দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মহান আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। এবং তাদেরই খেদমতে সারা জাহানের সবকিছু তাদের জন্য সৃজন করেছেন। আমাদের প্রতিপালক তিনি তাঁর বান্দাদেরকে সৃষ্টি করেই ক্ষ্যান্ত নন বরং তাদের জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন । আর রিজিকের মধ্যে অসংখ্য ধরনের বিচিত্র ময় নেয়ামত প্রদান করেছেন। তন্মধ্যে একটি অনুগ্রহ হল ফল-ফলাদি যেমন আম, কাঁঠাল,লিচু,পেয়ারা,আপেল কমলা,এগুলো বিশেষ নেয়ামত। এর স্বাদ একরকম,এর গঠন ও কি চমৎকার? কি নিপুন কারুকার্য! আর কাঁঠাল ফলের ও ভিন্ন ধরনের স্বাদ। এর সৃজন কতইনা চমৎকার একটি ফলের সাথে অন্যটির কোন মিল নেই। এধরনের সবগুলো ফলই মহান রবের বিশেষ অনুগ্রহ, আমরা নিজের দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো আমরা কি ছিলাম ? প্রথমে এই বিষয়ে চিন্তা করলেই দেখবো যে, আমরা এক ফোটা নাপাক পানি ছিলাম, তারপর সেটা মায়ের রেহেমে ছিল ক্রমান্বয়ে প্রতি ৪০ দিন অন্তর-অন্তর স্তর পরিবর্তন হয়। সেটা প্রথমে জমাটবদ্ধ রক্তে পরিণত হয়ে এরপরেই গোস্ত পিন্ড, তারপর অস্থি,এরপর গোশত দিয়ে সেই অস্থিকে আবৃত করেছেন। মায়ের রেহেমে দশ মাস দশ দিন এ অবস্থায় ছিলাম , মহান মালিক খাছ অনুগ্রহ করে আমাদেরকে পূর্ণ মানবাকৃতির রূপ দান করেছেন। এরপর নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আমরা দুনিয়াতে আগমন করলাম। এটাও একটি অশেষ নেয়ামত,ধারাবাহিকভাবে শৈশব থেকে কৈশোরে উপনীত হই। তখন ঐ উপলব্ধি করা যায় যে, মহান আল্লাহ আমাদেরকে কি ধরনের অনুগ্রহ করেছেন । আমাদের মানবদেহকে আল্লাহ উত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। যদি আমরা দেহের প্রতি লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাব অসংখ্য নেয়ামত বিদ্যমান। আমাদের মানবদেহে অবস্থিত সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করে শেষ করা যাবে না। আল্লাহর বান্দারা সব এক ধরনের হন্ না। কেননা আমার শরীরের দিকে লক্ষ্য করলে অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে সর্বপ্রথম হল: তিনি আমাকে নয়ন যুগল প্রদান করেছেন, এটা যে কত বড় নিয়ামত তা আমরা উপলব্ধি করিনা। আরেক ভাই যার দুটি আঁখি নেই, সে বুঝে তার গুরুত্ব কত ? এবং এই নেয়ামতের গুরুত্ব কত বেশি যে, আঁখি যুগল না থাকলে আমরা পৃথিবী দেখতে পেতাম না। এবং ধরণীতে বিদ্যমান অসংখ্য অগণিত নিয়ামতও দেখার সুযোগ পেতাম না। দ্বিতীয় নেয়ামত: হলো তিনি আমাকে দুটি কর্ণ দান করেছেন। এর গুরুত্ব যে কত বেশি সেই মানুষটা বুঝে, যার কর্ণদ্বয় নেই বা কারো আছে কিন্তু শ্রবণ শক্তি নেই, সে বুঝে কানে শ্রবণ করাটা যে কত বড় নেয়ামত, এবং কত গুরুত্বপূর্ণ তা বর্ণনাতীত। তৃতীয় অনুগ্রহ হল: তিনি আমাকে মস্তিষ্ক দান করেছেন এবং সুস্থ রেখেছেন এটা কোন অংশে কম গুরুত্বের নয়, অনেক বড় নিয়ামত আরেকজন ভাইয়ের প্রতি লক্ষ্য করি দেখা যাবে যে, তার সব আছে কিন্তু মাথা ঠিক নেই তাকে জনগণ উম্মাদ বলে অভিহিত করে। তার উপরে শরীয়তের কোন বিধানও প্রযোজ্য নহে। সমাজে তার কোন গুরুত্ব নেই, সেই লোকটা দেশ ও জাতির নিকট উপেক্ষিত । একটি মাত্র কারণ সে উম্মাদ বা বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, এখন একটু চিন্তা করে দেখুন মস্তিষ্কের গুরুত্ব কেমন ? এবং আল্লাহর কত বড়ধরনের নেয়ামত তা পাঠক চিত্তে অনায়াসেই বোধগম্য। চতুর্থ নিয়ামত হল: তিনি আমাকে নাসিক্য দান করেছেন ও সুস্থ রেখেছেন, কিন্তু আরেক মুসলিম ভাইয়ের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তার নাসিক্য বিভিন্ন ধরনের অসুবিধায় জর্জরিত। সেই উপলব্ধি করতে পারে নাসিক্যের কত গুরুত্ব। পঞ্চম নিয়ামত: মহান স্রষ্টা তিনি আমাকে হস্তদ্বয় দান করলেন, কত বড় অনুগ্রহ করেছেন যা ভাষায় প্রকাশ করা দুস্কর আমি যদি আমার অপর ভাইয়ের প্রতি তাকাই দেখব যে, তার একটি হাত নেই, কেউ বা কোন ধরনের দুর্ঘটনার দরুন দুটি হাত হারিয়েছেন। তিনিই বুঝেন তা হারানোর মর্মবেদনা কি ? কোন মানুষের যদি অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থাকা সত্তে¡ও যদি হাত না থাকে তাহলে এটা যে কত বড় বিপদ, যে কোন কাজ করা তো দূরের কথা খাওয়া-দাওয়া করা ও ব্যক্তিগত হাজত পূর্ণকরা সহ কোন কাজ সম্ভব হয়না এটাও মহান রবের বিশেষ হেকমত। কিন্তু তাঁর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি যে, তিনি আমাকে সুস্থ রেখেছেন। ষষ্ঠ প্রকার অনুগ্রহ হলো: তিনি আমাকে জবান প্রদান করেছেন এবং কথা বলার মত তাওফিক এনায়েত করেছেন এটাও একটা নেয়ামত। কারণ এই সুন্দর ধরণীতে যার জবান নেই ভাষা প্রকাশের মতো স্বক্ষমতা নেই সে উপলব্ধি করতে পারে। কথা বলতে পারাটা যে কত বড় বিরাট অনুগ্রহ, বাকশক্তিহীন বাকরুদ্ধ মানুষেরাই এর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে পারে । সপ্তম অনুগ্রহ হলো জিহবা: এই জিহ্বা হলো মহান মালিকের বিশেষ, অনুগ্রহ যে তিনি আমাদেরকে জিহ্বা দান করেছেন এবং সুস্থ রেখেছেন এজন্য তার দরবারে শুকরিয়া। আপনি আরেক ভাইয়ের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করলেই বুঝবেন, যার রসনা নেই তার কি কদর সেই বুঝতে পারে রসনার কি গুরুত্ব তিনি উপলব্ধি করতে পারেন এর প্রয়োজনীয়তা কেননা আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত এর স্বাদ অনুধাবন করা যায় এই জিহ্বা দ্বারা এটাও মহান প্রভুর অশেষ রহমত। অষ্টম নেয়ামত: হলো কিডনি মানবদেহের অপরিহার্য অঙ্গ যা তিনি আমাদেরকে দান করেছেন এ কিডনির প্রয়োজনীয়তা এত বেশি যে যা না হলেই নয়। যার একটি কিডনিই নষ্ট বা কোনো ভাইয়ের দুটি কিডনিই ক্ষতিগ্রস্ত সেই ভাই অনুধাবন করতে পারে এর প্রয়োজনীয়তা। এ ধরনের অনেক অসহায় মানুষ রয়েছে যারা সাহায্যের জন্য আবেদন পাঠায় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় যে আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে একটু সাহায্য করুন এ ধরনের অসংখ্য মানুষ রয়েছে এ ধরণীর বুকে যারা আল্লাহর বান্দাদের নিকট একটু সাহায্য প্রার্থনা করে, আর এ ধরনের ব্যক্তিদের কে সাহায্য করলে মহান প্রভু উত্তম জাযা খায়ের আপনাদেরকে প্রদান করবেন। নবম অনুগ্রহ: হল যে মহান স্রষ্টা তিনি আমাকে পদযুগল দান করেছেন কিন্তু আমি যদি আরেক ভাইয়ের প্রতি নজর দেই তাহলে দেখব যে কারো একটি পা নেই আবার কারো বা সড়ক দুর্ঘটনায় পদযুগল হারিয়েছেন তার অতটুকু শক্তি নেই যে সে জমিনে ভ্রমণ করবে, এবং আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য অনুধাবন করবে। তিনিই বুঝেন পা হারানোর বেদনা কেমন? থাকলে যে নিজেকে কত বড় অসহায় মনে হয় ও কত বড় বিপদের মুখোমুখি হতে হয়। এছাড়াও অসংখ্য ধরনের বিপদের মোকাবেলা করতে হয়, পা হারানোর মর্মবেদনা তিনিই অবগত আছেন যার পদযুগল নেই। প্রভুর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি যিনি আমাদেরকে উত্তম আকৃতিতে সৃজন করেছেন। এইজন্য আমি বলবো তুমি রবের কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? যখনই আমরা কোন ফল ভক্ষণ করি সেই ফলের আঁটি জমিনে পুঁতে রাখলে কিছুদিন পর ঐ দানা থেকে দুটি পত্রপল্লবের একটি চারা গাছের সৃষ্টি হয় কালক্রমে এটি বিরাট মহীরুহে পরিণত হয়।সেই মহান সত্তার শুকরিয়া যিনি বিরাট অনুগ্রহ করেছেন বৃক্ষ আমাদের নিকট রয়েছে যা আমরা দেখতে পাই কোনটি ফলদ বৃক্ষ এই ফলদবৃক্ষ আমাদেরকে ফল দেয় এটা একটি নেয়ামত। আরেকটি হল এই বৃক্ষ আমাদের থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং আমাদেরকে বড় ধরনের উপকার করে। তা হলো বৃক্ষের নির্গত অক্সিজেন আমরা গ্রহণ করি যা না হলে আমাদের জীবন হুমকির সম্মুখীন হতো। যখনই আমরা গম,যব,সরিষার দানা এগুলো রোপন করি সেগুলো মহান আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ অনুগ্রহ।এ থেকে নির্গত শস্যদানার খোসাগুলো কোনোটি প্রয়োজনহীন নয়। কেননা এগুলোর বহিরাবরণ অনেক চমৎকার এবং দৃষ্টিনন্দন, খোসা থেকে নতুন জিনিস তৈরি হয় যা চতু®পদ জন্তুর খাদ্য পরিণত হয়, সরিষার দানা মেশিনে চিবাইলে একদিকে তৈল নির্গত হয়। অপরদিকে খোসার সমষ্টির মাধ্যমে খৈল বের হয় যা প্রাণীর এবং গোবৎসের খাদ্যে পরিণত হয়। এবং সেই প্রাণী থেকে নির্গত দুগ্ধ আমরা পান করি এটা একটি মহান নিয়ামত। আল্লাহ যেমন মহান তেমনি তাঁর সৃষ্টি ও মহান কেননা প্রতিটি জিনিসের মাঝে তার কুদরতের পরিচয় বহন করে, কারণ আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা এরশাদ করেন: হে মহান প্রভু আপনি কোন জিনিস অনর্থক সৃজন করেন নাই। আমরা উল্লিখিত আলোচনায় দেখতে পাই এদিকে আরবী মাস চাঁদের উপর নির্ভরশীল এবং ইংরেজি মাস নির্ভর করে রবির উপর। রাতদিন এগুলো রশ্মিও প্রখরতা স্নিগ্ধতার উপর নির্ভর করে। সূর্য যখন আলো বিলায় এই মুহূর্তে আলোটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বিদ্যমান। প্রভাতের স্নিগ্ধআলো আমাদের গ্রহণ করা প্রয়োজন। এটা মহান স্রষ্টার বিশেষ অবদান,তুমি তোমার রবের কোন নিয়ামত অস্বীকার করবে! না অস্বীকার করার মত কোন জিনিস এই ধরণীতে বিদ্যমান নেই, যেদিকে তাকাই আমরা সেদিকেই দেখি শুধু সমারোহ। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।