পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আর কতো এইভাবে, আমাকে কাঁদাবে; আর বেশি কাঁদালে, উড়াল দেবো আকাশে’। সত্যিই তিনি উড়াল দিয়েছেন। উড়াল দিয়েছেন পৃথিবীর সকল মায়া-মমতা ত্যাগ করে। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও কোটি কোটি ভক্ত শুভাকাঙ্খীদের কেউই ধরে রাখতে পারেনি তাকে। নিজের গানের কথার মতোই পৃথিবীর সকল বন্ধনকে ছিন্ন করে উড়াল দিয়েছেন তিনি। গতকাল সকালে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা ব্যান্ডের কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ বাদ জুমা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে তার নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল শনিবার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে কিংবদন্তি এই মহান শিল্পীকে।
এদিকে আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সর্বোস্তরের মানুষ তাকে এক নজর দেখতে স্কয়ার হাসপাতালের সামনে এসে ভীড় জমাতে শুরু করেন। মহান এ শিল্পীর মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্য মন্ত্রী-এমপি, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শোক জানিয়েছেন।
স্কয়ার হাসপাতালের জরুরী সার্ভিস বিভাগের পরিচালক ড. মির্জা নাজিমুদ্দিন বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নিজ বাসাতেই আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যু হয়েছে। ৯টা ১৫ মিনিটে হাসপাতালে আনা হলে ৯টা ৫৫ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, সকালে তাকে হাসপাতালে আনা হলে তার হৃদপৃন্ড স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল না। তখন কৃত্রিমভাবে হৃৎপিন্ড এবং ফুসফুসের কার্যকলাপ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেও চিকিৎসকরা ব্যর্থ হন। এই চিকিৎসক আরও বলেন, তিন সপ্তাহ আগে আইয়ুব বাচ্চু স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা ছিল ৩০ শতাংশ, যেখানে একজন সুস্থ মানুষের থাকে ৭০ শতাংশ। এ জন্যই বারবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হতো।
আইয়ুব বাচ্চুর সহকারী রুবেল বলেন, ১৬ তারিখে রংপুরে শো করেছেন আইয়ুব বাচ্চু। তখন থেকেই শরীর খারাপ লাগার বিষয়টি জানান। গতকাল সকালে হঠাৎ ডেকে বলেন- শরীরটা খুব খারাপ লাগছে, হাসপাতালে যাওয়া দরকার। বলতে বলতেই তিনি পড়ে যাচ্ছিলেন। তাকে ধরতে গেলে তিনি আমার কোলে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরেন। কোন সাড়া-শব্দ নেই। মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছিলো। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎকরা মৃত্যু ঘোষণা করেন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আইয়ুব বাচ্চুর লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে লাশ নেওয়া হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। সেখানে জানাজা শেষে তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
সংগীত শিল্পী পার্থ বড়–য়া বলেন, আইয়ুব বাচ্চুর মেয়ে সাফা অস্ট্রেলিয়া ও ছেলে তাজোয়ার কানাডায় থাকেন। দু’জন শুক্রবার বিকেল কিংবা রাতের কোনো এক সময়ে ঢাকায় ফিরবে বলে ধারণা করছি। এরপরেই লাশ নিয়ে যাওয়া হবে গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। সেখানে স্টেশন রোডের চৈতন্য গলিতে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে। এর আগে চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর আরও একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
সংগীত শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, আমাদের মধ্যে ৪৫ বছরের সম্পর্ক। তার চলে বড়ই কষ্টের। এটি কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না। তার মৃত্যুতে সংগীত জগনের অনেক বড় ক্ষতি হল। সংগীতকে পেশা হিসেবে আজকের অবস্থায় প্রতিষ্ঠা করতে তিনি অনেক পরিশ্রম করেছেন।
তপন চৌধুরী বলেন, তার মৃত্যু কোনভাবেই সহ্য করার মতো নয়। আমার জীবনের প্রথম গান থেকে একসঙ্গে পথচলা। সে আমার ক্যাসেট করেছে, ভিডিও করেছে । প্রথম ক্যাসেটের সংগীত পরিচালক ছিল সে। একজন কমপ্লিট মিউজিশিয়ান ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।
জেমস বলেন, বাচ্চু ভাই অত্যন্ত উদার মনের মানুষ ছিলেন। কারণে-অকারণে সব সময় আমরা পরস্পরের পাশে ছিলাম। আমাদের মধ্যে এক ধরণের প্রতিযোগিতা ছিল। তবে তা ভালো গান তৈরির প্রতিযোগিতা, কোনো ঈর্ষা ছিল না।
কিংবদন্তি এ শিল্পীর জন্ম ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে। তার ডাক নাম রবিন। ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রামের মুসলিম বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় পরীক্ষায় ভালো ফল করায় তার বাবা একটি কালো গিটার কিনে দেন। সেই থেকেই গিটাতে হাতে খরি শুরু রবিনে। তিনি একাধারে ছিলেন ব্যান্ডের গিটারিস্ট, ভোকাল, গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পী। তার গাওয়া প্রথম গান ছিল- হারানো বিকেলের গল্প। গিটার বাজিয়ে জীবনের প্রথম উপার্জন ছিল ৩০ টাকা।
কলেজে পড়ার সময় ‘গোল্ডেন বয়েজ’ নামে একটি ব্যান্ড দল তৈরি করেন। পরে নাম পাল্টিয়ে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। ১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে সঙ্গীতজগতে প্রবেশ। ১৯৭৮ এর শেষ দিকে যোগ দেন বিখ্যাত ব্যান্ড ‘সোলস’-এ।
১৯৮০ সালে বের হয় ‘সোলস’-এর প্রথম অ্যালবাম ‘সুপার সোলস’। এরপর থেকেই তিনি সুরকার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮২ সালের দিকে নকীব খান, পীলু খান ও কুমার বিশ্বজিৎ ব্যান্ড ছেড়ে দিলেও ‘সোলস’-এর ভোকাল হিসেবে থেকে যান আইয়ুব বাচ্চু। এরপর ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত একটানা সোলস ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি।
১৯৮৬ সালে আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’ প্রকাশিত হলেও সেটি সাফল্য পায়নি। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ দিয়ে তিনি সফলতা পান। ১৯৮৯ সালে সোলস ত্যাগ করেন। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের ব্যান্ড দল ‘ইয়োলো রিভার ব্যান্ড’। ১৯৯১ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘লাভ রান্স বøাইন্ড’। যা ‘এলআরবি’ নামেই পরিচিতি পায়। ‘এলআরবি’ গঠনের পর থেকেই সারা দুনিয়ায় ঝড় তুলতে শুরু করে এলআরবির হার্ড রক, বøুজ রক, সাইকাডেলিক রক গানগুলো। ব্যান্ড গঠনের এক বছর যেতে না যেতেই প্রথম অ্যালবামের জন্য ২২টি গান রেডি করে এলআরবি।
এলআরবির প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম ‘এলআরবি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৯৫ সালে প্রকাশ হয় আইয়ুব বাচ্চুর সর্বকালের সেরা একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। এ অ্যালবামের ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ও ‘আমিও মানুষ’ গানগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। ‘এলআরবি’ যাত্রার দীর্ঘ ২৭ বছরে এ ব্যান্ডি দেশ-বিদেশের শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।