বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ পূর্ব ভারতের উপকূলে আঘাত করেছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় তিতলিউত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে গোপালপুরের নিকট দিয়ে ভারতের উড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। বিশাল সাইক্লোন তিতলি আরও উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পরবর্তী ৩ ঘন্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে। আগেই কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। জারি রয়েছে রেড অ্যালার্ট।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, এ সময় ঘূর্ণিঝড়টির সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬৫ কিলোমিটার। দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ায় খুলনা-সাতক্ষীরা-ফরিদপুর-গোপালগঞ্জ অঞ্চলসহ উপকূলবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। ধর্মপ্রাণ মানুষজন আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করছেন। তিতলির ছোবল থেকে রক্ষা পেল সুন্দরবনও।
এদিকে তিতলির প্রভাবে আশ্বিনের শেষ প্রান্তে এসে বাংলাদেশে ঘনঘোর মেঘমালার কারণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। বন্দরসমূহে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সঙ্কেত বহাল আছে। দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরের আমদানিকৃত খোলা পণ্যসামগ্রী লাইটারেজ জাহাজে খালাস, পরিবহন বন্ধ রয়েছে। বন্দরেও কাজ ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল রাত থেকে আজ সকালে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চট্টগ্রামে হিমেল দমকা বাতাসের সাথে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে।
অকালে সৃষ্ট বর্ষাকালীন অবস্থায় বন্দরনগরীতে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। কর্মমুখী লাখো মানুষজন বিশেষত শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। টানা মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে পাহাড়-টিলার পাদদেশে বসবাসরত নিম্ন আয়ের প্রায় ৪ হাজার মানুষকে গত দুই দিনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। অব্যাহত বর্ষণের সাথে সকালের জোয়ারে চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ, হালিশহর, কাট্টলী, পতেঙ্গা, চকবাজার, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট, চাক্তাই, শোলকবহর, ষোলশহর, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা আবারও প্লাবিত হয়েছে। কাদা-পানি মাড়িয়ে কাজেকর্মে ছুটছে মানুষ। পানিতে সয়লাব হয়েছে নি¤œাঞ্চলের বাড়িঘর, দোকান-পাট, গুদাম, আড়ত। সপ্তাহের শেষ দিনে বৈরী আবহাওয়ায় গণপরিবহন সঙ্কটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন অগণিত মানুষ। বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।
এদিকে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। আগামী ২ দিনে দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বজায় থাকতে পারে।