Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাম্পের সময়ে আমেরিকার ভাবমূর্তিতে ধ্বস

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৮, ৮:৩৪ পিএম

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আর্ন্তজাতিক নীতি ও বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির বড় ধরনের অবনতি হয়েছে। বিশ্বের ২৫টি দেশের নাগরিকদের ওপর ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের চালানো এক জরিপের ফলাফল সোমবার প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, অধিকাংশ উত্তরদাতারা ট্রাম্পের ওপর ভরসা করতে পারেন না।
জরিপে দেখা যায়, ২০১৭ সালের পর থেকে (ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণ) যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে সার্বিক ভাবমূর্তির অবনতি হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে এ পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নেতিবাচক ভেবে থাকেন।
চলতি বছরের ২০ মে থেকে ১২ অগাস্টের মধ্যে পরিচালিত ওই জরিপে দেখা যাচ্ছে, কেবল রাশিয়া, কেনিয়া ও ইসরায়েলের নাগরিকদের কাছেই যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ২০১৬ সালের তুলনায় উন্নতি হয়েছে। জার্মানির ৩০ শতাংশ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য দিয়েছেন। সেইসঙ্গে ফ্রান্সের ৩৮ শতাংশ ও কানাডার ৩৯ শতাংশ মানুষ যুক্তরাষ্ট্র ইতিবাচক ধারণা রাখেন।
সমগ্র জরিপে মাত্র ২৭ শতাংশ উত্তরদাতা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর আস্থা রাখার কথা বলেছেন। ৭০ শতাংশ বলেছেন, ট্রাম্পের ওপর ভরসা রাখা যায় বলে তারা মনে করেন না।
আস্থার জায়গায় বিশ্বনেতাদের মধ্যে ট্রাম্পের অবস্থান রাশিয়ার ভøাদিমির পুতিন (৩০ শতাংশ), চীনের শি জিনপিংয়ের (৩৪) চেয়ে পেছনে। অন্যদিকে ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা জার্মানির আঙ্গেলা মার্কেল এবং ৪৬ শতাংশ উত্তরদাতা ফ্রান্সের ইমানুয়েল মাক্রোঁর ওপর আস্থা রাখার কথা বলেছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭০ শতাংশ মনে করেন, অন্য দেশের স্বার্থকে যুক্তরাষ্ট্র পাত্তা দেয় না। আর বিশ্বের বড় সঙ্কটগুলো মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন মাত্র ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা। দশ বছর আগের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করে বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীনকেই এগিয়ে রেখেছেন বেশিরভাগ উত্তরদাতা।
৭০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে চীন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ প্রশ্নে ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলেছেন। বিশ্বের অর্থনৈতিক নেতৃত্ব কার হাতে- এই প্রশ্নে ৩৯ শতাংশ উত্তরদাতা যুক্তরাষ্ট্র এবং ৩৪ শতাংশ চীনের কথা বলেছেন।
চলতি বছর ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক বক্তব্যের কারণে কানাডা ও জার্মানির মত মিত্র দেশের মানুষের কাছেও যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে বলে জরিপে প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও ইরান পারমাণবিক চুক্তির মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের মতো কর্তৃত্ববাদী নেতাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা দেখিয়েছেন, কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলো ও ন্যাটো জোটের মিত্রদের সমালোচনা করেছেন।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া বক্তৃতায় ট্রাম্প দাবি করেন, হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নেওয়ার পর তার দুই বছরের অর্জন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রায় সব প্রশাসনকে ছাড়িয়ে গেছে। ওই বক্তব্যের জন্য তিনি জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের হাসির পাত্র হয়েছেন।
পিউ রিসার্চের জরিপ বলছে, ট্রাম্পের মেয়াদের প্রথম বছর ২০১৭ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির বড় ধরনের অবনমন ঘটে এবং ২০১৮ সালেও তা অব্যাহত আছে। মাত্র ৩০ শতাংশ জার্মান এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি প্রসন্ন, গত বছরের তুলনায়ও যা ৫ শতাংশ পয়েন্ট কম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করার কথা বলেছেন ৩৮ শতাংশ ফরাসি ও ৩৯ শতাংশ কানাডিয়ান। কিন্তু মাত্র ৭ শতাংশ স্প্যানিশ, ৯ শতাংশ ফরাসি ও ১০ শতাংশ জার্মান ট্রাম্পের ওপর আস্থা রাখার কথা বলেছেন।
উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে মেক্সিকানদের কাছেই যুক্তরাষ্ট্রের কদর গত বছরের তুলনায় খানিকটা বেড়েছে। তারপরও দেশটির মাত্র ৩২ শতাংশ উত্তরদাতা ওয়াশিংটনকে ইতিবাচকভাবে দেখার কথা বলেছেন।
জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সবচেয়ে প্রসন্ন ইসরায়েল, ফিলিপিন্স ও দক্ষিণ কোরিয়া। তিনটি দেশেই ৮০ শতাংশ বা তারও বেশি উত্তরদাতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সমর্থনের কথা বলেছে।
ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার এমন হালের পরও জরিপের ৬৩ শতাংশ উত্তরদাতা যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব মোড়লের ভূমিকায় দেখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করার কথা বলেছেন। চীনকে এ ভূমিকায় দেখতে চান মাত্র ১৯ শতাংশ উত্তরদাতা। সূত্রঃ রয়টার্স।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রাম্পের সময়ে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ