পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র প্রভাবে গতকাল (বৃহস্পতিবার) দেশের বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার মধ্যরাত থেকে হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে। হাটবাজারেও জনসমাগম ছিল কম। রাস্তাঘাটও ছিল বেশ ফাঁকা ফাঁকা। অনেকটাই বেকায়দায় পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। উপকূলীয় বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ৪/৫ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। কলাপাড়ার বেড়িবাঁধে ভাঙা পয়েন্টের দিয়ে পানি প্রবেশ করে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফসল তলিয়ে রয়েছে পানির নিচে। মাছের ঘের ডুবে যাওয়ায় লোকসানের মুখে মৎস্য চাষিরা। আমাদের ব্যুরো প্রধান ও সংবাদাতাতের পাঠানো তথ্য নিয়ে ডেস্ক রিপোর্ট :
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র প্রভাবে চট্টগ্রামে গতকাল (বৃহস্পতিবার) দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। সেইসাথে প্রবল জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত নগরীতে ৪৫.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে করে দিনভর নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তিতলির প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণ হচ্ছে চট্টগ্রামে। গতকাল সকাল থেকে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। থেমে থেমে বৃষ্টিতে অনেক এলাকায় সড়কে পানি জমে যায়। এরসাথে প্রবল জোয়ারে প্লাবিত হয় নগরীর বৃহত্তর আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া, চান্দগাঁওসহ বিশাল এলাকা। জোয়ারে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। দোকানপাট, আড়ত, গুদামেও পানি উঠে যায়।
বৃষ্টির কারণে নগরীতে পরিবহন সঙ্কট দেখা দেয়। বিপাকে পড়েন কর্মজীবী মানুষ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গণপরিবহন মেলেনি। গাড়ি না পেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেছেন অনেকে। বৃষ্টির অজুহাতে রিক্সা, অটোরিকশার ভাড়াও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। জোয়ারে প্লাবিত এলাকাগুলোতে সড়কে যানবাহন আটকে তীব্র জটের সৃষ্টি হয়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর বেশিরভাগ সড়কে ছিল তীব্র যানজট। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় রাস্তায় যানবাহনের বিশেষ করে পণ্যবাহী পরিবহনের চাপ ছিল বেশি। এতে করে সড়কে আটকে পড়া মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
প্রবল জোয়ারে নগরীর আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহর, কাট্টলী, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, শান্তিবাগ, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট, চাক্তাই, শোলকবহর, ষোলশহর, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জসহ অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের উচ্চতা বেশি হওয়ায় বাসাবাড়িতেও পানি উঠে যায়। এসব এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্কুল-কলেজে স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘিœত হয়। কাদা-পানি মাড়িয়ে কাজেকর্মে ছুটেছে মানুষ। পানিতে সয়লাব হয়েছে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর, দোকান-পাট, গুদাম, আড়ত।
নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসে। দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরের আমদানিকৃত খোলা পণ্যসামগ্রী লাইটারেজ জাহাজে খালাস, পরিবহন বন্ধ থাকে। বন্দরেও স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। টানা মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে পাহাড়-টিলার পাদদেশে বসবাসরত নিম্ন আয়ের প্রায় ৪ হাজার মানুষকে গত দুই দিনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার : টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে ঘূর্ণিঝড় তিতলির আঘাতে অর্ধশত বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাত ও উত্তাল সাগরের টেউয়ের আঘাতে এসব বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্যমতে, সকালে জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ উঁচুতে আছড়ে পড়ে পানি। এ সময় বঙ্গোপসাগরের ঢেউ বাড়ি-ঘরে ঢুকে বিধ্বস্ত হয় হয় ঘর বাড়ি। এতে শাহপরীর দ্বীপের মাঝের পাড়া, দক্ষিণপাড়া ও জাইল্যাপাড়া এলাকার প্রায় অর্ধশত বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অরক্ষিত বেড়িবাঁধের কারণে জোয়ারের পানিও ঢুকে প্লাবিত হয়েছে অনেক গ্রাম। কক্সবাজারে হালকা বাতাস ও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ মেঘাছন্ন ও সাগর উত্তাল রয়েছে। গত বুধবার থেকেই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান। তিনি জানান, খবর পেয়ে শাহপরীর দ্বীপের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তারা। এছাড়া যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের প্রাথমিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান ইউএনও।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, ঘূর্ণিঝড় তিতলির কারণে গতকাল বুধবার মধ্যরাত থেকেই রাজশাহী অঞ্চলে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। প্রচন্ড গরমের পর এ বৃষ্টি আবহাওয়ায় শীতলতা এনেছে। আর্শীবাদ হয়ে এসেছে আমন আবাদসহ আগাম শীতকালীন শাকসবজির জন্য। বৃষ্টি কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের সকালের দিকে বেশ খানিকটা বেকায়দায় ফেলে। হাটবাজারেও জনসমাগম ছিল কম। রাস্তাঘাটও ছিল বেশ ফাঁকা ফাঁকা। তবে আবহাওয়া অফিস বলছে, তীব্রতায় ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র কারণে এমন আবহাওয়া। বৃষ্টিময় আবহাওয়া আরো কয়েকদিন থাকবে। সঙ্গে থাকতেও পারে দমকা থেকে মাঝারি ধরনের ঝড়ো হাওয়া।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, নিম্নচাপের প্রভাবে গত বুধবার মাঝরাত থেকে গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা বৃষ্টিতে বগুড়ায় স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এপর্যন্ত ৪৬.৪ মি.মি.বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।বগুড়ার ধুনট উপজেলার পল্লীতে বৃষ্টির সাথে ঝড়োো হাওয়ায় ফসলের ক্ষতিও হয়েছে বলে জানা গেছে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, তিতলি’র প্রভাবে উপকূলীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ৪/৫ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বেড়িবাঁধে ভাঙ্গা পয়েন্টের দিয়ে পানি প্রবেশ করে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের পনিতে উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নে নিজামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠ তলিয়ে যাওয়াতে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। গত দু’দিন ধরে দফায় দফায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরণের বৃষ্টিপাতে পানি বন্দি রয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। তবে সাগরে মাছ ধরার ট্রলার না থাকায় কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন বেরিবাঁধের ভাঙ্গা পয়েন্ট থেকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে কৃষকদের ফসল তলিয়ে রয়েছে পানির নিচে। মাছের ঘের ডুবে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পরেছে মৎস্য চাষিরা। বেড়িবাঁধ ও উচুঁ জমি হয়েছে গবাদি পশুর চারণ ভূমি। এছাড়া নিজামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে যাতায়েত পথ ও স্কুল মাঠ তলিয়ে রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীসহ দুর্ভোগে পরেছে স্থানীয়রা। নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা মো.বেলায়েত খাঁন বলেন, অমাবশ্যা ও পূর্র্ণিমার প্রভাবে জোয়ারে তলিয়ে যায় রাস্তা ঘাটসহ বিদ্যালয়ের মাঠটি। বেরী বাঁধ মেরামত না হওয়ায় দুর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছে।
মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আঃ ছালাম আকন বলেন, বাঁধের কাজ সম্পন্ন হওয়ায় শত শত একর কৃষি জমি আনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে। অতিশ্রিগ্রহী এ বেড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন করা না হলে শিক্ষা, কৃষি, বসবাস সব কিছু স্থবির হয়ে পরবে। তবে এব্যাপারে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে এ বেড়ি বাঁধটি নির্মাণ করার দাবি জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।