পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হেফাজতের নেতৃত্বের ‘শুদ্ধি অভিযানে’র অংশ হিসেবে সময়-সুযোগ মতো তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে এমনটি উঠে আসছে জোরালো আলোচনায়।
হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর হেফাজতের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘটনায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা নায়েবে আমির বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি ও ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী আওয়ামী এজেন্টদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করায় আমি তাকে অভিনন্দন জানাই। এদিকে গতকাল (শনিবার) মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, হেফাজতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করায় মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তবে আমি হেফাজত ছাড়ছিনা। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা নায়েবে আমির হিসেবে সংগঠনে থেকেই শুদ্ধি অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, যারা ব্যক্তিস্বার্থের বিনিময়ে হেফাজতের আদর্শ জলাঞ্জলি দেবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে ‘সময় সুযোগ বুঝে’ সংগঠন থেকে অদূর ভবিষ্যতে বহিষ্কার করা হতে পারে এবং ‘মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের’ বিষয়ে বলিষ্ঠ তদন্ত করা হবে বলেও জানান মুফতি ইজহার। তিনি বলেন, ব্যক্তি স্বার্থে যিনি আপোষ করেন, সংগঠনের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হন তাকে হেফাজতের আমির রাখা যায় কি না এ ব্যাপারে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থক এবং তৌহিদী জনতা সময়মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা বাদ দেয়ার পর আওয়ামী লীগের সাথে কোন দেশপ্রেমিক ঈমানদার সম্পর্ক রাখতে পারেন না। আর হেফাজতের মতো অরাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক ও ঈমানী সংগঠনের কোন নেতার পক্ষে তা একেবারেই অসম্ভব। এ অবস্থায় যারা হেফাজতের আদর্শ বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
লিখিত বিবৃতিতে মুফতি ইজহার তার সম্পর্কে অপপ্রচারের জবাবে বলেছেন, আওয়ামী এজেন্টরা সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য প্রচারে খুব পারদর্শী। তারা দীর্ঘকাল ধরে আমার ব্যাপারে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছিল যে, আমি নাকি কাউকে রাবেয়া বসরী বলেছি। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি যে আমি কোনদিনই কাউকে রাবেয়া বসরী বলিনি। হযরত মুফতী ফয়জুল্লাহর আজীবনের একান্ত মুখপাত্র কোনদিনই এরকম কথা বলতে পারে না।
অপরদিকে বর্ষিয়ান আলেমেদ্বীন আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজতের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণায় হেফাজতে ইসলামে তোলপাড় চলছে। সর্বস্তরের নেতাকর্মী সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন চলে আসা চাপা ক্ষোভ-অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে শুরু করেছে। ‘ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী আওয়ামী এজেন্ট’ উল্লেখ করে ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করার ২৪ ঘণ্টার মাথায় হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন দেশের প্রবীণ আলেম আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি হেফাজতের শীর্ষ ব্যক্তিসহ কতিপয় নেতার স্বার্থের বিনিময়ে হেফাজত প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে সরে যাওয়ার অভিযোগ এনে সম্পর্ক ছিন্ন করার এ ঘোষণা দেন।
গত ১ অক্টোবর হাটহাজারীর এক অনুষ্ঠানে হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী নিজে আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেও দোষের কিছু নেই বলে যে মন্তব্য করেছেন তার জের ধরে দলের অভ্যন্তরে চাপা অসন্তোষ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এর মধ্যেই হেফাজতের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেন সিনিয়র নায়েবে আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি অভিযোগ করেন, যে ১৩ দফা দাবি নিয়ে হেফাজতের আন্দোলন তার কোনোটাই আদায় হয়নি। এ অবস্থায় ব্যক্তিগত স্বার্থের বিনিময়ে যারা সরকারের সাথে আপোষ করছে তাদের প্রতি তার আস্থা নেই।
তার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান অপর নায়েবে আমির মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দেয়ার কারণে কোন মুসলমান আওয়ামী লীগকে সমর্থন করতে পারে না। মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আওয়ামী এজেন্টদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করায় অশেষ ধন্যবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন, যখন যে কোন উপায়ে ৫ জানুয়ারির মত একটি পাতানো নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে এবং আওয়ামী এজেন্টরা ধর্মপ্রাণ ও স্বাধীনতাপ্রিয় দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে তখন আল্লামা মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর এ সিদ্ধান্ত একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দ্বারা আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দেয়ার কারণে কোনদিনই কোন মুসলমান আওয়ামী লীগকে সমর্থন করতে পারে না। এ ব্যাপারে হাটহাজারী মাদরাসার মাওলানা মুফতি নুর আহমদ, পটিয়া মাদরাসার মাওলানা মুফতি আহমদ উল্লাহ ও মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ প্রায় শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অনুরোধে ঐ সময় আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়াও রচনা করেছিলাম।
আল্লামা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী বিবৃতিতে আরো বলেন, আমরা ক্বওমী সনদের স্বীকৃতি চাই, তবে তা ঈমানের বিনিময়ে নয়। স্বীকৃতি পাওয়ার শুকরিয়ার নামে কাউকে সংবর্ধনা দেয়া একটি আত্মঘাতি পদক্ষেপ হবে বলেও আলেম সমাজকে হুঁশিয়ার করে দেন তিনি।
হেফাজতের ১৩ দফায় উল্লেখযোগ্য হলো ঃ সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী সব আইন বাতিল করা। আল্লাহ, রাসুল (সাঃ) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস। কথিত শাহবাগি আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সাঃ)-এর শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা। ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। ইসলাম বিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা। সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা। এসব দাবির কোনটিই পূরণ হয়নি বলে জানান হেফাজতের নেতারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।