Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করবেন কাল

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ আগামীকাল স্বাক্ষর করবেন। সংসদ সচিবালয় থেকে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের সম্মতির জন্য গত বৃহস্পতিবার গণভবনে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে স্বাক্ষর না করতে প্রেসিডেন্টর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)এবং দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
গতকাল শুক্রবার বিকালে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন ইনকিলাবকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রেস সচিব বলেন, জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে প্রেসিডেন্টের সম্মতির জন্য গণভবনে এসেছে। শুক্রবার ও শনিবার সরকারি ছুটি সে কারণে আগামী রোববার বিলে স্বাক্ষর করবেন।
সাংবাদিক, সম্পাদক ও সুশীল সমাজের তীব্র আপত্তির পরও বিতর্কিত বিভিন্ন ধারা বহাল রেখে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিলটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। এমনকি সংসদের ভেতরেও আইনটির বিভিন্ন ধারা নিয়ে সমালোচনা হয়। আইন বিশেযজ্ঞরা বলছেন, এই আইনের কারণে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জনগণের বাক স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে। আইনটি অপপ্রয়োগের সমূহ আশঙ্কা রয়েছে বলে তারা আপত্তি জানিয়েছেন। এর মধ্যেই মঙ্গলবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটিতে স্বাক্ষর করেছেন। প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করলে এটি আইনে পরিণত হবে।
জানা গেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে এর বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের আপত্তির সুরাহা না করেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ওই আইন পাস করা হয়। বাকস্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতার পরিপন্থী আইন প্রণয়নের প্রতিবাদে গত ২৯ সেপ্টেম্বর মানববন্ধনের কর্মসূচি দেয় সম্পাদক পরিষদ। পরে রাজপথের কর্মসূচিতে না নামার অনুরোধ জানিয়ে সম্পাদক পরিষদকে চিঠি দেন তথ্যমন্ত্রী। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসূচি স্থগিত করে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেয় সম্পাদক পরিষদ।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকদের সাথে বৈঠক করেন সরকারের আইনমন্ত্রী তথ্যমন্ত্রী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী। জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের আপত্তির বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে আশ্বাস দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ আইনের যেসব ধারা নিয়ে সম্পাদকদের আলোচনা হয় সেগুলো হচ্ছে- ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩। তবে ২১ ধারার বিষয়ে সরকার পক্ষের ব্যাখ্যায় সম্পাদক পরিষদ সন্তুষ্ট বলে জানানো হয়।
ওই বৈঠকে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের নেতৃত্বে সিনিয়র সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, নিউএজের সম্পাদক নূররুল কবীর, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, ইনডিপেনডেন্টের শামসুর রহমান, সমকালের মুস্তাফিজ শফি, বণিক বার্তার দেওয়ান হানিফ মাহমুদসহ আরো কয়েকজন সম্পাদক এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় বৈঠক শেষে আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, এ বিষয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা করার পর আবারো তারা সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বসবেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে যে, এ রকম একটা আইন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে, আমরা সেই ঐকমত্যে পৌঁছেছি। কিন্তু এ রকম একটা আইন যেন সাংবাদিকতার স্বাধীনতা বা বাকস্বাধীনতা ক্ষুন্ন না করে- সেই ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন আছে।
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ৪টি বিষয়ের সরাসরি বিরোধী। আইনটি সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র ও সাংবাদিকতার ইথিকস (নীতি) বিরোধী আইন। এই আইন দেশের জন্য কোনোভাবেই ভালো নয়। আমরা এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটিতে দুদফা বৈঠক করেছি। এরপর ৩ নম্বর বৈঠকও হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি না করে আরো কড়া ধারা দিয়ে আইনটি পাস করা হলো। এটি প্রশ্নবিদ্ধ।
এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে স্বাক্ষর না করতে প্রেসিডেন্টর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদকে চিঠি দিয়ে তারা বিলটিকে পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরত পাঠানোরও আহ্বান জানান। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বিলটি স্বাক্ষর না করতে আহ্বান জানিয়েছে।



 

Show all comments
  • ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ৮:২৬ এএম says : 0
    দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জনগণের চাহিদার দিকে লক্ষ রেখে শাক্ষর দেয়া দরকার।আর যদি বর্তমান সরকারের প্রেসিডেন্ট হয় তাহলে শ্বাক্ষর দিতেই পারে কিন্তু আইনটি পাশ হলে প্রচুর ক্ষতি হল এবং ভুল হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রেসিডেন্ট

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ