পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির, দেশের প্রবীণ আলেম আল্লামা শাহ মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী পদত্যাগ করায় তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৫০১ আলেম। গতকাল যাত্রাবাড়ী আশরাফিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা জাফর আহমদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, হক্কানী আলেমরা কখনো ধর্মহীনতা ও নাস্তিকতাকে সমর্থন করতে পারে না। তারা এ মতবাদকে কুফুরি মতবাদ আখ্যায়িত করে কোনো হক্কানী আলেম নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে বাতিল শক্তির সাথে আঁতাত করতে পারেন না। আল্লামা বাবুনগরী সময়োপযোগী ও সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়ায় দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই। তারা বলেন, কওমি সনদের স্বীকৃতি ওলামায়ে কেরামের ন্যায্য অধিকার, এ জন্য ওলামায়ে কেরামের ঐতিহ্য বিলীন করে কারো গোলাম হওয়া যাবে না।
বিবৃতিদাতাদের অন্যতম হলেন : মুফতি হিফজুর রহমান, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা মফিজুর রহমান, মুফতি আব্দুল বারী, মাওলানা আল আমীন, মাওলানা মুজিবুর রহমান, মাওলানা আশরাফুল হক আমিনী, মাওলানা জাফর আহমদ, মাওলানা আমানুল্লাহ, মাওলানা ইসহাক শরিফ, মাওলানা মুফতি সিদ্দিকুর রহমান, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, মুফতি রুহুল আমীন, মাওলানা সুলাইমান, মাওলানা অলিউর রহমান, মাওলানা ফারুক আহমদ, মুফতি জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
‘আল্লামা শফী আদর্শচ্যুত হননি’
হেফাজতের জরুরি সভায় নেতারা
আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বক্তব্যকে ঘিরে হেফাজতে ইসলামের অভ্যন্তরে তোলপাড় চলছেই। ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আওয়ামী এজেন্টদের’ সাথে না থাকার ঘোষণা দিয়ে সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর হেফাজতের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণার পর তাকে সমর্থন করেন অপর নায়েবে আমির ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের চেয়ারম্যান ও নেজাম ইসলাম পার্টির সভাপতি মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী। এ দু’জনের বক্তব্যকে ঘিরে সারাদেশে হেফাজত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে মিশ্র-তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীদের প্রশ্নবাণ আর তোপের মুখে পড়তে থাকেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা।
এ প্রেক্ষাপটে গতকাল (রোববার) বিকেলে সিনিয়র নেতাদের সাথে হাটহাজারী মাদরাসায় জরুরি সভায় বসেন হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফী। বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হেফাজত আমির আওয়ামী লীগ হয়ে যাননি, যারা তাকে আওয়ামী লীগ বলছেন তারা মিথ্যাবাদী। তিনি হেফাজতের আদর্শে অবিচল এবং অটল রয়েছেন। আদর্শচ্যুত হয়ে যাননি। তিনি কোন প্রকার প্রলোভনে উদ্বুদ্ধ হননি এবং কোন আর্থিক লেনদেনও করেননি।
জানা গেছে, বৈঠকে সিনিয়র নেতারা হেফাজত আমিরকে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলেন। এরপর তিনি তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, তিনি হেফাজতের আদর্শ থেকে সরে যাননি। ১৩ দফা দাবির ব্যাপারে তার অবস্থান আগের মতো অনড় রয়েছে। বিশ্বস্তু সূত্রে জানা গেছে, জরুরি সভায় সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর হেফাজতের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়। তবে সভা শেষে দেয়া বিবৃতিতে এ বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
হেফাজত আমিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা হাফেয তাজুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ সলিমুল্লাহ, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, মাওলানা মুফতি জসীমুদ্দিন, মাওলানা আশরাফ আলী নেজামপুরী, মাওলানা ইসহাক মেহেরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মুহাম্মদ আনাস মাদানী ও মাওলানা মুফতি রহিমুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভা থেকে আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী যে বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। হেফাজতে ইসলাম নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে বলা হয়, মুফতি ইজহারুল ইসলাম হেফাজতের কেউ নন। আগেও ছিলো না এখনও নেই। যিনি হেফাজতের দায়িত্বশীলই নন, তিনি আবার হেফাজত আমীরকে বহিষ্কার করবেন! এটা পাগলের প্রলাপ। তারা বলেন, হেফাজতে ইসলাম দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের বৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে দেশের ওলামায়ে কেরাম হেফাজতের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ ছিলো, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ।
মুফতি ইজহারুল ইসলাম হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা নায়েবে আমীর নন উল্লেখ করে বলা হয়, প্রতিষ্ঠাতা তো অনেক দূরের বিষয়, তিনি হেফাজতেরও কেউ নন। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা একমাত্র শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। হেফাজত নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বিগত পহেলা অক্টোবর হাটহাজারী মাদরাসায় চট্টগ্রাম জেলা বেফাক কর্তৃক আয়োজিত পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আল্লামা শাহ আহমদ শফী স্পষ্ট বলেছেন, আমি আওয়ামী লীগ হয়ে যাইনি। যারা তাকে আওয়ামী লীগ বলেছেন তারা মিথ্যাবাদি। মিথ্যাচার কখনো স্থায়ী হয় না। তিনি তার আদর্শে অবিচল রয়েছেন এবং হেফাজতের সমস্ত দাবি দাওয়ার বিষয়ে অটল রয়েছেন। তিনি আদর্শচ্যুত হয়ে যাননি। প্রকৃত ঘটনা না জেনে না বুঝে কারো বিরুদ্ধে মন্তব্য করা সুস্থ মস্তিষ্কের পরিচায়ক নয়।
হেফাজত নেতারা বলেন, আমরা স্পষ্ট উল্লেখ করতে চাই কওমী মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি আদায়ের বিষয়টি দেশের প্রসিদ্ধ ৬টি বোর্ডের নেতৃবৃন্দের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমান সরকারের সাথে আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এমএ-এর সমমান ঘোষণা করেছেন। এটি কওমী ওলামাদের দীর্ঘদিনের দাবি। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে এই দাবি সফলভাবে আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। কওমী মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি আর হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবী এক নয়।
তারা আরো বলেন, সনদের স্বীকৃতি এটা আমাদের অধিকার। নাগরিক হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রে আমাদের অবদানও কম নয়। সনদের স্বীকৃতির বিল জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানানো মানে সরকারের কাছে কওমী ওলামায়ে কেরামদেরকে বিক্রি করে দেয়া নয়। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃতে কওমী ওলামায়ে কেরামের বিজয় নিশ্চিত হওয়াতে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তা মেনে নিতে পারছে না। তারা ইনিয়ে বিনিয়ে আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে শাপলার ট্রাজেডির সাথে বিমুখতা প্রদর্শন বলে ব্যর্থ প্রমাণ করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে। নেতারা বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পরিষ্কার বলতে চাই, আল্লামা শাহ আহমদ শফী কোন প্রলোভনে উদ্ধুদ্ধ হননি এবং কারো কাছ থেকে কোন প্রকার আর্থিক লেনদেন করেননি। তিনি হেফাজতের আদর্শ থেকেও চুল পরিমাণ বিচ্যুত হননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।