পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অনিশ্চিত পরিবেশে রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে নিজেদের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যে আরও গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে জোর দিচ্ছে এ অঞ্চল। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী নভেম্বরে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠেয় আসিয়ান সম্মেলনে বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো।
চীনের উদ্যোগে এশিয়ার ১৬টি দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হতে যাওয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিটি রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) নামে পরিচিত। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই চুক্তিটিতে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোয় বসবাস করে এবং বৈশ্বিক জিডিপির এক-তৃতীয়াংশই এসব দেশের নিয়ন্ত্রণে। যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা, রক্ষণবাদী বাণিজ্যনীতির বিরুদ্ধে একে কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে দেখছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) অর্থমন্ত্রীরা আরসিইপিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে একমত হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী চ্যান চুন সিং বলেন, আসিয়ান ও আরসিইপিতে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো বহুপক্ষীয় ও নীতিমালাভিত্তিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। আমাদের বিশ্বাস, বর্তমানে আমরা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি, তা সমাধানে এটিই সর্বোত্তম পন্থা।
আমেরিকা ফার্স্ট নীতিমালায় বিশ্বাসী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন চীনের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি শুল্কযুদ্ধে নিমজ্জিত হয়েছে। নভেম্বরে সিঙ্গাপুরসহ দুটি এশিয়ান সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেবে না বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করছে। এরই অংশ হিসেবে সিঙ্গাপুরে দুই দিনব্যাপী আসিয়ান বৈঠকে আরসিইপি নিয়ে গভীর আলোচনা করেছে দেশগুলো।
আসিয়ানের ১০ সদস্য ছাড়াও চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড আরসিইপির সদস্য। সিঙ্গাপুরের বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আরসিইপি ইস্যুতে আলোচনা ‘সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বড় চুক্তির দিকে তাকিয়ে, যার মাধ্যমে মাইলফলক অর্জিত হবে। চলতি বছরের শেষের দিকে নেতারা যখন আবার বৈঠক করবেন, তখন এর একটি সমাপ্তি হবে। নভেম্বরের সম্মেলনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘পর্বতারোহনের মতো আমরা ক্রমেই সম্মেলনের কাছাকাছি সময়ে চলে এসেছি।
সূত্রে জানা যায়, পণ্য-সেবা ও বিনিয়োগের জন্য কোনো দেশগুলো কী মাত্রায় তাদের বাজার খুলে দেবে এখন এ ইস্যু নিয়েই আলোচনা চলছে। তবে চুক্তিতে পৌঁছাতে হলে নিজেদের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে দেশগুলোকে কাজ করতে হবে এবং পারস্পরিক উদ্বেগ দূর করতে দেশগুলোকে নমনীয়তা প্রদর্শন করতে হবে। ওয়াশিংটন টিপিপি প্রত্যাহারের পর থেকে এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারে আরসিইপিতে ব্যাপক সমর্থন দিয়ে আসছে চীন, পাশাপাশি দেশটি মুক্ত বাণিজ্যের ওপরও জোর দিচ্ছে।
এদিকে কানাডার সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা যাচাইয়ে যৌথ কার্যক্রমটি সম্প্রতি সম্পন্ন করেছে আসিয়ান। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গেও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হালনাগাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি বছরের শেষে আরসিইপি সমাপনীর লক্ষ্য পূরণের অংশ হিসেবে এসব দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির দিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
পাঁচ বছর ধরে আরসিইপি নিয়ে আলোচনা চলছে এবং চলতি বছরের মধ্যেই সদস্য দেশগুলোকে এ বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। আরসিইপির মুক্ত বাণিজ্যের ধারাগুলো যদি বিদ্যমান এফটিএর তুলনায় দুর্বল হয়, তাহলে তা খুব বেশি গুরুত্ব বহন করবে না। আসিয়ানের এরই মধ্যে ছয়টি আরসিইপি দেশের সঙ্গে এফটিএ রয়েছে। এসব চুক্তি হালনাগাদ করা মূলত বৃহত্তর চুক্তি সম্পন্নেরই একটি অংশ।
বৈশ্বিক বাণিজ্যের ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণকারী আসিয়ান এ অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতাগুলো কমাতে কাজ করছে। সদস্য দেশগুলো ৯৮ দশমিক ৬ শতাংশ অভ্যন্তরীণ শুল্ক বাতিল করেছে। কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর বাজার এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি উন্মুক্ত। অশুল্ক বাধাগুলোও দূর করার মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিক একীভবন আরও বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে এশিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।