কম বিপজ্জনক ছিল না। মদিনায় তখন তিনটি প্রধান ইহুদি গোত্র বসবাস করত। হুজুর (সা.) ইসলাম ও মুসলমানদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ইহুদিদের সাথে একটি রাজনৈতিক শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেন। এই চুক্তিতে তিনটি ইহুদি গোত্র- বনি নজির, বনি কোরাইজা এবং বনি কায়নুকা সবারই স্বাক্ষর ছিল। এটি ‘মিছাকে মদিনা’ বা মদিনার সনদ নামে খ্যাত। মোট ৫২ দফা সংবলিত এই চুক্তির এক উল্লেখযোগ্য অংশ ইহুদিদের অধিকার সংক্রান্ত ছিল।
চুক্তি অনুযায়ী স্থির হয়, চুক্তিভুক্ত সব পক্ষই তাদের নিজ নিজ মহল্লার শান্তি-নিরাপত্তার জন্য দায়ী থাকবে। যুদ্ধ এবং সন্ধি উভয় অবস্থায় ঐক্য ও সংহতি অক্ষুণœ রাখা হবে। বিবাদ-বিশৃঙ্খলাকারীদের কঠোর হাতে দমন করা হবে এবং কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে হুজুর (সা.)-এর সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে নিতে হবে। ইহুদিদের স্বার্থ ও অধিকার সংক্রান্ত ধারাগুলোতে বলা হয়- তাদেরকে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া হবে এবং তারা অঙ্গীকার করে, আক্রান্ত অবস্থায় ইহুদিরা মুসলমানদের সাহায্য করতে বাধ্য থাকবে। বিপক্ষের সাথে সন্ধি করার সময় তারা মুসলমানদের সঙ্গে থাকবে এবং কুরাইশদের কোনো প্রকার নিরাপত্তা প্রদান করবে না। ধারাসমূহে এ ধরনের আরো বহু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
‘সিরাতে ইবনে হেশাম’ এ বর্ণিত হয়েছে, ইহুদি গোত্র ‘বনি কায়নুকা’র সাথে সন্ধি করার সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের শপথ প্রদানের মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তাওরাতে কি আমার সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী নেই? যদি তোমরা শপথ করে বলো যে, ‘নেই’ তা হলে তোমাদের এ ব্যাপারে দোষারোপ করা হবে না।’ সে যাই হোক, বনি কায়নুকার ইহুদিরা সম্পাদিত চুক্তিতে স্থির থাকতে পারেনি। তারা অচিরেই চুক্তি ভঙ্গ করে। যার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ কিছু খুনাখুনি হয়। পরিণতিতে মুসলমানরা তাদের মহল্লা ঘেরাও করে ফেলেন এবং ১৫ দিন পর তারা শর্তহীনভাবে বশ্যতা স্বীকার করলে হুজুর (সা.) তাদের তিন দিনের মধ্যে নিরাপদে মদিনা ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। তবে তাদের অস্ত্রশস্ত্র আটক করে রাখা হয়। কথিত আছে, ইহুদিরা শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। বিতাড়িত ইহুদিদের সংখ্যা সাত শ’ ছিল বলে একটি বর্ণনা থেকে জানা যায়। হিজরি দ্বিতীয় সালের ১৫/১৬ শাওয়াল বনি কায়নুকার ইহুদিদের অবরোধ করা হয়। অত:পর মদিনা থেকে বিতাড়িত করা হয়। এটাই ছিল তাদের চুক্তি ভঙ্গের খেসারত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।