পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২০২১ সালে শেষ হবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণকাজ। তখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলবে। এরই প্রেক্ষাপটে পর্যটন শহর কক্সবাজারে যাত্রী পরিবহনের জন্য ট্যুরিস্ট ট্রেন চালু করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এজন্য ৫৪টি বিলাসবহুল কোচ আমদানীর প্রক্রিয়া শুরু করেছে রেলওয়ে। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনাও (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবনায় ৫৪টি কোচের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতিটি কোচের দাম পড়বে ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টদের অনেকের মতে এটি তুলনামূলক অনেক বেশি দর। যেখানে রেলের প্রতিটি মিটারগেজ কোচ আমদানীতে ব্যয় হয়েছে গড়ে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা। রেলওয়ে সূত্র জানায়, বিলাসবহুল ট্যুরিস্ট কোচ কেনার এই প্রস্তাবনা রেলপথ মন্ত্রণালয় হয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।
চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার এবং কক্সবাজার-রামু হয়ে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারিতে। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি দুটি ভাগে ভাগ করে সম্পাদন করা হবে। প্রথম ভাগ দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করছে যৌথভাবে চায়নার সিআরইসি ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানী। প্রথম ভাগের চুক্তিমূল্য ২৬৮৭ কোটি ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। দ্বিতীয় ভাগে চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করছে যৌথভাবে চায়নার সিসিইসিসি ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিঃ। এই অংশের চুক্তি মুল্য ৩৫০২ কোটি ৫ লাখ ২ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১০২ কি.মি. নতুন ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ১৮৪ টি ছোট বড় রেলসেতু, ৯ টি স্টেশন বিল্ডিং, প্লাটফরম ও সেড নির্মান করা হবে। এছাড়াও সমুদ্রের ঝিনুকের আদলে কক্সবাজারে একটি আইকনিক স্টেশন বিল্ডিং বানানো হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডরের সঙ্গে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। একই সাথে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০২১ সালের মধ্যেই শেষ হবে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ নিম্যাণের কাজ। উদ্বোধনের দিন থেকেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত বিলাসবহুল পর্যটন ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এজন্য ৫৪টি বিলাসবহুল ট্যুরিস্ট কোচ আমদানীর প্রক্রিয়া শুরু করেছে রেলওয়ে।
জানা গেছে, ট্যুরিস্ট কার আমদানির বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য চলতি বছরের মার্চে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে রেলওয়ে। রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (মেকানিক্যাল) মঞ্জুরুল আলম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশন) মুরাদ হোসেন ও প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী (পূর্ব) মোঃ আনোয়ার হোসেন। গত মাসে এ কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরই গত মাসের শেষদিকে ডিপিপি প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে রেলওয়ে। প্রস্তাবনায় ৫৪টি কোচের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতিটি কোচ আমদানিতে খরচ পড়বে ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্প ব্যয়ের ৭৮ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার এবং ২৭৮ কোটি টাকা ধরা হয়েছে প্রকল্প সহায়তা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব আরো কমিয়ে আনতে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে বিরতিহীন ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রেলপথে সাধারণ ট্রেনের পাশাপাশি প্রতিদিন ঢাকা থেকে সরাসরি (ন্যুনতম কয়েকটি বিরতিযুক্ত) কয়েকটি সম্পূর্ণ এসি ট্রেন যাতায়াত করবে। এসব ট্রেনে পর্যটক হিসেবে চলাচলরত যাত্রীদের সুবিধার্থে ট্যুরিস্ট কার সংযোজন করা হবে। এসব ট্যুরিস্ট কারে সুপরিসর বার্থ সার্ভিস ছাড়াও রেলের নিজস্ব ক্যাটারিং সার্ভিস, সার্বক্ষণিক গার্ড, ওয়েটার সুবিধা ও যাত্রাপথে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার ব্যবস্থা থাকবে। এ বিষয়ে রেলের পূর্বাঞ্চলের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ট্যুরিস্ট কার প্রকল্পের বিষয়ে কয়েক দফা বৈঠকের পর পরিবহন বিভাগের কাছে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। রেলের পরিবহন বিভাগও এ বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে। এ নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর একটি প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করা হবে। ২০২০ সালের মধ্যে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কোচ আমদানির পাশাপাশি ট্যুরিস্ট কারও আমদানি করা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার এবং কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা পর্যন্ত প্রতিদিন দুই জোড়া ট্রেন পরিকল্পনা ছিল রেলওয়ের। কিন্তু প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে এক জোড়া ট্যুরিস্ট ট্রেনের রেক সংগ্রহের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয়। এ হিসেবে প্রতিদিন সকাল ও বিকালে ঢাকা থেকে দুটি ট্রেন এবং একই সময়ে সকাল ও রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকামুখী দুটি ট্রেন চলাচল করবে। ৫৪টি কোচের মধ্যে প্রয়োজনীয় যাত্রীবাহী কোচ ছাড়া ২০ শতাংশ কোচ স্পেয়ার (অতিরিক্ত) হিসেবে যাত্রাপথের উভয় প্রান্তে মজুদ রাখা হবে। রেলের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের অধীনে থাকছে ছয়টি মিটার গেজ ট্যুরিস্ট কোচ (সিটি), ১৩টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার (ডব্লিউজেসি), ২২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার (ডব্লিউইজেসিসি), সাতটি পাওয়ার কার (ডব্লিউপিসি), শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাইনিং কার ও গার্ড ব্রেক (ডব্লিউজেডিআর)। এর মধ্যে শুধু কোচের দাম ধরা হয়েছে ২৫৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি কোচের ক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে গড়ে ৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা করে। প্রকল্পের বাকি টাকা আমদানি প্রক্রিয়াসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় করা হবে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে ২৫০টি কোচ আমদানীর একটি প্রকল্প হাতে নেয় রেলওয়ে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে ২০০টি মিটার গেজ কোচের ব্যয় ধরা হয় ৫৮০ কোটি টাকা। এই হিসাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, শোভন চেয়ারকোচসহ আনুষঙ্গিক গড় খরচ গড়ে ব্যয় ২ দশমিক ৯ কোটি টাকা। এ কারণে ট্যুরিস্ট কারের জন্য প্রতিটি কোচে ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার ব্যয় প্রস্তাব অযৌক্তিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাঞ্চলে সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেন সুবর্ণ ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে বিরতিহীন এ দুটি ট্রেনের প্রায় শতভাগ আসনের টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। মাত্র ৫ ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথে যাত্রী পরিবহনের কারণে ট্রেন দুটির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা নতুন রেলপথ চালু হলে এর চেয়েও উন্নতমানের বিলাসবহুল আন্ত:নগর ট্রেন পরিচালনার অংশ হিসাবে বিশেষায়িত ট্যুরিস্ট ট্রেন চালু করার পরিকল্পনা করেছে রেলওয়ে। সাধারণ ট্রেন সার্ভিসের পাশাপাশি বিশেষায়িত পর্যটন কার যুক্ত হলে রেলওয়ে যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।