শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলী’ গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা যাবৎ গোপালপুরের নিকট দিয়ে পূর্ব ভারতের উড়িষ্যা-অন্ধ্র উপক‚ল বরাবর তার গতিমুখ বজায় রেখেই আঘাত হানে। এ সময় ঘূর্ণিঝড়টির সর্বোচ্চ গতিবেগ রেকর্ড করা হয় ঘণ্টায় ১৬৫ কিলোমিটার। তিতলি উড়িষ্যা উপকূল হয়ে আরও উত্তর, উত্তর-পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গের স্থলভাগের দিকে অগ্রসর ও ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তিতলির আঘাতে পূর্ব ভারতের উপকূলীয় জনপদে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু এবং অনেক জেলে নিখোঁজ থাকার খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। 

এদিকে ঘূর্ণিঝড় তিতলির সক্রিয় প্রভাবে গতকাল বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজও (শুক্রবার) দেশের অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। টানা দেড় মাসের তাপদাহ ও খরার পর আশি^নের শেষ ভাগে এসে তিতলির প্রভাবে দেশে এই বৃষ্টিপাত উঠতি আমন ফসলের পানিসেচের চাহিদা মিটিয়ে বয়ে এনেছে বড় ধরনের উপকার। তাপমাত্রা কমে গেছে হিমেল হাওয়ার কারণে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর এখনও উত্তাল রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যেও আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বও স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। সকল মাছ শিকারী সামুদ্রিক ট্রলার নৌযানকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজের মালামাল লাইটারিং খালাস, পরিবহন বন্ধ রয়েছে। তবে ২১ ঘণ্টা পর অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ফের শুরু হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে ৯৯ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় বৃষ্টিপাত খুবই কম (এক মিমি) হলেও চট্টগ্রামে ৪৫, সিলেটে ১২, রাজশাহীতে ৬০, রংপুরে ২, খুলনায় ১৪, বরিশালে ৫৪, ময়মনসিংহে ৮, ফেনীতে ৪৩ মিমিসহ সমগ্র দেশে বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঢাকার তাপমাত্রা নেমে আসে সর্বোচ্চ ২৭.২ এবং সর্বনি¤œ ২৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খেপুপাড়ায় ২৯,৫ ডিগ্রি সে.।
এদিকে আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা (১-২) ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। আগামী ৪৮ ঘন্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন এবং এর পরের ৫ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে।