Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

তিন মাসেও অধরা সুন্দরী সোহেল গং

যুবলীগ কর্মী রাশেদ খুন

আবদুল্লাহ আল মামুন : | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

রাজধানীর মহাখালীতে যুবলীগ নেতা কাজী রাশেদ হত্যাকান্ডের পরে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও বনানী থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্য়বাক ইউসুফ সরদার সোহেল ওরফে সুন্দরী সোহেলসহ মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার এতদিনেও খুনিদের গ্রেফতার করতে না পারায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে রাশেদের পরিবার ও স্বজনরা। এ দিকে, সোহেল নিজে এবং তার ক্যাডারবাহিনী প্রতিনিয়ত রাশেদের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি ও মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। এ ঘটনায় রাশেদের স্ত্রী জীবন বাঁচাতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এ ছাড়া গত ১৩ অক্টোবর বনানী থানায় নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে ফের জিডি করেছেন নিহত রাশেদের ভাই রাজীব।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সোহেল বিদেশে থেকেই মোবাইল ফোনে নিয়মিত আত্মীয়-স্বজন ও অপরাধ জগতের শিষ্যদের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। তার নির্দেশনা মতে এলাকার চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অবৈধ ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, সোহেল ইন্টারনেট থেকে কল করায় তার অবস্থান জানা সম্ভব হচ্ছে না।
নিহত রাশেদের ভাই রাজীব ইনকিলাবকে বলেন, হত্যাকান্ডের পড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ মূল খুনিদের ধরতে পারেনি। তিনি বলেন, রাশেদ হত্যায় জড়িত সোহেলসহ অন্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তারা সবাই বিদেশে পালিয়ে গেছে। এখন সেখান থেকেই কল করে হত্যার হুমকি দিচ্ছে এবং মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। অথচ খুনি গংদের গ্রেফতারে দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগেও তাকে মারধর করে ও হুমকি দেয় সোহেলের বড় ভাই মাসুদ। এ ঘটনায় তিনি নিরাপত্তা চেয়ে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। রাজীবের অভিযোগ, জিডির পরেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সোহেলের বড় ভাই মাসুদ স্থানীয় সন্ত্রাসী রাজু, রুবেল, রবিন ও ফয়সালরা নিহত রাশেদের পরিবারকে হত্যার হুমকি এবং মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় বলে রাশেদের স্বজনরা অভিযোগ করেন।
রাশেদের মা রাবেয়া বেগম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুনিদের সবাইকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছেন। অথচ তিন মাসেও কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। তিনি বলেন, বড় এক নেতা খুনিদের আশ্রয় দেওয়ায় পুলিশ তাদেরকে ধরতে সোচ্চার নয়।
রাশেদের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বলেন, এই দেশে খুন করলেও বিচার হয় না, বরং খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে আরও বেশি হুমকি দিতে পারে। তিনি বলেন, স্বামীকে হারিয়ে নিজের জীবন বাঁচাতে এখন আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে মামলার বাদী মৌসুমীকে বাসায় পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, আসামীরা বিদেশে পালিয়ে গেলে সেটি অনেকটা নিশ্চিত। এছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে কল করায় সুনির্দিষ্টভাবে তাদের কারো জানা যাচ্ছে না।
এদিকে জিডির তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার এসআই আব্দুল হক আব্বাসি বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখছে। এছাড়া মামলার বাদীর আত্মগোপনে থাকার বিষয়টি তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানান।
গত ১৫ জুলাই ভোরে মহাখালীর স্কুল রোডের জিপি-গ/৩৩/১ নম্বর ভবনে (কঙ্কাল বাড়ি) অবস্থিত কথিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘রেইনবো নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’ অফিসের পেছনের গলি থেকে রাশেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৪ জুলাই গভীর রাতে ওই অফিসে তাকে হত্যা করা হয়। পুলিশ জানায়, সোহেল ছাড়াও ফিরোজ, হাসু, দীপু, জাকির ও রবি নিহত রাশেদকে গুলি করে হত্যা করে। ৭ আগস্ট জাকির হোসেন সরদার ওরফে ‘ভাতিজা জাকির’কে (সোহেলের চাচা) গ্রেফতার করে পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। ৮ আগস্ট তাকে আদালতে হাজির করলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় এবং খুনের ঘটনার বর্ণনা দেয়। এদিকে র‌্যাব ও পুলিশের তালিকায় সোহেল মাদক ব্যবসায়ী, অস্ত্রধারী ও একাধিক মামলার আসামি হিসেবে নথিভুক্ত।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুবলীগ

১১ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ