পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এক সময়ের তুখোড় ছাত্র নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি বর্তমান সময়ের আলোচিত রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি মনে করেন বর্তমানে দেশে এক পরিপূর্ণঅগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসন চলছে। এর থেকে মুক্তি পেতে জাতীয় ঐক্য অর্থাৎ জনগণের বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন। সে লক্ষে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম মিলে প্রাথমিক ঐক্য গড়ে তুলেছেন। এই ঐক্যকে জনগণের বৃহত্তর ঐক্যে রূপদানের লক্ষেসরকার বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে চলছে আলোচনা। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য, আন্দোলন কর্মসূচী এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবের সাথে তাঁর কথা হয়। মাহমুদুর রহমান মান্নার এই একান্ত সাক্ষাৎকার পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-
ইনকিলাব : বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক মূল্যায়ন কিভাবে করবেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না : দেশে বর্তমানে এক চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক স্বেচ্চাচারি শাসন ব্যবস্থা বিরাজ করছে। বাক-ব্যক্তি, সংগঠন, মুদ্রণ, প্রকাশন, মিডিয়া কোন কিছুরই প্রকৃত স্বাধীনতা নেই। বিনা ওয়ারেন্টে, সাদা পোশাকে বেধরক গ্রেফতার চলছে। নতুন করে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে একদম পাড়া-গাঁয়ের নেতাকর্মীদেরও মামলার আসামী থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে না। মৃতব্যক্তি- বিদেশে অবস্থান করছেন এমন ব্যক্তি, অসুস্থ শয্যাশায়ী ব্যক্তির নামেও মামলা দেয়া হচ্ছে। এক কথায় নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি থাকলেও দেশে পরিপূর্ণ অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারি শাসন চলছে।
ইনকিলাব : এই অগণতান্ত্রিক-স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হতে যুক্তফ্রন্ট গণফোরাম মিলে নতুন জোট করেছেন। এরপর আপনারা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। জাতীয় ঐক্য গঠন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি কতদূর?
মাহমুদুর রহমান মান্না : স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ব্যাপকভাবে জনগণের ঐক্য হওয়া জরুরী। আমাদের যে জাতীয় ঐক্যের ডাক তার মূল বিষয় হচ্ছে জনগণের ঐক্য। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা ঐক্যে পৌঁছেছি। যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে তিনিও একত্রে আন্দোলন করতে সম্মত হয়েছেন। সে অর্থে বলা যায় আমাদের ঐক্য হয়ে গেছে। এর আনুষ্ঠানিক ঘোষনা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কয়েকটি বিষয়ে আমরা সবাই একমতে পৌঁছেছি। সেগুলো হলো তফসিল ঘোষনার আগে সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠন করতে হবে। নির্বাচনের আগে এবং পরে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এসব দাবি আদায়ে যেহেতু আমরা একমত পোষন করছি তাই বলতে পারেন আমাদের মধ্যে একটা ঐক্য হয়েই গেছে। এখন আমরা যেটা চাচ্ছি সেটা হলো একটা বৃহত্তর জনগণের ঐক্য। আমাদের আনুষ্ঠানিক ঘোষনার মধ্য দিয়ে সেটা হবে বলে মনে করছি।
ইনকিলাব : এর আনুষ্ঠানিক ঘোষনা কবে হবে?
মাহমুদুর রহমান মান্না : একদম দিনক্ষণতো বলা যাবে না। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনার জন্য কিছুটা সময় লাগবে। আমরা জনগণকে ডাক দিলাম আর জনগণ এস পড়বে এমনটাতো নয়। আমরা জনগণের জন্য কি করবো, দেশ কি ভাবে চলবে এসব প্রশ্নতো জনমনে তৈরী হবে। জনগণ বিএনপির শাসন দেখেছে, আওয়ামী লীগের শাসনও দেখছে। আওয়মী লীগ এবং বিএনপির শাসনের মধ্যে মাত্রগত হয়তো পার্থক্য ছিল কিন্তু চরিত্রগত কোন পার্থক্য ছিলনা। এখন আমাদের ডাকে জনগণ রাজপথে নেমে স্বৈরাচারকে বিতারিত করলে কি হবে, তারা কি পাবে? এর একটা স্পষ্ট রূপরেখা আমরা জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে চাই। আর তার জন্য কিছুটা সময়তো লাগবেই। তবে এ মাসের মধ্যেই আশা করি একটি চূড়ান্ত অবস্থানে আমরা পৌঁছতে পারবো।
ইনকিলাব : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে নিয়ে কি জাতীয় ঐক্য হচ্ছে?
মাহমুদুর রহমান মান্না : বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে ২০ দলের সঙ্গে নয় বিএনপির সাথে আলোচনা হয়েছে, হচ্ছে।
ইনকিলাব : আলোচনার অগ্রগতি কতটুকু?
মাহমুদুর রহমান মান্না : আগেই বলেছি, নূন্যতম কয়েকটি বিষয়ে যেমন, সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার, নির্বাচন কমিশনের পুর্নগঠন এসব বিষয়ে আমাদের মধ্যে ঐক্য হয়ে গেছে। তবে বিএনপির সাথে আমরা বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে আরও কিছু বিষয়ে ঐক্যে পৌঁছাতে চাই। সেগুলো শাসনতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক। যেমন ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়টি আছে। কেউ যেন ক্ষমতায় গিয়ে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোরে স্বৈরাচার হয়ে উঠতে না পারে। এক কথায় প্রকৃত অর্থে একটা জনগণের সরকার কিভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় সে লক্ষে আমরা মতঐক্যে পৌঁছাতে চাই। এসব বিষয়েও আলোচনা হয়েছে এবং অনেক অগ্রগতিও হয়েছে।
ইনকিলাব : তার মানে আপনারা একটা জাতীয় ঐক্যমতের নির্বাচনী ইশতেহার বা শাসনতান্ত্রিক রূপরেখা প্রনয়ন করবেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না ঃ হ্যাঁ অনেকটা তাই। এটা শুধু নির্বাচনী ইশতেহার নয়, এটা বৃহত্তর জনঐক্যের জাতীয় সনদ বলা যায়। বর্তমানে দেশে কোন সুশাসন নেই। দুর্নীতি সর্বক্ষেত্রে। পত্রিকায় দেখলাম বিশ্বের মধ্যে ধনী লোকের বৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশ এক নম্বরে রয়েছে। অর্থাৎ দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে। বাড়ছে বেকারতের সংখ্যা। অর্থমন্ত্রী নিজে বলেছেন এটা ‘জবলেস’অর্থনীতি। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে নামছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সেবা আমি সেবা শব্দটি বলছি, এই সেবা কিভাবেনিশ্চিত করা যায় এসব বিষয়ে আমরা লিখিত ইশতেহার নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবো।
ইনকিলাব : কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের চেয়ারম্যান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম আপনাদের যুক্তফ্রন্টে ছিলেন কি? তাঁর বর্তমান অবস্থা কি?
মাহমুদুর রহমান মান্না : বঙ্গ কাদের সিদ্দিকী আমাদের যুক্ত ফ্রন্টে কখনো ছিলেন না। প্রথম দিকে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ঐক্য প্রক্রিয়ার আলোচনায় তিনিও এসেছিলেন। ড. কামাল হোসেন না আসায় তিনিও আসেন নি। এখন ড. কামাল হোসেন আমাদের সাথে এসেছেন তিনিও হয়তো আসতে পারেন।
ইনকিলাব : গণফোরামের ডাকে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর জনসভার আহবান করা হয়েছে। ঐ জনসভায় কি জাতীয় ঐক্যের ঘোষনা আসতে পারে?
মাহমুদুর রহমান মান্না : আসলে আমাদের মধ্যে প্রাথমিক ঐক্য হয়ে গেছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষনার বিষয়টি আরও কিছু বিষয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ইনকিলাব : ক্ষমতাসীনরা বলছেন যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের কোন জনভিত্তি নেই। তাদের জোটকে আমলে নেয়ার কোন কারণ নেই। এ জোটের রেজাল্ট হলো ০+০+০+০=০। আপনার অভিমত কি?
মাহমুদুর রহমান মান্না : আসলে এ জোটের যদি কোন গুরুত্ব নাই থাকবে তাহলে এত আলোচনা সমালোচনা কেন? তার মানে এর কিছু না কিছু গুরুত্বতো ইতোমধ্যে তৈরী হয়েছে। আশাকরি সময়মতো এর গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পাবে।
ইনকিলাব : সরকারতো খুব আত্মবিশ্বাসী। সরকার বলছে তাদের উন্নয়নের পক্ষে জনগণ আছে। তাই সরকার কোন কিছুতে ছাড় দিতে রাজি নয়। এক্ষেত্রে আপনাদের আন্দোলন কতটা সফল হবে বলে মনে করেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না : আমরা চাই একটি বৃহৎ ঐক্যের মাধ্যমে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে। জনগণের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করতে। আন্দোলন শুরু হলে দেখা যাবে সরকার জনগণের দাবি কতটা উপেক্ষা করতে পারে।
ইনকিলাব : আপনাদের আন্দোলনের মুখে সরকার যদি কোন দাবি মেনে না নেয়। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি না বদলায় তাহলে পরিণতি কি হবে?
মাহমুদুর রহমান মান্না : যে কোন পরিস্থিতে আন্দোলন চালিয়ে যাব। নির্বাচনের কথা ভাববো। নির্বাচনকেও আমরা দাবি আদায়ের বিকল্প হিসেবে চিন্তা করবো। এক কথায় জনগণকে সাথে নিয়েই আমরা সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করবো।
ইনকিলাব : আপনারা অহিংস ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলছেন। তবে আন্দোলন শুরু হলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হতে পারে। আন্দোলকে ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য তৃতীয় পক্ষের কেউ সহিংসতা করে আপনাদের উপর দোষ চাপাতে পারে। আপনাদেরকে আন্দোলনের নামে বিশৃংখলাকারী, সন্ত্রাসী চিহ্নিত করতে পারে।
মাহমুদুর রহমান মান্না : এটা সম্ভব হবে না। জনগণ সাথে থাকলে এসব কিছুই করতে পারবে না। গান্ধিকে কেউ সন্ত্রসী বলে না। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ বা অন্য কেউ সহিংসতা করলে তা জনগণ দেখবে এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করবে।
ইনকিলাব : তৃতীয় কোন শক্তির উত্থান.......
মাহমুদুর রহমান মান্না : তৃতীয় কোন শক্তি বলতে আমরা আমাদেরকেই বুঝি। এর বাইরে আমরা অন্য কাইকে বুঝি না।
ইনকিলাব : বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে কি কোন আলোচনা হয়েছে বা হচ্ছে?
মাহমুদুর রহমান মান্না : না। আমরা দেশের জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। বিদেশীদের সাথে এ নিয়ে আলোচনার কোন প্রয়োজন মনে করিনা।
ইনকিলাব : বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা খুবই বড় ফ্যাক্টর বলে অনেকে মনে করেন। এর মূল্যায়ন কি ভাবে করবেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না : ভারত বলছে আমাদের অভ্যন্তরীন রাজনীতির বিষয়ে তারা নাকগলাবে না। তারা নিরপেক্ষ থাকবে। আমরা তাদের এ কথায় বিশ্বাস এবং আস্থা রাখতে চাই। তারপরও আমি বলবো, আমরা যদি ঠিক থাকি, দেশের জনগণ যদি জাগে তাহলে শুধু ভারত নয়, বিশ্বের কোন শক্তি কোন কিছু করতে পারবে না।
ইনকিলাব : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ইনকিলাব : আপনাকে এবং ইনকিলাবের সকল পাঠককে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।