পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চলতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশ হবে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে এই প্রবৃদ্ধির সুফল কারা পাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ জানানোসহ আর্থিক খাতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের অর্থনীতির চালচিত্র নিয়ে প্রকাশিত এডিবির ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৮’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির এই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এর আগে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল এশীয় ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। যদিও সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রবৃদ্ধির বিষয়ে বলেছেন, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ হতে পারে। আগামী পাঁচ বছরে তা ৯ শতাংশে উন্নীত হবে। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের কাছাকাছি হতে পারে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। সাময়িক হিসাবে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে কয়েক মাস আগে জানিয়েছিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)
গতকাল বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফ্যান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি, রফতানি ও রেমিটেন্সের ধারা অব্যাহত থাকলে এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়লে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। আগামীতে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের বেশ কিছু সংস্কার আনতে হবে।
প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্বব্যাংক বলছে, খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিল অব্যাহত থাকলে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাবে। এতে করে বাজেটে চাপ বাড়বে। এজন্য আর্থিক খাতে সংস্কার আনতে হবে। খেলাপি ঋণের দিকে নজর দিতে হবে। এই মূহুর্তে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক চার শতাংশে। ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মোট ঋণের ৪৮ শতাংশই খেলাপি ঋণ। এছাড়া, ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের বড় অংশই খেলাপি ঋণ। ব্যাংক খাতের এই বিশাল ঋণ আদায়ে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহবান জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রফতানি খাত ও রেমিটেন্স প্রবাহে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ালেও ব্যাংকিং খাতের বোঝা অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এতে বলা হয়, যাদের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে সরকার ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে তারা পাচ্ছেন কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ খাতে জোর দিতে হবে। এক হিসেবে বিশ্বব্যাংক জানায়, ২০১১-২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ মানুষ নতুন করে বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। এ সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে ৮০ শতাংশ। ২০৩০ সালের বিদ্যুতের চাহিদা মোকাবিলায় এখন থেকেই উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে জ্বালানী ব্যবহারের অপচয় রোধ করতে হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় ৬/৭ গুণ কম। গ্যাস ব্যবহারে অপচয়রোধ করা গেলে ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে জানানো হয়। বিশ্বব্যাংক জানায়, বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়ন করছে। উন্নয়ন ধরে রাখতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। রফতানি ও রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি যেন কমে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। বিশ্বের ১০টি উদীয়মান দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এজন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।
জাহিদ হোসেন বলেন, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের ক্ষেত্রে যদি সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকে, বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে যোগান সমন্বয় করা গেলে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফ্যান বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ১, ৭ দশমিক ২, ৭ দশমিক ৬ এগুলো নিয়ে বিতর্ক নয়, এগুলো ইউজলেস। আমাদের দেখতে হবে, জিডিপির এই গ্রোথটা কোথায় ইমপ্যাক্ট করে। বেকারত্ব দুর হচ্ছে কি না, দারিদ্র্য দূর হচ্ছে কি না, টেকসই উন্নতি হচ্ছে কি না, জিডিপির প্রবৃদ্ধি বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে কি না। তিনি বলেন, দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এটা কমিয়ে আনতে হবে। খেলাপি ঋণ বাড়লে টেকসই উন্নয়ন হবে না।
চিমিয়াও ফ্যান বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়ন করছে। উন্নয়ন ধরে রাখতে সংস্কারমুলক পদক্ষেপ নিতে হবে। রফতানি ও রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি যেন কমে না যায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে ব্যবসার পরিবেশ যেন খারাপ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনিশ্চিত পরিবেশে কেউ ব্যবসায় আসবে না। বিনিয়োগ পরিবেশ যেন থাকে, সেটা নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, জিডিপির গ্রোথ সরকারী হিসাবে আট শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এটা নিয়ে কিছু প্রশ্ন রয়েছে, এখানে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। গত কয়েক বছরে রফতানি আয় হতাশাজনক। জিডিপির তুলনায় রফতানি প্রবৃদ্ধি কম হলে কিভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়বে?
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিটেন্স কমছে, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে না। ব্যাংকের নয়-ছয় পলিসি নির্ধারণ কোন কাজে আসেনি। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এই অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে।
আহসান এইচ মনসুর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের গুণগত মান ও খরচ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এসব মেগা প্রকল্প থেকে কী ধরনের অর্থনৈতিক সুফল আসবে, তা নিয়ে চূড়ান্ত কোনো হিসাব এখনও করা হয়নি। রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতুর যেভাবে ব্যয় বাড়ছে তা কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখতে হবে।
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে কিনা সেগুলো ভেবে দেখতে হবে। কেননা বাংলাদেশে এখনো ১৯ মিলিয়ন লোক চরম দারিদ্রসীমার নীচে বাস করছে। সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন শিশু এবং দুই দশমিক চার মিলিয়ন নারী অপুষ্টিতে ভুগছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কাদের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, প্রবৃদ্ধির সুফল কার কাছে যাচ্ছে, সেটা বের করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত দুই অর্থবছরে ৭ শতাংশ ছাড়ানো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পর চলতি অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশ সরকার ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছে। প্রায় এক দশক ৬ শতাংশের বৃত্তে ‘আটকে’ থাকার পর গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রথমবারের মত ৭ শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।