Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হেফাজতও ছাড়লেন বাবুনগরী

সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কুরাইশী, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর ও ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বর্ষিয়ান আলেমেদ্বীন আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী নিজ পদ ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর প্রিয় পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাবের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে এ তথ্যটি প্রকাশ করেছেন। গতকাল বাদ আছর এ প্রতিবেদককে নিজ কর্মস্থল ফটিকছড়ির আল জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদরাসায় একান্ত সাক্ষাৎকারে দু’সংগঠন থেকে পদত্যাগের বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন।
গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আওয়ামী এজেন্টদের সাথে আমি নেই’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে ইসলামী ঐক্যজোট এবং এক সাথে হেফাজতের নেতাকর্মী-সমর্থকসহ সর্বস্তরে তোলপাড় অব্যাহত রয়েছে।
তাই আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর একান্ত সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘হেফাজতে ইসলাম সমস্ত ওলামায়ে কেরামের একটি অ-রাজনৈতিক সংগঠন। যে সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল ১৩ দফা’। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর যে আইন-কানুন করেছেন এগুলো ইসলাম বিরোধী। সেগুলো পরিবর্তন করার জন্য সমস্ত আলেম-ওলামা মিলে আন্দোলন শুরু করেন। এ নিয়ে শেখ হাসিনার সাথে গণভবনে বৈঠক হয়। এতে ৬৮ জন আলেমসহ আমরা গিয়েছিলাম। শেখ হাসিনা কিছু কিছু দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসও দেন। বিশেষ করে- স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য দাবি দিলে শেখ হাসিনা নিজেই বলেন, এ শিক্ষা ছাড়া নৈতিক চরিত্র গঠন সম্ভব হয় না। তাই আমি সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করবো। কিন্তু এরপরে যা ছিল তাও বন্ধ করে দিয়েছেন। আমাদের ১৩ দফার একটিও মানেননি। এরমধ্যে কওমী সনদের স্বীকৃতির কথা উঠে আসে। ওলামাদের কেউ তা চাইলেও কেউ কেউ চাননি। শেষে সবাই একত্রিত হয়ে শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে স্বীকৃতির দাবি তুললে তিনি তা দেয়ার আশ্বাস দেন, এবং স্বীকৃতিও দিয়েছেন। যারা স্বীকৃতির বিরুদ্ধে ছিল তাদের মত হচ্ছে- এগুলো দেওবন্দী মাদরাসা। দেওবন্দী উসুলে সরকারি স্বীকৃতি নেয়ার কোন নজীর নেই। এটি উসুলের খেলাপ- এ জন্যই তারা বিরোধীতা করেন। তারপরও সবাই যেহেতু স্বীকৃতি নিচ্ছেন- বিরোধীরাও চুপ মেরে থাকেন। এ স্বীকৃতি পাওয়ার পর হেফাজতের ১৩ দাবির কোন কথা আর বলা হচ্ছে না। এখন হেফাজতের মুরব্বীরা স্বীকৃতি পেয়ে হাসিনার পক্ষে কথা বলা শুরু করেছেন। সংবর্ধনা দিচ্ছেন, এটি দিচ্ছেন ওটি দিচ্ছেন। ১৩ দাবির কোনটি তো পূরণ করেননি। সে গুলো নিয়ে কথাও বলা হচ্ছে না। হেফাজত গঠিত হয়েছিল সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য। যেহেতু তা করা হচ্ছে না, তাই আমি হেফাজত থেকে ইস্তফা দিয়েছি। স্বীকৃতি পাওয়ায় হেফাজত আমীর ১৩ দফার জন্য কোন কথা বলছেন না। শাপলা চত্বরের ঘটনার পর কই একটি প্রতিবাদ সভাও তো করেননি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শাপলা চত্বরে আনুমানিক ২০০ লোক শহীদ হয়েছেন। আমরা তাদের ভুলে গেছি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বীকৃতি দেয়ায় হাসিনাকে সংবর্ধনা দিচ্ছে- কোন দাবি পূরণের জন্য নয়। হেফাজত আমীর তার আদর্শ থেকে সরে গেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরে গেছেন বলে তো মনে হচ্ছে; নইলে ১৩ দফার ব্যাপারে তো আর কোন আন্দোলন করছেন না। এতে কি প্রমাণিত হয়? অপর প্রশ্নের জবাবে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বলেন, শাপলা চত্বরের ঘটনার পর হেফাজতের জাতীয় কমিটি কিংবা সর্বশেষ গঠিত ২৫ সদস্য বিশিষ্ট নীতি-নির্ধারণী কমিটির একটি সভাও ডাকা হয়নি। আমি সিনিয়র নায়েবে আমীর হলেও কোন সভা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সারা দেশের ওলামাগণ ঘটনা পরবর্তী হাটহাজারী মাদরাসায় জমায়েত হলেও কোন বৈঠক করেননি। শহীদ পরিবারের সাথে ন্যূনতম সৌজন্যতাও দেখানো হয়নি। এতে করে হেফাজতে ইসলামের কর্মকান্ড স্থবির ও সারা দেশের আলেম-ওলামা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। বর্তমান হেফাজত সরকারের পক্ষাবলম্ভনে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তৌহিদী জনতা চরমভাবে ক্ষুব্ধ। কিন্তু কেউ সাহস করে আমীরকে বলতে পারছেন না।
ইসলামী ঐক্যজোটে আমি গেছি আল্লামা ফজলুল হক আমিনীর আহবানে এবং দলের সভায়ও শরীক হয়েছি। তিনি বয়সে আমার ছোট হলেও মানুষটি সাহসী, হকের উপর জানবাজ। দ্বীনের জন্য নি:স্বার্থবান মুজাহিদ ছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষবাদের সাথে আপোষহীন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাই তার সাথে আমি কাজ করেছি। পরে তিনি ইন্তিকাল করেছেন। তারপরও পূর্বের ন্যায় আমি ইসলামী ঐক্যজোটের সাথে ছিলাম। কিন্তু দেখছি পরবর্তী নেতৃত্ব তাঁর আদর্শের উপর স্থিত নেই। যেহেতু আমার বয়স হয়ে গেছে; সেহেতু আমার পক্ষে ওখানে (ঢাকায়) গিয়ে তার অভাব-অনুপস্থিতির ঘাটতি পূরণ করাও সম্ভবপর হচ্ছে না। সে রকম সুযোগও নেই। এ কারণে আমি ইসলামী ঐক্যজোট থেকেও ইস্তফা দিয়ে ফেলছি।
বর্ষিয়ান এ আলেমেদ্বীন বলেন, হায়াতুল উলিয়া ও বেফাকুল মাদারিসের কর্মকান্ড দেওবন্দের নীতি বিরোধী। তাই এ ব্যাপারেও আমার আপত্তি ছিল এবং এখনো আছে। এতে করে কওমী আলেমদের শিক্ষার মান অধপতনে যেতে পারে। এ বিষয়টি ওলামায়ে কেরামের গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত।
বর্ষিয়ান এ আলেমে দ্বীনের এমন কঠোর সিদ্ধান্তে হেফাজতের আভ্যন্তরে তোলপাড় শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা- যে উদ্দেশ্য নিয়ে হেফাজত গঠিত, সে উদ্দেশ্য এখন ব্যাহত হতে চলেছে। তারই বহি:প্রকাশ ঘটছে আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর পদত্যাগের মধ্য দিয়ে।



 

Show all comments
  • ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ৯:৩১ এএম says : 4
    আহ
    Total Reply(0) Reply
  • ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১০:০৭ এএম says : 0
    এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেনঠিক বলে মনে হয়
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Gani ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:৫৯ এএম says : 11
    উচিৎ কাজটি করেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Humyun Kabir ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০০ পিএম says : 9
    উনি সুন্দর কথা ও ন্যায়সংগত কথা বলেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • এম হোসাইন ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০১ পিএম says : 1
    বাংলার সিংহ পুরুষ, যুগশ্রেষ্ঠ বুজুর্গ আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
    Total Reply(0) Reply
  • ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১:০৪ পিএম says : 0
    যুগউপযোগী সিদ্বান্ত। ধন্যবাদ হযরতকে,ওনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ২:১২ পিএম says : 0
    বাবুনগরীকেই আমিৱ বানানো হোক৷
    Total Reply(0) Reply
  • মো: ইকবাল খান ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ৭:৫৮ পিএম says : 0
    বাবুনগরী আদর্শের পথে আছেন। যারা অন্যায়ের সাথে আপোষ করেছেন তারা কুরআনে উল্লিখিত মুনাফিক
    Total Reply(0) Reply
  • ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ৯:৪১ পিএম says : 0
    এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন *বাবু নগরী উনি বুজতে পারছেন সঠিক রাজনীতি
    Total Reply(0) Reply
  • রমিজ রেজা ৭ অক্টোবর, ২০১৮, ৮:১৮ এএম says : 0
    মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী সঠিক পথে আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • রমিজ রেজা ৭ অক্টোবর, ২০১৮, ৮:২০ এএম says : 1
    মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী সঠিক পথে আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • modina ৯ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:১৩ পিএম says : 0
    khobe poretaper bisoy
    Total Reply(0) Reply
  • ১২ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:২৫ এএম says : 0
    হেফাজত ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে নিশ্চিত.
    Total Reply(0) Reply
  • ১২ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:২৭ এএম says : 0
    হেফাজতের আমির হওয়ার যোগ্যতা বাবু নগরির আছে তাই তাকে আমির বানানো হোক.
    Total Reply(0) Reply
  • ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৭:২৬ এএম says : 0
    হুজুর আপনি এই বিষয়টি নিয়ে হেফাজত ইসলামের আমিরের সাথে কথা বলেছেন?????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হেফাজত

১ নভেম্বর, ২০২২
৩১ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ