বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ভুল চিকিৎসায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ফুটফুটে শিশু রাফিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তোপের মুখে পড়েছেন শহরের চরপাড়া নয়াপাড়া এলাকার শিলাঙ্গণ হাসপাতাল (প্রা:)। জনরোষ এড়াতে ইতোমধ্যেই এই প্রাইভেট ক্লিনিকটি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন।
তবে ঠিকই নিয়মিত নিজের চেম্বার খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছেন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও গাইনি সার্জন অধ্যাপক ডা: শিলা সেন। অথচ এই ক্লিনিকটিতে তিনিসহ সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা: মনির হোসেন ভূইয়ার চেম্বার রয়েছে। হাসপাতাল বন্ধ থাকলেও এর ভেতরকার চেম্বার কীভাবে খোলা থাকে এই নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে।
শুধু কী তাই চিকিৎসকের অবহেলায় শিশু রাফিয়ার এমন অনাকাঙ্খিত মৃত্যু এই ক্লিনিটির অন্যতম মালিক ডা: শিলা সেনের হৃদয়ে দাগ কাটেনি এতটুকুও! এর প্রমাণ মিললো সংবাদকর্মীদের ক্যামেরা নিয়ে উপস্থিতিতে টিপ্পনি কাটার মধ্যে দিয়ে।
সোমবার রাতে বার বারই শিলা সেন নিজের সতীর্থদের বলছিলেন, ‘বিনা পয়সায় আমার প্রচার হচ্ছে। প্রচার করতে দাও।’ এই সময় তার মুখেও হাসি ছিলো। মর্মান্তিক একটি ঘটনার পরও তার হাসিমুখের সমালোচনা করেন অনেকেই।
এমনকি এই শিশু মৃত্যুর ঘটনায় গোটা শহরবাসী ক্ষোভে ফুঁসে ওঠলেও এর দায় নিজের কাঁধে নেওয়ার বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করেছেন আলোচিত এই চিকিৎসক। অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার বিষয়টি সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা: মনির হোসেন ভূইয়া’র বিষয় বলেও দায় এড়াতে চেয়েছেন তিনি। নরম সুরে বলেছেন, ‘এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত আমিও চাই।’
তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে দেখা গেছে, চিকিৎসক মনির হোসেনের চেম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে। মোবাইলে কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
শিশু রাফিয়ার স্বজনরা জানান, শিশু কন্যা রাফিয়ার তলপেটে ব্যাথা অনুভব হলে গত গত ২৬ আগস্ট বিকেলে তাকে গাইনী চিকিৎসক ডা: শিলা সেনের কাছে নিয়ে যান বাবা মাহমুদ বাবু। সেদিনই সন্ধ্যায় শিলাসেন তার ব্যক্তিগত ক্লিনিক শিলাঙ্গনে ভর্তির জন্য নির্দেশ দেন। এরপর শিলাঙ্গণে টানা দু’দিন রাফিয়ার নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. মনির হোসেন ভূইয়া। পরে গত ২৮ আগষ্ট শিশুটির এপেন্ডিসাইডস রোগ সনাক্ত হয়।
কিন্তু ডা: মনির হোসেন ভূইয়ার নেতৃত্বে শিশুটির অস্ত্রোপাচারের পর পরই অবস্থার অবনতি হতে থাকে এবং বেগতিক পরিস্থিতিতে পাশের একটি ক্লিনিকের আইসিইউতে তাকে ভর্তি করে। এরপর শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এই ঘটনার পর পরই চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুলের অভিযোগ তুলে তাদের বিচার দাবিতে মাঠে সোচ্চার হয়ে ওঠে জেলা কমিউনিস্ট পার্টি, মহিলা পরিষদ, উদীচী, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, প্রগতি লেখক সংঘসহ বিভিন্ন সংগঠন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপক ডা: শিলা সেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিলাঙ্গণ আমার চেম্বার। আমি শিশু রোগী দেখিনা। গাইনোলজিক্যাল সমস্যা থাকলে আমি শিশুদের দেখি। রাফিয়ার বাবা-মা চেম্বারে দেখানোর জন্যই আমার কাছে নিয়ে এসেছিল। পরীক্ষার পর আমি বলেছি সার্জারী কেইস সার্জারীতে দেখাতে হবে। তবে আমি এখানে তাকে ভর্তি হতে নির্দেশ দেইনি।’
শিশু রাফিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় শিলাঙ্গণের মালিক হিসেবে এই বিষয়টি এড়িয়ে তিনি বলেন, শিলাঙ্গণে ভর্তি করিয়ে শিশুটিকে তারা দেখাননি। চিকিৎসকের চেম্বারে দেখিয়েছেন। শিলাঙ্গণে ওই শিশুকে ভর্তি করালে দায়ভার আমার থাকতো।’
শিলাঙ্গণ ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দিলেও ডা: শিলা সেন চেম্বার খোলা রাখেন কীভাবে এই প্রশ্নের জবাবে শিলা সেনের পক্ষ অবলম্বন করে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা: আব্দুর রউফ বলেন, এখনো তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি। তদন্ত কমিটি গঠিত হলে রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে কে অপরাধী? এজন্য আমরা আপাতত ক্লিনিক বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি।
মানববন্ধন
এদিকে, ভুল চিকিৎসায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রাফিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদে আবারো রাস্তায় নেমেছে ময়মনসিংহের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শহরের ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে সুচিকিৎসার জন্য সংগ্রাম, রাফিয়ার জন্য প্রতিবাদী উচ্চারণ ও কবিতা শীর্ষক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানববন্ধন চলাকালীন সমাবেশে ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইয়াজদানী কোরায়শী কাজল, দুর্গাবাড়ী ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তৌহিদুজ্জামান ছোটন, ময়মনসিংহ জেলা যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আমিন রুবেল, জেলা মুদ্রণ শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক খান পাঠান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।