পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম বন্দরের স¤প্রসারণ হতে যাচ্ছে। বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য অবশেষে ভূমি অধিগ্রহণের জট খুলেছে। বন্দোবস্তির জটিলতা পরিহার করে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিস্তীর্ণ ভূমি কিনে নেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) প্রতিবছর মুনাফালব্ধ নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়নে ভূমি অধিগ্রহনের ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে ভূমি ক্রয়ের প্রস্তুতি-প্রক্রিয়া গত সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে। ‘আগামীর বন্দর’ এবং ‘খোলা সমুদ্রবন্দর’ বা ‘ওপেন সী-পোর্ট’ হিসেবে বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে হাজার বছরের চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুণ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে সর্ববৃহৎ এই অবকাঠামো। দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানি বাণিজ্য প্রবাহের চাহিদা ও চাপ সামাল দিতে বে-টার্মিনাল ঘিরে বন্দর ব্যবহারকারী ও আন্তর্জাতিক শিপিং মহলে আগ্রহ এবং আশাবাদ তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান বন্দরের সাথে প্রায় লাগোয়া পতেঙ্গা-হালিশহর সমুদ্র উপকূলভাগে বে-টার্মিনাল স্থাপনে প্রাথমিকভাবে ৯০৭ একর ভূমি চিহ্নিত করা হয়েছে। ভূমি বন্দোবস্তি লাভে বন্দর কর্তৃপক্ষ শুরুতেই উদ্যোগ নিলেও মামলা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ পদে পদে হোঁচট খায় নানামুখী সমস্যার কারণে। এখন অধিগ্রহণের মাধ্যমে ভূমি ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে ব্যক্তি মালিকানার ৬৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ চূড়ান্ত হয়েছে। ভূমির ক্ষতিপূরণ মূল্য বাবদ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে শিগগিরই প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। এরপর আরো ৮শ’ ৩৯ একর সরকারি মালিকানার ভূমির দাম মিটিয়ে অধিগ্রহণ করার প্রস্তুতি চলছে। এরজন্য ব্যয় হবে প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকা।
আগামী দুই মাসের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে পুরোদমে ইয়ার্ড এবং ট্রাক কাভার্ড ভ্যান টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরুর টার্গেট রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধার্য করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। চবক তহবিলের অর্থায়ন ছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রস্তাব এসেছে।
বে-টার্মিনাল বাস্তবায়নে অগ্রগতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ গতকাল (শুক্রবার) দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আমরা আগামী অক্টোবর মাসে বে-টার্মিনাল প্রকল্পস্থলে ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু করবো। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা আর নেই। অধিগ্রহণ বাবদ ভূমির ক্ষতিপূরণ ব্যয় চবক অর্থায়ন করবে। তিনি বলেন, বে-টার্মিনাল জাতীয় অর্থনীতিতে আমূল উন্নতি বয়ে আনবে। সেখানে দ্বিগুণ সাইজের এবং দ্বিগুণ সংখ্যক জাহাজবহর ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে বিশেষ করে পণ্য রফতানিতে বর্তমানে জাহাজের টার্ন এরাউন্ড টাইম (গড় অবস্থানকালের সূচক ) ২ দশমিক ৬ দিনের স্থলে হ্রাস পেয়ে মাত্র ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টায় দাঁড়াবে। বে-টার্মিনাল বন্দরের দক্ষতা, সক্ষমতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
এদিকে বে-টার্মিনালের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘শেলহর্ন এইচপিসি কেএস জেবি’ গতবছর কারিগরি সমীক্ষা প্রতিবেদন বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করে। তাতে বলা হয় বিদ্যমান বন্দর সংলগ্ন পতেঙ্গা-হালিশহর উপকূলভাগ বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগত কারণে বেশ উপযোগী। সেখানে বর্তমান বন্দরের মতো জাহাজবহর ভিড়তে হলে জোয়ার-ভাটার সূচির ওপর নির্ভর করতে হবে না। সাগরের মোহনায় গত প্রায় তিন দশকে জেগে ওঠা টেকসই চরের ৯০৭ একর ভূমি নিয়ে বে-টার্মিনালের দৈর্ঘ্য হবে ৭ কিলোমিটার, প্রস্থ ৬শ’ মিটার। তীরভূমির ৮শ’ মিটার ব্যবধানে সাগর মোহনায় একটি নেভিগেশনাল চ্যানেল হয়েছে। এর গভীরতা ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত।
সেখানে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে বড় আকারের জাহাজ ভিড়ানো ও ঘোরানোর সুযোগ তথা অবকাঠামো প্রসারিত করা সম্ভব হবে। এর ফলে জোয়ার-ভাটায় যে কোনো সময়েই ১২ মিটার ড্রাফট সম্পন্ন (পানির ভেতরে থাকা জাহাজের অংশ) জাহাজবহর সেখানে ভিড়তে পারবে। বে-টার্মিনালে ভিড়তে সক্ষম হবে ৫ হাজার কন্টেইনার ভর্তি জাহাজ। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলের সীমাবদ্ধতার কারণে জেটি-বার্থে ভিড়তে পারছে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত ড্রাফট, ১৯০ মিটার দীর্ঘ এবং প্রায় দুই হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ। বে-টার্মিনালে একই সঙ্গে ভিড়তে পারবে ৩৫টি জাহাজ।
বন্দর কার্যক্রম পরিচালিত হবে (অপারেশনাল এরিয়া) বর্তমান বন্দরের তুলনায় তিনগুণ বড় আয়তনে। যা ধাপে ধাপে ছয়গুণে উন্নীত করা সম্ভব হবে সমুদ্র উপকূলভাগে নতুন ভূমি ধারণ ও চর জাগানোর মাধ্যমে। এর ফলে বে-টার্মিনাল আগামী ৫০ থেকে একশ’ বছরের বন্দর কার্যক্রমের চাহিদা পূরণে সমর্থ হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতি বছর ১৪ থেকে ১৮ শতাংশ হারে আমদানি-রফতানিমুখী কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি ঘটছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ২৮ লাখ টিইইউএস ছাড়িয়ে গেছে।
বে-টার্মিনাল প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি ও পোর্ট ইউজারস্ ফোরামের সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, বে-টার্মিনাল বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থানের বিরাট সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে। বর্তমানে শিল্প-কারখানার যাবতীয় কাঁচামালসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যসামগ্রী আমদানি-রফতানি করতে গিয়ে প্রচুর আর্থিক ও সময়ের অপচয় ঘটছে। বন্দর ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যবসা ও শিল্প পারিচালনায় খরচ বেড়ে গেছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পায়ন এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ফার্স্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট হিসেবে অবিলম্বে বে-টার্মিনাল বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।