Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপুর বদলে যাওয়া

প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রু মা ন হা ফি জ
বরাবরের মতো এবারো পরীক্ষায় প্রথম হয় শরীফ। আর হবেই না বা কেনো। পড়ালেখায় তার সাথে ক্লাসের অন্য কারো তুলনা নেই। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শরীফ। দাদার রেখে যাওয়া কিছু জমি আর বাবার ছোট্ট একটা মুদি দোকানের ওপর ভর করেই কোনমতে চলছে তাদের জীবন। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে শরীফকে নিয়ে অনেক আশা-ভরসা পিতামাতার। সে আশাটুকু জিইয়ে রেখে চলেছে শরীফ।
তবে একটি সমস্যা হচ্ছে অপু! সে কিনা সবসময় শরীফের সাথে হিংসা করতে থাকে। অপু শরীফেরই ক্লাসমেট।
অপু ক্লাসের সবার কাছে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিল যে, সে এবারের বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম হবেই। তবে এই চেষ্টাটি অপু অনেক দিন ধরে করে আসছিল। কিন্তু সে কখনো সফল হতে পারেনি। অপু উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার পিতা এই এলাকার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। যার ফলে তাদের ওপর কথা বলার সাহস কেউ রাখেনি। অপু চেষ্টা করছিল কিন্তু সফল হতে পারেনি। কারণ শরীফ হলো প্রকৃত মেধাবী ছাত্র। তার সাথে পেরে উঠা সবার পক্ষে সম্ভব নয়।
এবারের পরীক্ষায়ও যখন শরীফের সাথে পারলো না। তখন অপু তার হিংসাত্মক কর্মকা- আরেকটু বাড়িয়ে দিলো। অপু তার মতো করে আরো কয়েকজন নিয়ে শরীফের সাথে দুর্ব্যবহার করতে থাকে। ক্লাসের মধ্যে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে শরীফকে নিয়ে। শরীফের সাথে কাউকে সে মিশতেও দেয় না। অনেক ছাত্র অপুর ভয়ে শরীফের সাথে মিশতে চায় না। যে মিশবে তার সাথেও খারাপ ব্যবহার করবে একথা বলে দিয়েছে সবাইকে। স্কুলে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে এখন শরীফকে একা একা যেতে হয়। এদিকে অপুর মাত্রাতিরিক্ত হিংসাত্মক কর্মকা-ে শরীফকে অনেকটা মানসিক দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। কিন্তু সে এসব কারো কাছে প্রকাশ করে না। অনেকটা নীরবে সহ্য করতে থাকে।
একদা পাড়ার একটি খেলায় অপু শরীফকে খেলতে দেখে তার ভীষণ হিংসা হয়। সহ্য করতে না পেরে অপু তার সাথীদের নিয়ে খেলার মাঠে যায় এবং সেখানে খেলা বন্ধ করতে বলে। খেলায় মগ্ন থাকায় অপুর কথাটি কেউ লক্ষ করেনি। কিছুক্ষণ পর অপু তার সাথীদের নিয়ে খেলার মাঠে প্রবেশ করে খেলা বন্ধ করে। সবাইকে ডেকে এনে অপু কাউকে কিছু না বলেই শরীফের সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে। কোন কথা না বলে শরীফ সেখান থেকে চলে আসে। ভীষণ কষ্ট পায় শরীফ। তার চোখ দুটি তখন কান্নায় ভারি হয়ে টলমল করছিলো...!
শরীফ মনে মনে ভাবতে থাকে, এভাবে আর কত সহ্য করবো? অপুর এই খারাপ আচরণগুলো আর নীরবে সহ্য করলে চলবে না। দ্রুত এর একটা সমাধান হতে হবে। কারণ আমিতো কখনো তার সাথে এরূপ খারাপ আচরণ করিনি। তবে কেনো আমার সাথে অপুর এই হিংসাত্মক আচরণ?
সেদিন বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে অপুর আচরণের কথা খুলে বলে। মা সব কথা শুনে শরীফকে বললেন, বাবা আমরা ছোট মানুষ এসব বড়লোকদের সাথে আমাদের যায় না। তাই ওর বাড়িতে বিচার দিয়ে কোন লাভ হবে না। উল্টো আরো সমস্যা হতে পারে। আমি তোমার সাথে কাল স্কুলে যাব। এবং সব কথা আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে বলবো। আশা করি তিনি এর সুষ্ঠু বিচার করবেন।
পরদিন শরীফকে সাথে নিয়ে মা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলে শরীফের সাথে অপুর আচরণের সব কথা খুলে বললেন। সব কথা শুনে প্রধান শিক্ষক শরীফের মাকে আশ্বস্ত করলেন যে, তিনি এর দ্রুত একটা সমাধান করবেন। সব শেষে শরীফকে নিয়ে মা বেরিয়ে আসবেন এমন সময় অপু তার সাথীদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকের রুমের সামনে এসে হাজির। এদিকে শরীফ অপুদের দেখে ভয়ে কাঁপতেছিল। না জানি কি আবার করে ফেলে। প্রধান শিক্ষক তাদের ভেতরে আসার অনুমিত দিলে তারা সবাই রুমের মধ্যে প্রবেশ করে। তাদের আসার কারণ জানতে চাইলে অপু তখনি প্রধান শিক্ষকের পায়ে ধরে কান্না শুরু করে। শিক্ষক অপুকে তার কাছে এনে জানতে চাইলেন কি হয়েছে। তখন অপু কান্না জড়িত কণ্ঠে বলতে থাকে- আমাকে ক্ষমা করুন স্যার, আমি যা করেছি শরীফের সাথে সব ভুল করেছি। আমি বুঝতে পারিনি, আমার ভুল হয়ে গেছে। এই বলে সে কাঁদতে থাকে......
স্যার তখন অপুকে বললেন, হ্যাঁ আমি বুঝতে পেরেছি। এর জন্য এতো কান্নার কি আছে। ভুল তো তোমাদের হবেই। আর তুমি নিজেই যখন নিজের ভুলের কথা স্বীকার করছো। এখানে আবার শাস্তির কি আছে। এখন থেকে তোমরা দু’জন একে অপরের ভাই। কখনো কেউ কারো সাথে খারাপ আচরণ করবে না। আর হ্যাঁ পড়ালেখায় একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করবে, তবে এক্ষেত্রে কারো সাথে হিংসাত্মক আচরণ করা যাবে না।
কিছুক্ষণের জন্য কল্পনার জগতে প্রবেশ করে শরীফ। অপু কি সত্যিই আমার সাথে আর কখনো হিংসাত্মক আচরণ করবে না? ঠিক তখনি অপু শরীফকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। অবাক বিস্ময়ে কেবল অপুর দিকে তাকিয়ে থাকে শরীফ.....



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অপুর বদলে যাওয়া

২৫ এপ্রিল, ২০১৬
আরও পড়ুন