পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাঠকদের কাছে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে(এস কে সিনহা) পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অস্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারী তিনি বাংলাদেশে প্রথম হিন্দু ধর্মাবলম্বী হিসেবে প্রধান বিচারপতি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ৮১ দিন আগেই তাকে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে রহস্যজনকভাবে বিদায় নিতে হয়। একটি রায়ের পর্যবেক্ষণের মন্তব্যকে ইস্যু করে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা দীর্ঘদিন মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছেন। তাকে নিয়ে দেশে ঘটেছে অনেক ঘটনা-রটনা। তিনি বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর হঠাৎ করে এক মাসের ছুটি নিয়ে তাঁর অস্ট্রেলিয়া গমন; দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় তাকে নিয়ে ফলাও করে ‘খবর’ প্রচার এবং তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা সমালোচনার মধ্যেই ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর অষ্ট্রেলিয়া থেকে উড়ে এসে সিংগাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। তাঁর এই পদত্যাগের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রের দুই স্তম্ভ নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের সৃষ্ট অবাঞ্ছিত বিতর্কের অবসান ঘটে। বিদেশে বসবাসরত এসকে সিনহা বাংলাদেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র নিয়ে লিখেছেন ‘এ ব্রোকেন ড্রিম রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসি’ বই। বইয়ের শিরোনাম বাংলা তরজমা হলো ‘আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের স্বপ্নভঙ্গ’। বইয়ের ভুমিকায় যা লিখেছেন তারই হুবহু অনুবাদ ইনকিলাব পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
বিচার বিভাগ একটি রাষ্ট্রের অত্যাবশ্যক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের অন্যতম রাষ্ট্রনীতি হচ্ছে গণতন্ত্র। সংবিধানে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৯৭৪ সাল থেকে বালাদেশের বিচার বিভাগের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সুবাদে আমার সকল পরিবর্তন ও প্রতিবন্ধকতা দেখার সুযোগ হয়। আমি দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সিলেটের এক নিম্ন আদালতের আইনজীবী থেকে দেশের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় অবস্থান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে উন্নীত হই। কিন্তু বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে এক ঐতিহাসিক রায় প্রদানের পর ২০১৭ সালে আমি পদত্যাগ করতে বাধ্য হই এবং বর্তমান সরকার কর্তৃক নির্বাসিত হই। সুশাসনের অবস্থা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রবণতা বিষয়ে পর্যবেক্ষণসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনের সর্বসম্মত ঐ রায় দেশের নাগরিক ও সুশীল সমাজের দ্বারা প্রশংসিত হয় এবং দেশ ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ মনোযোগ আকর্ষণ করে। কিন্তু তা রুষ্ট করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের।
এ প্রেক্ষিতে একের পর এক দুর্ভাগ্যজনক ও নজিরবিহীন ঘটনা ঘটতে থাকে যা নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এর পরিণতিতে আমার বিরুদ্ধে অন্যায্য ব্যবস্থা গৃহীত হয়। এর শুরু ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যখন বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ বিচারকদের ইমপিচ করার সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা দিয়ে সংবিধান সংশোধন করে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল (এসজেসি) নামে অভিহিত বিচারকদের নিয়ে গঠিত উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি কর্তৃক বিচারকদের অপসারণের বিধি বাতিল করে। সংবিধানের বিধি মোতাবেক এসজেসি অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থন আনুমোদন করেছিল। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে এ প্রক্রিয়ার লক্ষ্য ছিল বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নাগরিকদের চেয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সেবা করা থেকে রক্ষা করা। ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের এক বিশেষ বেঞ্চ এ সংশোধনীকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। এ রায়ের পরপরই সংসদ সদস্যরা তাদের আইন বাতিলের জন্য বিচারকদের সমালোচনা করেন এবং বিচার বিভাগের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করতে থাকেন। যাহোক, রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপিল করে। ৭ সদস্যের পূর্ণ আপিল বেঞ্চে তার শুনানি হয়। আমি সে বেঞ্চের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে সে আপিল খারিজ ও হাইকোর্টের রায় সমুন্নত রাখে। পর্যবেক্ষণসহ সর্বসম্মত রায়ের পূর্ণ বিবরণ ২০১৭ সালের ১ আগস্ট প্রকাশ করা হয়। অ্যাপিলেট বিভাগের সিদ্ধান্তের পর ১৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রায় বাতিলের জন্য আইনি পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়ে সংসদ একটি প্রস্তাব পাশ করে। সংসদের বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও তার দলের অন্যান্য সদস্যগণ এবং মন্ত্রীরা আমার তীব্র সমালোচনা করেন। আইনমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে অসদাচারণ ও দুর্নীতির কথিত অভিযোগ আনেন। আমি আমার সরকারি বাসভবনে আটকাপড়া অবস্থায় থাকি এবং আইনজীবী ও বিচারকদের আমার সাথে সাক্ষাত করতে বাধা দেয়া হয়। সংবাদমাধ্যমকে বলা হয় যে আমি অসুস্থ ও মেডিক্যাল লিভ চেয়েছি। বিভিন্ন মন্ত্রী বলেন যে আমি মেডিক্যাল লিভে বাইরে যাব। ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর আমি যখন দেশত্যাগ করতে বাধ্য হই তখন আমি এক প্রকাশ্য বিবৃতিতে বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করি যে আমি অসুস্থও নই কিংবা চিরকালের জন্য দেশ ছেড়ে চলেও যাচ্ছি না। আমি আশা করেছিলাম যে আমার শারীরিক অনুপস্থিতি সে সাথে আদালতের নিয়মিত ছুটি পরিস্থিতিকে শান্ত করতে সহায়ক হবে ও শুভবুদ্ধির বিরাজ করবে। সরকার রায়ের মর্মার্থ উপলব্ধি করবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখবে যা দেশও জাতির জন্য কল্যাণকর। শেষ পর্যন্ত ডাইরক্টরেক্ট জেনারেল অব দি ডিফেন্স ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিডিএফআই) নামে অভিহিত দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা আমার পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি ভীতি প্রদর্শন ও হুমকির মুখে আমি বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পেশ করি।
( লেখক বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।