নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
আবহাওয়াগত দিক দিয়ে দুবাই আর আবু ধাবিতে তেমন কোন পার্থক্য নেই। বিশ্বের অন্যতম বিষ্ময়কর শহরের তপ্ত রদ্দুরে চতুর্থ ইনিংসে প্রায় ১৪০ ওভার ব্যাটিং করে রেকর্ড গড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এবার রাজধানী শহরে হালকা মেঘ ও ছিটেফোঁটা বৃষ্টির মাঝে তারা ৫০ ওভারও দাঁড়াতে পারল না। আসলে দাঁড়াতে দেননি একজন পেসার- মোহাম্মদ আব্বাস।
আব্বাসের বোলিং তোপেই চতুর্থ দিনের মধ্যাহ্ন ভোজনের ৪.৪ ওভার পরেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের সঙ্গে ১-০ ব্যবধানের সিরিজ জয়ের উৎসব করে পাকিস্তান। জয়টি ৩৭৩ রানের। রানের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যা পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় জয়। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নিজেদের রেকর্ড গড়ে পাকিস্তানের মুখের কাছ থেকে জয় কেড়ে নিয়ে দুবাই টেস্ট ড্র করেছিল টিম পাইনের দল।
প্রথম ইনিংসের মত দ্বিতীয় ইনিংসেও পাঁচ উইকেটের কোটা পূর্ণ করেন আব্বাস। দশ টেস্টের ক্যারিয়ারে ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিলেন এ নিয়ে চতুর্থবার। তবে ম্যাচে ১০ উইকেট এবারই প্রথম। সংযুক্ত আরব আমিরাতেও এই প্রথম কোন বোলার পেলেন ম্যাচে ১০ উইকেট। ম্যাচ সেরা তো বটেই ১৭ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরাও হয়েছেন দীর্ঘদেহী এই পেসার।
অস্ট্রেলিয়ার সামনে চ্যালেঞ্জটা ছিল হাতের নয় উইকেট নিয়ে আরো দুই দিন ব্যাটিং করার, তার মানে ১৮০ ওভার। এর চেয়ে বরং ৪৯১ রানের জয়ের রাস্তাটাই সম্ভবত সহজ ছিল। কিন্তু ‘আব্বাস’ তোপে কোন রাস্তাই পাড়ি দিতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে ১৪৫ রানের পর এবার অল আউট ১৬৪ রানে। ম্যাচে আব্বাসের বোলিং ফিগার ১০/৯৫।
মধ্যাহ্ন ভোজের আগেই জয়ের মঞ্চ সাজিয়ে রাখে পাকিস্তান। অজি স্কোর তখন ১৫৫/৭। ফিরে এসে লেজমুণ্ডনে আব্বাসকে সহায়তা করেন ইয়াসির শাহ। ৪৯.৪ ওভারেই শেষ হয় টিম পাইনের দলের চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে আগের দিন ১২ ওভারে ১ উইকেটে ৪৭ রান করে তারা। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান অ্যারোন ফিঞ্চ ও মিচেল মার্শ বিচ্ছিন্ন হন ১৯তম ওভারে, দলীয় ৭১ রানে। সেখান থেকে খানিক বাদে স্কোরবোর্ড হয়ে যায় ৫ উইকেটে ৭৮! এরপরই আসে তাদের ম্যাচ সর্বোচ্চ স্টার্ক-ল্যাবুশেনের ৬৭ রানের জুটি। স্টার্ককে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে জুটি বিচ্ছিন্ন করেন ইয়াসির। আগের টেস্টে অভিষেক হওয়া মার্নাস ল্যাবুশেনকে তুলে নিয়ে পাঁচ উইকেটের কোটা পূর্ণ করেন আব্বাস। আব্বাস-ইয়াসিরদের সামনে অজি ব্যাটসম্যানরা কতটা অসহায় ছিল তা তাদের স্কোরবোর্ডই বলে দেয়। দুই ইনিংসে ফিফটি নেই একটিও, সর্বোচ্চ ৪৩ ল্যাবুশেইনের। ডান হাটুর ইনজুরিতে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে পারেননি প্রথম টেস্টের নায়ক উসমান খাজা। আসন্ন ভারত সিরিজেও অজি নাম্বার ওয়ান ব্যাটসম্যানের খেলা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
শুধু ম্যাচ নয় পুরো সিরিজটাই আসলে আব্বাসময়। আরব আমিরাতে প্রথম বোলার হিসেবে ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তির কথা আগেই বলা হয়েছে। মাত্র ১৮ মাস আগে পাক জার্সিতে অভিষেকের পর দেশটির যৌথ দ্রততম পেসার হিসেবে পূরণ করেছেন ৫০ উইকেটের মাইলফলক। গত ১২২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম গড়ে (১৫.৬৪) ৫০ উইকেট নেয়া শীর্ষ বোলার আব্বাস।
২৮ বছর বয়সীকে নিয়ে মেতেছেন ক্রিকেট বোদ্ধারাও। দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী বোলার ডেল স্টেইন তো বলেই দিয়েছেন, ‘আমি দেখতেছি বিশ্বের এক নম্বর বোলার আসছে... মোহাম্মাদ আব্বাস।’ আবু ধাবি টেস্ট চলাকালীন সময়েই সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন বলেছিলেন, ‘এক বছর ধরে মোহাম্মদ আব্বাসকে দেখছি। ভেবে দেখলাম, সে আমাকে প্রতি ছয় বলের মধ্যেই আউট করত। সে এমন বোলার আমি হয়ত তাকে দেখে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলতাম।’ ভনের পোস্টে রিটুইট করে সহমত পোষণ করেন তারই এক সময়ের সতীর্থ পল কলিংউড। সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ কাইফের টুইটার পোস্ট, ‘পাকিস্তানের সব সময়ই একজন স্পেশাল বোলার থাকে। মোহাম্মদ আব্বাস তেমনি অবিশ্বাস্য এক প্রতিভাবান বোলার।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ৮১ ওভারে ২৮২ (ফখর ৯৪, সরফরাজ ৯৪; লায়ন ৪/৭৮, ল্যাবুশেন ৩/৪৫) ও ১২০ ওভারে ৪০০/৯ ডিক্লে. (ফখর ৬৬, আজহার ৬৪, বাবর ৯৯, সরফরাজ ৮১; লায়ন ৪/১৩৫, ল্যাবুশেন ২/৭৪)।
অস্ট্রেলিয়া : ৫০.৪ ওভারে ১৪৫ (ফিঞ্চ ৩৯, স্টার্ক ৩৪; আব্বাস ৫/৩৩, আসিফ ৩/২৩) ও ৪৯.৪ ওভারে ১৬৪ (ফিঞ্চ ৩১, হেড ৩৬, ল্যাবুশেন ৪৩, স্টার্ক ২৮; আব্বাস ৫/৬২, ইয়াসির ৩/৪৫)।
ফল : পাকিস্তান ৩৭৩ রানে জয়ী।
সিরিজ : ২ ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ১-০তে জয়ী।
ম্যাচ ও সিরিজ সেরা : মোহাম্মদ আব্বাস (পাকিস্তান)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।