Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২৫ দফা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে সালাউদ্দিন

প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশ (বাফুফে) নির্বাচনকে সমানে রেখে নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করলো বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদ। তারা ২৫ দফা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামলো। আগামী ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে বাফুফে নির্বাচন। নির্বাচনী আমেজে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ দেশের ফুটবলাঙ্গনে। কাজী সালাউদ্দিন নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদ ও কামরুল আশরাফ খান এমপি’র ‘বাঁচাও ফুটবল’ প্যানেল তাদের কর্মকাÐ শুরু করায় নির্বাচনী হওয়া এখন বেশ গরম। দুই প্যানেলেই রয়েছেন দেশবরেণ্য সাবেক তারকা ফুটবলারসহ সংগঠকরা। এছাড়া এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বেশ ক’জন হেভীওয়েট ফুটবল সংগঠক। যার ফলে একটি জমজমাট নির্বাচনী লড়াই আশা করছেন দেশের ফুটবলবোদ্ধারা। বাফুফে নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন। তিনি পূর্ণ প্যানেল নিয়েই মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে গতকাল রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ইশতেহার ঘোষণা করেছে কাজী সালাউদ্দিন নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদ। ইশতেহারে ২৫টি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে সম্মিলিত পরিষদ প্যানেল প্রধান কাজী সালাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন না। তবে অনুষ্ঠান শেষে তিনি ঠিকই প্যানেলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মতিঝিল ক্লাব পাড়ায় নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েন। অনুষ্ঠানে বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী কাজী নাবিল আহমেদ এমপি, সামশুল হক চৌধুরী এমপি, বাদল রায়, মহিউদ্দিন মহি ও সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশীদসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সালাউদ্দিনের অনুপস্থিতিতে সম্মিলিত পরিষদের নির্বাচনী ইশতেহার পাঠ করেন প্যানেল নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও চট্টগ্রাম আবাহনীর ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান তরফদার মো. রুহুল আমিন। লিখিত বক্তব্যে তিনি তার প্যানেল নির্বাচনে জয়ী হলে আগামী চার বছর কি কি কাজ করবে তার ফিরিস্তিই শুধু তুলে ধরেনি, সঙ্গে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিটি গত আট বছর বাফুফের দায়িত্বকালে দেশের ফুটবল উন্নয়নের কি কি কাজ করেছে সে সম্পর্কেও আলোকপাত করেন। এখানে তুলে ধরা হয় গেল আট বছর সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে বাফুফেতে যেসব উন্নয়ন কাজ হয়েছে তার ২৪টি পয়েন্ট। কিন্তু সেখানে কিছু ভুল তথ্যও দিয়েছে সম্মিলিত পরিষদ। যেমন দেশব্যাপী উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে ইতিহাস সৃষ্টির যে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছে, আদতে তা আয়োজনই করতে পারেনি তারা। একই সঙ্গে গত আট বছর ৬ বার বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের যে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে সেটাও ভুল। কারণ বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে বাফুফের কোন ভ‚মিকাই নেই।
সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদ আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হলে ইশতেহারে ঘোষিত সবগুলো কাজ আগামী চার বছরের মধ্যে শেষ করবে বলে প্রতিশ্রæতি দেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী তরফদার রুহুল আমিন। প্রতিশ্রæতির ফুলঝুড়ি ছোটান ফাঁকা মাঠে গোল করা বিনা ভোটে বিজয়ী সালাউদ্দিন প্যানেলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীও। ইশতেহারে জাতীয় দলের বিষয়টি খুব বেশি প্রাধান্য না পেলেও তৃণমূল থেকে ফুটবলার তৈরির বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারে যে ২৫টি পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছে তার অধিকাংশ বাস্তবায়নেই বিপুল অর্থের প্রয়োজন হবে। সরকারী বাজেটে ফুটবলকে যে পরিমান অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তা দিয়ে ঘোষিত প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব হবে? এ নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে। তবে সালাম মুর্শেদী জানান, সরকারী বাজেটকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করেই ইশতেহারে ঘোষিত প্রতিশ্রæতিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। নির্বাচিত হলে যদি প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে বেশী অর্থের প্রয়োজন হয় তাহলে তার যোগান দেবে সালাউদ্দিন নেতৃত্বাধীন কমিটি।

সম্মিলিত পরিষদের ২৫ দফা
১. জাতীয় দলের সাফল্যের প্রয়োজনে দেশের সকল ক্লাবকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা ছাড়াও কোচ দিয়ে অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬, ১৮ দল গঠন করে নিয়মিত টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে।
২. জাতীয় দলের পাইপলাইনে পর্যাপ্ত খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য সিলেটে ফুটবল একাডেমিকে বাফুফের সঙ্গে প্রাইভেট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে আন্তর্জাতিকমানের ফুটবল একাডেমি গড়ে তোলা হবে। যার কার্যক্রম শুরু হবে আগামী জুন-জুলাই ২০১৬ সালে।
৩. বাফুফে ভবনে আন্তর্জাতিকমানের ফিটনেস সেন্টার গড়ে তোলা হবে। যা জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
৪. প্রতিটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে একটি করে টার্ফ ফিফার সহায়তায় স্থাপন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৫. ফুটবল বাংলাদেশ আনাচে-কানাছে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সকল জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজন মত আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। যাতে করে ডিএফএ গুলো প্রয়োজন মতো খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত লিগ পরিচালনা করতে পারে।
৬. এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুপার লিগের (বিএসএল) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল ডিএফএ কে প্রতিবছর ২ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। যা দিয়ে প্রতিটি ডিএফএকে পর্যায়ক্রমে কোচিং সেন্টার গড়ে তোলার সহায়তা করা হবে।
৭. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় খেলোয়াড় তৈরির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে সকল বিভাগীয় শহরসহ সকল জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে সরকারী এবং বেসরকারী উদ্যোগে ফুটবল একাডেমি গড়ে তোলা হবে। যার ফলে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রকৃত, দক্ষ খেলোয়াড় তৈরি করা হবে। যা বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নতিতে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখবে।
৮. এই সমস্ত ফুটবল একাডেমি পর্যায়ক্রমে ইউরোপ ও ল্যাতিন আমেরিকায় বিভিন্ন ফুটবল একাডেমির সঙ্গে টেকনিক্যাল টাইআপ করার ব্যবস্থা করা হবে।
৯. সরকারী অথবা বেরসকারী পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে সারা দেশ থেকে একটি নিরপেক্ষ কমিটির মাধ্যমে ১০ থেকে ১১ বছরের ১৫০ জন খেলোয়াড় বাছাই করা হবে। এ সমস্ত খেলোয়াড়দের এক বছর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়ে তার মধ্য থেকে সেরা ৪০ জন খেলোয়াড়কে ইউরোপ ও ল্যাতিন আমেরিকার ফুটবল একাডেমিতে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হবে। যেখানে তারা লেখাপড়াসহ নিয়মিত ফুটবল প্রশিক্ষণ নিয়ে পরবর্তীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের যে কোনো ক্লাবে খেলার উপযোগী হয়ে গড়ে ওঠবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবল বিশ্বমানচিত্রে একটি ভালো অবস্থানে পৌঁছবে।
১০. জাতীয় দলের জন্য আন্তর্জাতিকমান সম্পন্ন কোচ, গোলরক্ষক কোচ, ফিটনেস ইন্সট্রাক্টর, নিউট্রেশন এক্সপার্ট নিয়োগ দেয়া হবে।
১১. জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ (শেরে বাংলা কাপ) জেলা, বিশ্ববিদ্যালয়, সম্মিলিত সামরিক বাহিনীসমূহের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পুনরায় চালু করা হবে। সেই সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ (সোহরাওয়ার্দী কাপ) পুনরায় চালু করা হবে। জাতীয় ও যুব দলের খেলোয়াড়রা নিজ নিজ জেলার পক্ষে খেলার জন্য প্রয়োজনীয় বিধি রাকা হবে।
১২. নিয়মিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ এবং শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপসহ অন্যান্য টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে।
১৩. ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল লিগ (বিএসএল) নিয়মিতভাবে ৮টি বিভাগীয় শহরে দেশী ও বিদেশী (ইউরোপ ও ল্যাতিন আমেরিকা) খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। যা বাংলাদেশের দর্শকদের মাঠমুখী করাসহ খেলোয়াড় তৈরিতে ব্যাপক সহায়তা করবে। এই খেলাগুলো বিভাগীয় স্টেডিয়ামে হোম অ্যান্ড এওয়ে ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে।
১৪. ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল লিগ (বিএসএল) অনুষ্ঠানের জন্য বিভাগীয় স্টেডিয়ামগুলোকে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৫. আমাদের দেশে মাঠ সমস্যা প্রকট (বিশেষ করে ঢাকা জেলায়)। সরকার, ডিএসএ এবং ডিএফয়ের সমন্বয়ে বাফুফের মনিটরিং কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় প্রতিদ্ব›দ্বীতামূলক লিগ খেলার ব্যাপারে সহায়তা করা হবে।
১৬. বাফুফের সকল স্ট্যান্ডিং কমিটি, টুর্নামেন্ট কমিটিতে জেলা ও বিভাগের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। জেলার ফুটবল লিগের জন্য আর্থিক সহায়তাসহ মনিটরিং সেল থাকবে।
১৭. প্রতিটি বিভাগে বাফুফে লাইসেন্সধারী ফুটবল কোচ নিয়োজিত হবে। পার্বত্য অঞ্চলে পুরুষ ও নারী ফুটবল দল খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষ্যে দু’জন কোচ সার্বক্ষণিকের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে।
১৮. প্রতি বছর বাফুফে থেকে ১ লাখ ফুটবল সারাদেশে বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হবে। সঠিকভাবে বিতরণ ও তা ব্যবহƒত হচ্ছে কি না তার জন্য একটি মনিটরিং সেল থাকবে।
১৯. বাফুফে ভবনে সদস্য, ডেলিগেট, জেলা ও বিভাগীয় সংগঠকদের জন্য কক্ষ থাকবে।
২০. সকল জেলার ক্লাবগুলোর সমন্বয়ে ‘ক্লাব কাপ’ পুনরায় চালু করা হবে।
২১. সকল উপজেলা পর্যায়ে অন্তত একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট (ইউনিয়ন ভিত্তিক) আয়োজনের মাধ্যমে প্রতিভাবা খেলোয়াড় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
২২. বাংলাদেশের কোচদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান কোচ আনা হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে।
২৩. দেশের সকল রেফারিদেরকে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশী অভিজ্ঞ রেফারি ইনস্ট্রাক্টর আনা হবে।
২৪. ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ বছরে ৪-৫টি আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
২৫. জাতীয় দল, প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও কোচদের জন্য সম্মানীর ব্যবস্থা করা হবে ও খেলোয়াড়দের জন্য পুনরায় বীমা ব্যবস্থা চালু করা হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ২৫ দফা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে সালাউদ্দিন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ