বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নজিরবিহীন অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, স্বেচ্ছাচারিতা আর ভোটারদের ওপর বিবেকহীন প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের একমাস পরেও ফলাফলের কোন গেজেট প্রকাশ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচনে ১২৩টি কেন্দ্রের ৫৬টিতে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা নিয়ে দু দফায় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে। তবে প্রতিবেদন জমা হয়নি এখনো। প্রথমবারের মত রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রতীকে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৪র্থ এ নির্বাচনে ‘পরিকল্পিত ও প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতি’ হয়েছে বলে বিরোধী দলসমূহ দাবি করলেও নির্বাচন কমিশন থেকে আওয়ামী লীগসহ মহাজোট প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ভোটের দিন সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার একটি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করে। অপরদিকে রিটার্নিং অফিসার ১৫টি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করেছে। এছাড়া দু দফায় ৪০টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতেও তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ৫৬টি কেন্দ্রের পুরো ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তদন্ত সম্পন্ন করলেও এখনো কোন প্রতিবেদন দাখিল করেনি।
ফলে ৩০ জুলাইয়ের ভোট গ্রহণের মাসাধিককাল পরেও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে কোন গেজেট প্রকাশ করেনি নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের দিন স্থগিতকৃত ১৬টি কেন্দ্রর বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গত ১১ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বরিশালে এসে তদন্ত পরিচালনা করেন। পরবর্তীতে আরো ৪০টি কেন্দ্রের বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় একই কমিটি পুনরায় বরিশালে এসে তদন্ত করে ঢাকায় ফিরে গেছেন। তবে কমিটি সরেজমিনে কোন কেন্দ্র পরিদর্শন করেনি। গতকাল পর্যন্ত ঐ কমিটি কোন প্রতিবেদন দাখিল করেননি বলে জানা গেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের সম্ভবনা রয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
সর্বশেষ হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী বরিশাল সিটি এলাকায় এবার মোট ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৯ জন। ঘোষিত ১০৭ কেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩০৮টি ভোট পড়েছে বলে জানা গেছে। যা মোট ভোটারের প্রায় ৬৫%। তবে এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় তদন্ত করা ৪০টি কেন্দ্রও রয়েছে। ঐ ৪০টি কেন্দ্রের মধ্যে ইভিএম-এ ভোট গ্রহণ করা কেন্দ্রেও রয়েছে অন্তত ৫টি। যা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ফলাফল কেন্দ্রে ঘোষণা করা হলেও প্রিজাইডিং অফিসার ইভিএম মেশিনের মেমোরি কার্ড রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন। নির্বাচনের একমাস পরে গত ৩০ আগস্ট তা নির্বাচন কমিশনে জমা দেন তিনি। তদন্ত কমিটি এ বিষয়টি আমলে নিলেও তা পদ্ধতিগত ভুল মনে করছে বলে জানা গেছে।
তবে ১৬টি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করায় ১৫ কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাগ্য ঝুলে আছে এখনো। এসব কেন্দ্রের প্রতিবেদনের ওপরও বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাগ্য নির্ভর করছে। তবে মোট কেন্দ্রের প্রায় অর্ধেকের বিষয়ে এ তদন্ত মেয়র পদের ফলাফলে কোন প্রভাব ফেলবে না বলে জানা গেছে। কারণ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৫৩ ভোটে, আর ২০ দলীয় জোট প্রার্থীর ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ১৩ হাজারের কিছু বেশী ভোট।
এদিকে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, গত ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট প্রার্থীর পরিবর্তে পরাজিত হয়েছে গনতন্ত্র। একইভাবে দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তিও ¤øান হয়েছে চরমভাবে। নগরবাসীর মন থেকে ঐ ক্ষত মুছতে অনেক দিন লাগতে পারে। এ নির্বাচনের কারণে দেশের বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থাসহ নির্বাচন কমিশনের প্রতি গণআস্থার অবশিষ্টটুকুও মুছে গেছে বলে মনে করছেন মহলটি। একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে এত বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা আর নির্বাচন কমিশনের স্বেচ্ছা অন্ধত্ব তাদের গ্রহণযোগ্যতাকে আরো একবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন একাধিক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।