Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩০ বছরেও পিতৃপরিচয় পাননি ছলেমান

দিনাজপুর অফিস | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

জন্ম ১৯৮৮ সালের ১৭ মে। জাতীয় পরিচয় পত্রসহ বিভিন্ন দালিলিক তথ্যে রয়েছে বাবার নাম। চাচারাও স্বীকৃতি দিয়েছেন, জানেন এলাকাবাসীও। কিন্তু আজো বাবা দেননি স্বীকৃতি। এলাকার কারো হস্তক্ষেপে কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মহিলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ছলেমানের পিতৃ পরিচয় ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কাজ শুরু করেছেন।
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বাবার স্বীকৃতির জন্য লড়ছেন ছলেমান। ছলেমানের বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রামে। ওই গ্রামের মৃত পিয়ার আলী ছেলে পল্লী চিকিৎসক রফিকুল ইসলামের কাছে বাবার স্বীকৃতি না পেয়ে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবি সমিতি দিনাজপুর শাখায় অভিযোগ করেছেন ছলেমান। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহিলা আইনজীবী সমিতি গত শনিবার দুপুরে স্থানীয় সিডিএ বাজারে উপস্থিত থাকার জন্য রফিকুল ইসলাম, তার দুই ভাইসহ নিকট আত্মীয়দের উপস্থিত থেকে জবাব দেয়ার জন্য নোটিশ করে।

সম্প্রতি শতগ্রামের পাশে সিডিএ বাজারে যান বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি দিনাজপুর শাখার প্রধান আইনজীবী তৈয়বা বেগম এবং সদস্য আইনজীবী কহিনুর বেগম সিডিএ বাজারে যান। সেখানে ছলেমানের মা ছাহেলা বেগম আইনজীবীদের জানান, তাদের পরিবার গরিব। রফিকুলরা অবস্থাসম্পন্ন। সম্পর্ক করে পরিবারকে না জানিয়ে রফিকুল পার্শ্ববর্তী বেলতলী গ্রামের এক মৌলভীর কাছে বিয়ে করেন। পরিবারের বিরোধিতায় স্ত্রীকে বাড়িতে ওঠাননি রফিকুল। সময়মতো ওঠানোর আশ্বাস দিয়ে ছাহেলাকে শশুড়বাড়িতেই রাখেন রফিকুল। এর মধ্যে ছাহেলা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। সন্তান নষ্ট করতে উঠেপড়ে লাগেন রফিকুল। নিজের সন্তানকে বাঁচাতে ময়মনসিংহ এ খালার বাসায় যান ছাহেলা। সেখানেই জন্ম নেয় ছলেমান। এর মাঝে ছাহেলার অনুপস্থিতে রফিকুল স্থানীয় দালালদের দিয়ে তৎকালীন চেয়ারম্যান ছাবদারুল ইসলামের কাছে ছাহেলা কখনো স্ত্রী হিসেবে দাবি করবে না মর্মে একটি মীমাংসা করেন। সেখানে ছাহেলাকে দেয়ার কথা বলে রফিকুল দালালদের ২০ হাজার টাকাও দেন।

বেশ কিছুদিন পর ছাহেলা ময়মনসিংহ থেকে এলাকায় ফিরে আসেন ছাহেলা। বিয়ে রেজিস্ট্রি না থাকায় বহু চেষ্টা করেও রফিকুলের কাছে স্ত্রীর স্বীকৃতি পায়নি ছাহেলা। দালালদের কাছে দেয়া টাকাও পাননি ছাহেলা। ১০ বছর পর অন্য ব্যক্তিকে বিয়ে করেন ছাহেলা। ছলেমান বলেন, ছেলের স্বীকৃতির দাবিতে অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু রফিকুল ইসলাম প্রভাবশালী হওয়ায় পেরে ওঠেননি। ছেলের স্বীকৃতির জন্য তিনি রফিকুল ইসলামের সাথে ডিএনএ পরীক্ষার অবেদন জানান।

নোটিশের জবাব দিতে সিডিএ বাজারে এসে দুই আইনজীবীর কাছে রফিকুলের দুই ভাই মাজেদুল ইসলাম এবং রহিমুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। রহিমুল ইসলাম জানান, ছাবদারুল চেয়ারম্যানের কাছে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাহেলাকে ২০ হাজার টাকা দিতে রফিকুল সে সময় ২৪ কাঠা জমি বিক্রি করে দালালদের ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল। প্রতিবেশী আব্দুল কুদ্দুস জানান, ছাহেলার পেটের সন্তান নষ্ট করতে রফিকুল সে সময় কুদ্দুসকে ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন। নোটিশ দেয়া হলেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না রফিকুল ইসলাম। এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হল রফিকুল ঘটনাটি সাজানো উল্লেখ করে জানান, ভাইদের সাথে জমি নিয়ে বিরোধের জন্য ঘটনাটি সাজানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিচয়

২৭ অক্টোবর, ২০২২
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ