Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

অনিয়মই যেখানে নিয়ম

রাঙ্গুনিয়া ভূমি অফিস

নুরুল আবছার চেীধুরী রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার তৃণমুল ভূমি অফিসগুলিতে চলছে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম। পোমরার কাউখালী, শীলক, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়ার তাজ্জের হাট ও সদর ভূমি অফিসে অনিয়মের এখন নিয়ম। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ভূমি মালিকরা । সরকার জমি বেচা-কেনায় হালসন খাজনার দাখিলা ও নামজারি খতিয়ান বাধ্যতামূলক করার পর থেকে মূলত এ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে জানা যায়, অধিকাংশ সময়ে ভূমি কর্মকর্তারা অনুপস্থিত থাকেন। স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত তাজ্জের হাটে ভূমি অফিসে গেলে দেখা যায়, খাজনা আদায়ের রশিদ বই সামনে অফিসে ভূমি সহযোগী ও স্টাফরা বসে আছেন। তাদের সামনে খাজনার বালাম বইয়ের স্তুপ। আগত ভূমি মালিকদের হাত থেকে খতিয়ানের কপি নিয়ে সেসব বালাম বই তার সামনে রাখছেন অফিস কর্মচারিরা। তারা ভূমি মালিকদের হাতে খতিয়ানের কপি আছে তাদের কাছ থেকে ৫০ টাকা আর যাদের জন্যে খতিয়ানের বই বের করতে হয় তাদের কাছ থেকে ১শ’ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। সরকার বাড়ি ও দোকান ব্যতিত অন্যান্য শ্রেণীর জমির জন্যে খাজনা মওকুফ করেছেন। ফলে প্রতি খতিয়ানে সর্বনিম্ন ১০ টাকা করে খাজনার রশিদ কেটে দিচ্ছেন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা। ভূমি মালিকদের হাতে ১০ টাকার খাজনার রশিদ প্রদান করা হলেও তাদের কাছ থেকে উক্ত কর্মকর্তা নিচ্ছেন ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা করে। পুরাতন যারা আছেন তারা এটাকেই নিয়মে ধরে দাবিকৃত অর্থ দিয়ে সরে পড়ছেন। আর নতুন কেউ এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার হাত থেকে কৌশলে রশিদ নিয়ে রেখে দেয় তারা। পরে শত অনুরোধেও সে রশিদ আর মিলে না।
এদিকে খতিয়ানে বাড়ি আর দোকান শ্রেণি থাকলেই ভূমি কর্মকর্তা ও স্টাফদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। ভূমি মালিকের অংশ যত শতাংশই হোক খতিয়ানে লিপিকৃত পুরো জমির খাজনাই তাকে আদায় করতে হচ্ছে। আর এ জন্যে তাকে গুণতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। খাজনা দিতে আসা মো: রফিক উদ্দিন, মানিক দাশ নামের ব্যক্তিরা জানান, তারা পৈত্রিক ৪-৩ শতাংশ বাড়ি ভিটার খাজনা দিতে এসেছিলেন । তখন তাদের কাছে অতিরিক্ত টাকা দাবি করায় বাড়তি টাকা না থাকায় ফিরে যান। খাজনা দিতে আসা কয়েকজন ভ‚মি মালিক জানান, তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই ১০ টাকা খাজনার রশিদের বিপরীতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
জানা যায়, দাগ ভাঙানোর জন্যে প্রতিটি দাগে নেন ৫০ টাকা। এসব ছাড়া এ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্য কাজটি হচ্ছে নামজারী খতিয়ান সৃজনের অর্ডার নেয়া। গ্রামের সহজ সরল ভূমি মালিকরা নামজারি নামের যাঁতাকলে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়ছেন। এমনিতেই জমির মারপ্যাঁচ তারা খুব একটা বোঝেন না। তার উপর জমা খারিজ করে নিজের নামে নামজারি খতিয়ান সৃজন করা যেন মরার উপর খরার ঘাঁ।
ভূক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি সাধারণ নামজারির জন্যে একজন ভ‚মি মালিক থেকে নেয়া হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এর বাইরে দুই বা ততোধিক দলিল হলে কিংবা জমির পরিমাণ ১একরের চেয়ে বেশী হলে দলিল কিংবা জমির পরিমাণ অনুযায়ী টাকার পরিমাণও দ্বিগুণ থেকে কোন কোন সময় ৪ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৭৫ সালে রেজিস্ট্রি হওয়া দলিল হলে তো আরো বিপদ। সাল অনুযায়ী সে দাবী ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়। টাকা দেয়ার পরও ভূমি মালিকরা সঠিক সময়ে খতিয়ান ফেরত পাচ্ছেন না। এইসব অভিযোগের ব্যাপারে তাজ্জের হাটের ভূমি অফিসের কর্মকর্তা সাথে কথা বললে, তিনি জানান অফিসের প্রয়োজনীয় কাজে বাইরে থাকলে হয়তো অনুপস্থিত হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বিকার করেন এবং তিনি বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে সুন্দরভাবে অফিস পরিচালিত হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ