Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বেড়েই চলেছে অগ্নিকান্ড

গত ৮ বছরে ১ লাখ ৩০ হাজার ২১৫টি অগ্নিকান্ডে নিহতের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯২৮ জন

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

দেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েই চলেছে। ফলে জীবনহানি, অগ্নিদগ্ধ হয়ে বেঁচে থাকা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। গত বছরের সব অগ্নি দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে। এরপরই বেশি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে গ্যাসের চুলা থেকে। সর্বশেষ গত শনিবার রাজধানীর উত্তরখানের ব্যাপারীপাড়ায় একটি বাসায় গ্যাসলাইনের লিকেজে আগুন লেগে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়ে আরো ৫ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ইন্দিরা রোডের একটি কার্টন কারখানায় অগ্নিকান্ডের পর দীর্ঘ এক ঘন্টা চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর গড়ে ১৬ হাজার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। গত ৮ বছরে সারাদেশে ১ লাখ ৩০ হাজার ২১৫টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৯২৮ জন। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৮২৫ জন। ক্ষতির পরিমাণ সোয়া ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সংঘটিত অগ্নিকান্ডের ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ বৈদ্যুতিক ত্রু টির কারণে ঘটছে। দেশে বিদ্যুৎ ও আগুনের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিকান্ডের ঘটনাও বাড়ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগ্নিকান্ড কখন ঘটবে সে বিষয়টি অনুমান করার উপায় নেই। তবে সচেতন হলে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও তার ইত্যাদি ব্যবহারের সময় পণ্যমান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। বাড়িঘর ও কলকারখানায় অগ্নিনির্বাপকের ব্যবস্থা থাকতে হবে। কোথাও আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে জানালেও প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির কারণে বড় অগ্নিকান্ড সবার দৃষ্টি কাড়লেও প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আগুনের ঘটনা ঘটছে। বৈদ্যুতিক ত্রু টির পাশাপাশি সিগারেটের আগুন, গ্যাসের চুলা, গ্যাস সিলিন্ডার, রাসায়নিক দ্রব্য, বিস্ফোরণ, আগুন নিয়ে খেলা ও অসতর্কতাসহ নানা কারণে ঘটছে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। অগ্নিকান্ডে বিপুল সংখ্যক মানুষের হতাহতের ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি ভস্মীভূত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অগ্নিকান্ড কমিয়ে আনতে হলে সাধারন মানুষকে আরো অধিক সচেতন হতে হবে। একই সাথে প্রশিক্ষনেরও প্রয়োজন রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্যাস লাইন লিকেজ বা গ্যাসের চুলা থেকে অনেক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষকে আরো সচেতন হওয়া উচিত। এছাড়া যে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে সেটির মান সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। একই সাথে জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের সকলকে অগ্নিকান্ডের বিষয়ে সচেতনামূলক কাজ করা উচিত বলে মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ মন্তব্য করেন।
ফায়ার সার্ভিসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, আমাদের দেশে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি খুবই অপ্রতুল। বিশেষ করে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে। যে ক্ষেত্রে আগুন নেভানো, মানুষকে সরিয়ে নেয়া এবং জরুরি উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা দরকার, সেসব ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জনবল নেই। তাছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সাধারন মানুষের যে ধরনের প্রস্তুতি থাকা দরকার তাও নেই বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
রাজধানীর ইন্দিরা রোডে কারখানায় আগুন
রাজধানীর ইন্দিরা রোডে কাগজের কার্টন তৈরির কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। রাজ্জাক প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি নামের কারখানায় গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার পর আগুন লাগে বলে ফায়ার সার্ভিস জানায়। আবাসিক এলাকার মধ্যে থাকা কারখানাটিতে আগুন লাগার পর স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের পরিদর্শক আতাউর রহমান বলেন, গতকাল দুপুর ১২টা ৩৪ মিনিটে কার্টন তৈরির ওই কারখানায় আগুন লাগে। খবর পেয়েই ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট সেখানে গিয়ে এক ঘন্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে কারখানাটির চারপাশে আবাসিক ভবন রয়েছে। অগ্নিকান্ডে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান ডিউটি অফিসার আতাউর। স্থানীয় বাসিন্দা ইসরাত জাহান বলেন, অগ্নিকান্ডের পর কারখানা লাগোয়া ভবনগুলো থেকে সব মানুষকে নামিয়ে দেয়া হয়। এ সময় আশপাশের মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।
কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করেন, ওই এলাকা থেকে কারখানাটি সরিয়ে নিতে তারা অনেক দিন ধরেই কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু কারখানাটি সরানো যায়নি।
উত্তরখানে আগুনে দগ্ধ আরও একজনের মৃত্যু
বাসায় গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে সৃষ্ট আগুনে দগ্ধ সুফিয়া বেগম মারা গেছেন। দগ্ধ হওয়ার একদিন পর গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ নিয়ে অগ্নিকান্ডের ওই ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হলো। সুফিয়ার শরীরের ৯৯ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। গত শনিবারের ওই অগ্নিকান্ডের পর সেদিনই সকালে মারা যান সুফিয়ার ভাতিজা আজিজুল ইসলাম। পরে সন্ধ্যায় মারা যান আজিজুলের স্ত্রী মুসলিমা। চিকিৎসাধীন দগ্ধরা হলেন- সুফিয়ার মেয়ে আফরোজা আক্তার পূর্ণিমা, পূর্ণিমার ছেলে সাগর, সুফিয়ার ভাতিজি ও আজিজুলের বোন আঞ্জু আরা এবং তার স্বামী ডাবলু মোল্লা ও তাদের ছেলে আব্দুল্লাহ সৌরভ। এর মধ্যে ডাবলুর শরীরের ৬৫ শতাংশ, আঞ্জুর ৬ শতাংশ, আবদুল্লার ১২ শতাংশ, পূর্ণিমার ৮০ শতাংশ, এবং সাগরের ৬৬ শতাংশ পুড়ে গেছে।
উল্লেখ্য, উত্তরখানের হেলাল মার্কেটের পাশে ১১০/এ নম্বর তৃতীয় তলা বাড়ির নিচতলায় পোশাক কারাখানায় কাজ করা তিনটি পরিবার একই বাসায় ভাড়া থাকতো। শনিবার রাতে গ্যাসের পাইপ লিকেজ থেকে বাড়িটিতে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। ভোর চারটার দিকে রান্না করতে গেলে আগুন ধরে সমস্ত ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এতে আটজন দগ্ধ হন। পরে তাদের দ্রুত ঢামেকের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অগ্নিকান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ