বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দুই টাকা কেজি পটোল, তিন টাকা কেজি করল্লা বিক্রির পর অতিবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত কুমিল্লার সবজি চাষিরা গত বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে এবার কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। শীতকালীন শাকসবজির আগাম চাষ করে সেই বিবর্ণ মাঠ রাঙিয়ে তুলেছে। সবজি চাষের জন্য প্রসিদ্ধ কুমিল্লার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে চাষিদের মহাকর্মযজ্ঞের এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। কুমিল্লায় শীতের আগাম সবজি চাষের ধুম পড়েছে। কেউ কেউ আরো আগেই সবজি চাষে নেমেছেন।
আগাম শাকসবজি বাজারে তুলতে পারলে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব সেই চিন্তা মাথায় রেখে চারা তৈরি ও সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা। শরতের শেষ দিকে কুমিল্লার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। দিনের বেলা প্রচণ্ড গরম পড়লেও রাতে হালকা শীত অনুভূত হয়। আবহাওয়ার এমন পালাবদলে কুমিল্লায় চাষাবাদের ধরনও পাল্টেছে। কুমিল্লার তিন’টি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ করা হয়। তিন’টি উপজেলা হলো চান্দিনা, বুড়িচং ও দেবিদ্বার।
এই তিনটি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, সা¤প্রতিক সময়ে চাষিরা সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ায় তারা শীতের আগাম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। শীতের আগেই বাজারে বিক্রি করে বেশি টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে এখন চাষিরা জমিতে শীতকালীন শাকসবজির চারা বপন ও পরিচর্যার কাজ করে যাচ্ছেন। কুমিল্লায় যেসব শাকসবজি চাষ হয় সেগুলো হলো আগাম আলু, মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ঢেঁড়স, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক। বুড়িচং উপজেলার ডুবাইচর, শিকারপুর, মোকামসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা মেতেছেন শীতকালীন সবজি চাষে। কুমিল্লার খুচরা বাজারে নতুন সবজির মধ্যে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৫০ টাকা, শিম ৬০-৮০ টাকা, ফুলকপি ৮০-১০০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৬০ টাকা, পালং শাক ৪০-৬০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে।
এদিকে কুমিল্লার পাইকারি বাজার নিমসার বাজারে সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে ট্রাকযোগে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। ডুবাইরচর এলাকার সবজি চাষি সাইফুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শীতের আমেজ শুরু হয়েছে সে কারণে শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদ করছি। চান্দিনার শ্রীমন্তপুর এলাকার চাষি খলিলুর রহমান বলেন, শীতের আগেই শাকসবজি জমিতে লাগিয়েছিলাম। সেগুলো এখন বাজারে বিক্রি করছি। আগাম শীতকালীন সবজি বিক্রি করে ভালো লাভ হচ্ছে। নিমসার হাটের পাইকারি ক্রেতা রুহুল আমিন জানান, এখান থেকে এসব শাকসবজি কিনে ট্রাকযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বাজারগুলোতে পাইকারি বিক্রি করে থাকি।
দেবিদ্বারের টমেটো চাষি মানিক মোহাম্মদ বলেন, আগাম টমেটো চাষ করলে লাভবান হওয়া যায়। তবে টমেটোর চারা রোপণের সময় পুরোদমে বর্ষা থাকে বলে ওই সময় অনেকটা ঝুঁকি থাকে। সেই ঝুঁকি পার করতে পারলে আগাম টমেটো চাষ করে ভালো আয় করা যায়। তিনি প্রায় চার বিঘা জমিতে শীতের আগাম টমেটো চাষ করেছেন। এগুলো বিক্রি করে অন্তত তিন লাখ টাকা আয় হবে বলেও আশা করেন তিনি। তবে আর কয়েক দিন পর থেকেই বাজারে স্বাভাবিক সময়ের টমেটো উঠতে শুরু করলে তখন দামও কমে যাবে। এর আগেই আগাম টমেটো চাষিরা লাভবান হবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন আরেক কৃষক মনিরুল ইসলাম।
চান্দিনার ছায়কোট গ্রামের চাষি তমিজ উদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, যেকোনো সবজিই যদি মৌসুমের শুরুতেই বাজারে তোলা যায়, তবে তার দাম যেমন বেশি পাওয়া যায়, তেমনি ক্রেতাদের কাছে তার চাহিদাও থাকে ব্যাপক। সে চিন্তা মাথায় রেখেই তিনি এবার জমিতে ফুলকপি চাষ করছেন। শিকারপুর এলাকার কৃষক আমিরুল হোসেন তার জমিতে বেগুনের চারা উৎপাদন করেছেন। জমিতে বিশেষভাবে ছাউনি দিয়ে তিনি এ চারা জন্মান। তিনি জানান, শীতকালে যারা আগাম বেগুন উৎপাদন করতে চান, তারা তার কাছ থেকে এ চারা কিনে নেন।
কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার ১২টি উপজেলায় প্রায় কম বেশি সারা বছরই সবজি চাষ হয়। প্রতি হেক্টরে ১৯ টন সবজি উৎপাদনের আশা করছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তারা। কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জেলায় প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে। দিন যাচ্ছে আর আগাম জাতের সবজি চাষ বাড়ছে। প্রতি হেক্টরে ১৯ টন ফলন ধরা হয়েছে। ভালো ফলনের আশায় এবারও সবজি চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।