বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সকল প্রকারের রোগ ব্যাধির উৎস ও নিরাময়ের কথা আল কোরআন এর বিভিন্ন আয়াতে স্পষ্ট ও প্রচ্ছন্নভাবে বলে দেয়া হয়েছে। এসব আয়াতকে বলা হয়, ‘আয়াতে শিফা’। অর্থাৎ, রোগ নিরাময়ের আয়াত সমূহ। কোরআন এর বিভিন্ন সূরার আয়াতে বর্ণীত এসব ‘আয়াতে শিফা’ বিভিন্ন পুস্তকে একত্রিত করে সংকলিত হয়েছে এবং এগুলোর তাৎপর্য ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ‘আয়াতে শিফা’ গুলোর গুণাগুণ, প্রভাব ও কার্যকারিতা ছাড়াও এ ক্ষেত্রে ‘সূরা ফাতেহা’র কার্যকারিতার কারণে এর একটি নাম করণ করা হয়েছে ‘সূরা শিফা’।
এতদ্ব্যতীত কোরআন বিশেষজ্ঞগণ বলেন, সূরা ‘আরাফ’ এর একটি আয়াতের অংশ বিশেষ দ্বারা সকল রোগ ব্যাধির উৎসও প্রমাণ করেছেন এবং তারা বলেছেন যে, আয়াতের ঐ অংশটুকু হতে ‘তিব্ব’ বা চিকিৎসা শাস্ত্রের উৎস তারা খুঁজে পেয়েছেন। বিষয়টি হয়তো আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
এবার আয়াতটি দেখা যাক। আল্লাাহ বলেন, ‘হে বনী আদম! প্রত্যেক সালাতের (নামাজের) সময় তোমরা সুন্দর পরিচ্ছন্ন পরিধান করবে, আহার করবে ও পান করবে কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (আয়াত: ৩১)
এ একটি আয়াতে তিনটি বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। পরিধান, পানাহার ও অপচয়। আয়াতের শানে নুযূল এই, জাহেলী যুগে যেসব লোক উলঙ্গ হয়ে কাবা গৃহের তোওয়াফ এবং এরূপ কর্মকে অত্যন্ত নৈকট্য ও পরহেজগারী বা সাধুতা মনে করত এবং কোন কোন অন্ধ বিশ^াসী লোক হজে¦র দিনগুলোতে ‘সদ্দে রমক’ বা প্রাণ রক্ষার জন্য যতটুকু প্রয়োজন তার অধিক আহার করত না। আবার যারা বকরীর দুধ ও গোস্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকত, তাদের সকলকে বলে দেয়া হয়েছে যে, এসব কল্পিত কাজে কোন পূণ্য ও পরহেজগারী নেই বরং আল্লহর প্রদত্ত পোশাক পরিধানই তোমদের দেহ ঢাকার ও সৌন্দর্যের নিদর্শন তার এবাদত বন্দেগীর সময় যা অন্যান্য সময় অপেক্ষা অধিক ব্যবহার যোগ, যাতে বান্দা তার প্রভু-পরওয়ার্দিগারের নিকট তার প্রদত্ত নেয়ামতের নিদর্শন বা প্রভাব নিয়ে উপস্থিত হয়। আল্লাহ পরিধান ও পানাহারের জন্য যা কিছু দান করেছেন তাতেই তোমরা উপকৃত হও।
জাহেলী যুগের লোকেরা হজ্জ্বের সময় এবং তোওয়াফের সময় পানাহার ও পোশাক পরিধানে যেসব অনিয়ম ও অনৈতিক কাজ চালু করেছিল, আল্লাহতায়ালা তা রদ করে দিয়ে বলেছেন যে, ‘পোশাক পরিধানে এবং পানাহারে ওরা যে বাড়াবাড়ি ও সীমা লঙ্ঘন করেছে তা অন্যায়, তা পরিহার করতে হবে, তাতে খোদার নৈকট্য লাভতো দূরের কথা কোনই লাভ বা কল্যাণ নেই।’ তবে এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, অপচয় হতে বিরত থাকবে। ‘এছরাফ’ অর্থ অপচয়, বাড়াবাড়ি, সীমা লঙ্ঘন ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞগণ এ অপচয়ের কয়েকটি রূপ বর্ণনা করেছেন। যেমন, হালাল কে হারাম করা অথবা হালাল কে অতিক্রম করে হারাম দ্বারা উপকৃত হওয়া, আবোল তাবল যাচাই বাছাই না করে লোভের বশবর্তী হয়ে খাবারে ঝাপিয়ে পড়া, অথবা খাওয়ার ইচ্ছা বা চাহিদা না থাকলেও খেতে আরম্ভ করা অথবা অসময়ে খাওয়া কিংবা দৈহিক সুস্থতা ও কর্মশক্তি অক্ষুন্ন রাখার জন্য যতটুকু খাবার প্রয়োজন তার চেয়ে কম খাওয়া অথবা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বস্তু ব্যবহার করা ইত্যাদি অপচয়ের অন্তর্ভূক্ত। অযথা খরচ ও অপচয়ের অংশ বিশেষ। অপচয়ের বর্ণীত রূপ ছাড়াও আরও নানা রূপ রয়েছে। মানুষের চলমান জীবনে তা কোন না কোন প্রকারে দৃশ্যমান। এসব কারণে বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, ‘জামাআ আল্লাহুত তিব্ব কুল্লাহু ফি নিছফিল আয়াত’। অর্থাৎ- আল্লাহ তায়ালা সমগ্র তিব্ব শাস্ত্র ‘চিকিৎসাবিজ্ঞান’ কে এ (বর্ণীত) অর্ধেক আয়াতে জমা করে দিয়েছেন।
বিভিন্ন প্রকারের পোশাক পরিচ্ছদে যেমস শরীরের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকতে পারে, তেমনি খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় বস্তু সমূহে দূষিত, বিষাক্ত, বিজানু, ভেজাল, মিশ্রিত ক্ষতিকর সবই অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত।
বিশ^ময় আধুনিক নাগরিক জীবনে পরিবেশ দূষণ এক মারাত্মক সমস্যা রূপে বিরাজ করছে। প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগজনিত সমস্যাগুলোর কথা বাদ দিয়েও বলা যায়, মনুষ্য সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের কারণে যেসব রোগ বালাই দেখা দেয়, তা দায়িত্ব অবহেলা ও সীমা লঙ্ঘ ও দূর্নীতি পরায়নতারই ফল। অনেক বিপদ ও দুর্যোগ দুর্ভোগ মানুষই ডেকে আনে। অপচয় অর্থাৎ- আল্লাহর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম এসবের জন্ম দেয় বলেই একে বলা হয়েছে বর্ণীত আয়াতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অর্ধেক। তাছাড়া কোরআনে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর নানা ভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।