Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আ.লীগকে ছাড় দেবে না শরিকরা

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

নিজেদের বিজয়ী আসনে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের কোন রকম ছাড় দেবে জোট শরিক এমপিরা। এছাড়া যেসব আসনে শরিক এমপি প্রার্থীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছে সেসব আসনেও ছাড় না দিতে বদ্ধ পরিকর দলগুলো। আর আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশ না নেয় তাহলে চাহিদামত আসন ছাড় না দিলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে শরিকদের রেশারেশি হতে পারেও বলে জানা গেছে। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, শরিকদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ বা জটিলতা নির্বাচনের আগেই নিরসন করা হবে।
সূত্র জানায়, গত দশ বছরে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব নিয়ে দলগুলোর মাঝে ক্ষোভ রয়েছে। এবার তা বহি:প্রকাশ ঘটতে পারে। আওয়ামী লীগ বলেছে, শরিকদের জন্য ৬৫ থেকে ৭০টি আসন ছাড় দেয়া হবে। তবে দলগুলো মনে করছে, জাতীয় পার্টিই পাবে ৫০টি আসন। বাকি ১৫ থকে ২০টি শরিকদের জন্য। যা কোন ভাবেই মানতে পারছে না শরিকরা। এতে করে অভ্যন্তরীন ক্ষোভ বিরাজ করছে তাদের মাঝে। তাই হার্ড লাইনে যাওয়ার আগে সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে দলগুলো।
১৪ দলীয় জোটের ৫জন শীর্ষ নেতা বলেন, আগামী নির্বাচনেও বিএনপি আসা না আসা নিয়ে জটিলতা আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত¡বধানে দলটি নির্বাচনে আসলেও ৩৫টির বেশি আসন পাবে না। এছাড়া নির্বাচনী পরিবেশ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই এবার নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও ভারসাম্যপূর্ণ করতে হলে বেশি আসনে শরিকদের জোটের মনোনয়ন দিতে হবে। এছাড়া নিজ প্রতিকীকে নির্বাচন করার জন্য শরিক এমপি প্রার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এদিকে জোট বড় হলে নির্বাচনী জোটে আরো দল যুক্ত হলে বর্তমান শরিক দলগুলো কম ছাড় পাবার শঙ্কা করছে। এক্ষেত্রে দলগুলোর অবস্থান, জোট বড় অথবা ছোট হোক তাদের চাহিদামত আসন নিয়ে ছাড় দেবেন না। আর চাহিদার সঙ্গে প্রাপ্তির ব্যবধান বেশি যেন বেশি না হয় সে ব্যাপারেও সচেষ্ট হবেন তারা।
সূত্র জানায়, শরিকদের জয়ী হওয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এলাকাতে নানাভাবে এমপিদের ত্রু টি তুলে ধরছেন। আগামী নির্বাচনে শরিকদের ছাড় দেবেন না বলেও অনেকে ঘোষণা করছেন। প্রয়োজনে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করার কথাও বলছেন অনেক প্রার্থী। স্থানীয় আওয়ামী লীগের অসহযোগীতার কারণে এখনই নির্বাচনে পরাজিত হবার শঙ্কা কাজ করছে শরিক এমপিদের মধ্যে। সেজন্য জয়ী হওয়া আসনে বর্তমান এমপিরা নির্বাচন করার বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।
আর যে সব আসনে এমপি প্রার্থীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছে সেগুলোতে জোটের মনোনয়ন চাওয়া হবে। যদি জোটের মনোনয়ন না পাওয়া যায় তাহলে নিজ দলের প্রতিকেই প্রার্থীরা নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বর্তমান সংসদে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির নির্বাচিত এমপি সংখ্যা ৩৪, জাসদের ৫ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ৬ জন, এর মধ্যে নিজ প্রতীকে তিনজন। তরিকত ফেডারেশনের ২জন। জাতীয় পার্টি (জেপি) দুই জন। এই আসনগুলো ঠিক রেখেই আগামী নির্বাচনে আরও আসন দাবি করবে শরিকরা। এমন প্রস্তুতি নিয়ে চললে দেন দরবার। কিন্তু এই সব আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চাচ্ছে শরিকদের জোটের মনোনয়ন না দিয়ে তাদের দিতে।
এ নিয়ে উভয়ের মাঝে স্থানীয় পর্যায়ে চলছে শীতল যুদ্ধ। অনেক স্থানে শরিক এমপিরা খুবই নাজুক অবস্থানেও আছে। কিছু আসনের এমপিরা শুধু নামেই আছে। এমনাবস্থাতেও শরিকরা এসব আসনে ছাড় দিতে চায় না আওয়ামী লীগকে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দারস্তও হয়েছেন একাধিক দলের সভাপতি। ১৪ দলের বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়।
মনোনয়ন নিয়ে টানাপোড়নের কারণে কয়েক মাস আগে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি পেয়েছেন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল। তিনি লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি। দায়িত্ব থেকে অব্যহতি পাবার পর তিনি দাবি করেছিলেন তার বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের সভাপতিকে টাকা দিয়ে তাকে বহিষ্কার করিয়েছেন। সম্প্রতি ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক এলায়েন্স নামে জোট প্রতিষ্ঠিত করে তিনি আওয়ামী লীগের সুনজরে আসার চেষ্টা করছেন। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে লড়ার ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী।
এছাড়া আরও কয়েকজন এমপি নিজ নিজ আসন থেকে আবারও জোটের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনের কথা জানান। এদিকে জোটের সে সকল এমপি প্রার্থীদের অবস্থান ভালো তারা চাচ্ছেন জোটের মনোনয়ন পেতে। আর যদি জোটের মনোনয়ন নাও পান তাহলে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে।
তাদের মতে, স্থানীয় সেসব এমপির অবস্থা এতই নাজুক যে তারা নির্বাচনে পরাজিত হবে। এক্ষেত্রে জোটের মনোনয়ন পেলে বা নিজ প্রতীকে নির্বাচন করলেও তারা জয় পাবেন। সেজন্য তারা এবার ছাড় দিতে চাচ্ছেন না।
দিনাজপুর-১ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির এমপি প্রার্থী দিনাজপুর সভাপতি আব্দুল হক ইনকিলাবকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের এমপি মনোরঞ্জনশীল গোপালকে দলের নেতাকর্মীরাই ভোব দেবে না।
ঢাকা-৫ আসনে জাসদের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী কোন্দলের কারণে দলীয় প্রার্থী যেই হোক সে পরাজিত হবে। তাই নৌকার জয় পেতে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনোননিত করতে হবে। এ আসনে দলীয় সভাপতি হাসানুল হক ইনু প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছাড় চেয়েছেন।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারও তার আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রে। এর আগে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুও কুষ্টিয়ায় এক বক্তব্যে বলেছেন, এক টাকার মধ্যে আওয়ামী লীগ যদি ৫০ পয়সা হয় তাহলে অন্য সব দল ৫০ পয়সা। আর আওয়ামী লীগ যদি ৬০ পয়সা হয় তাহলে অন্যান্য দল ৪০ পয়সা। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে তাই অনেক হিসেবে নিকেশ করে কাজ করতে হবে।
এদিকে বাংদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সাম্যবাদী দলের দিলিপ বড়–য়া, বাসদের রেজাউর রশিদ খান, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের অসিত বরণ রায়, গণআজাদী লীগ, গণতন্ত্রী পার্টির মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪ দলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, আমাদের কারণে আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা সর্বপরি। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমাদের চাপিয়ে রাখতে চাইছে। এটা ঠিক না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্ণেল (অব.) ফারুক খান ইনকিলাবকে বলেন, পুরো পৃথিবীতেই জোটের রাজনীতি জটিল। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সকল সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ছোট দলগুলো বড় দলের কাছে ছাড় পায়। তবে বড় দল চায় না তারা সাবলম্বী হয়ে আলাদা হয়ে যাক। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ দিন জোটের রাজনীতিতে অভিজ্ঞ তাই জোট নিয়ে কোন সমস্যা হবে না বলেই মনে করি। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আ.লীগ

১২ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ