পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চীনা পণ্যে ভারতের শুল্ক বৃদ্ধি...
বাণিজ্য ঘাটতি দূর হবে
বাংলাদেশের জন্য ‘ভালো’ সুযোগ - বিজিএমইএ সহ-সভাপতি
বিদায়ী অর্থবছরের ভারতে পোশাকের রফতানি বেড়েছে প্রায় ১১৫ শতাংশ
চীনের পোশাক পণ্যে বাড়তি শুল্ক বসানোয় ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রফতানি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) সুফল কাজে লাগিয়ে ভারতের তৈরি পোশাকের বাজারে চীনের জায়গা দখল করা সম্ভব বলে মনে করছেন রফতানিকারক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি ভারত সরকার চীন থেকে আমদানি করা ৩০০টির বেশি পোশাক পণ্যে আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করেছে। এতদিন এই শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ। তা বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। স্থানীয় টেক্সটাইল শিল্পকে সুবিধা দিতে চীন থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে রয়টার্স সূত্রে জানা গেছে।
ভারতে গত অর্থ বছরের ১১ মাসে (২০১৭ সালের মে থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত) টেক্সটাইল খাতের মোট আমদানি ১৬ শতাংশ বেড়ে সাত বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, এর মধ্যে তিন বিলিয়ন ডলারের পণ্য আসে চীন থেকে। ৩২৮টি টেক্সটাইল পণ্যে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর কথা বলা হলেও সেগুলোর নাম এখনও প্রকাশ করেনি ভারত সরকার। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া থেকে ভারতের টেক্সটাইল পণ্য আমদানি বেড়েছে। এফটিএ-এর কারণে এসব দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে কোনো শুল্ক নেই।
বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি ফারুক হাসান ভারতের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য ‘ভালো’ সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত আমাদের পোশাক শিল্পের জন্য খুবই ভালো সংবাদ। আমরা ভারতের বাজারে আরও বেশি পোশাক রফতানি করতে পারব। চীন যে সব পোশাক রফতানি চীন করত, ট্যাক্স বাড়ানোয় সেগুলোর রফতানি কমে আসবে। আমরা সেই বাজার দখল করতে পারব। এতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ী নেতা। তিনি বলেন, গত ২০১৭-১৮ বাংলাদেশের পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে নয় শতাংশের মতো। পাশের দেশ ভারতের বাজারে রফতানি বাড়লে এই প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীন তার পোশাক পণ্য তুলনামূলক কম দামে ভারতে রফতানি করছে। এর ফলে দেশটির স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে ভারত বস্ত্র ও পোশাক খাতের কিছু পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশ পোশাক খাতে সাময়িক কিছুটা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কেননা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সাফটার আওতায় শূন্য শুল্কে বাংলাদেশ দেশটিতে পণ্য রফতানির সুযোগ পায়। তবে ভারতের উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় চীনের একই পণ্যে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ভারত চীন থেকে পণ্য আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে যে প্রতিকার পেতে চায়, সেই লক্ষ্য কার্যকর কঠিন হয়ে পড়বে। তাই দেশটির উদ্যোক্তাদের দাবি বাংলাদেশ থেকেও কোনো রকম ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে ভারত সরকারকে। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত সরকারকে আশ্বস্ত করতে হবে বাংলাদেশের মাধ্যমে তাদের উদ্যোক্তারা কোনো রকম ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এবং সাফটার আওতায় দেওয়া সুবিধা যেন অব্যাহত থাকে। কারণ ভারত এরই মধ্যে আমাদের পাট ও কস্টিক সোডা রপ্তানিতে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে বলে উল্লেখ করেন গোলাম মোয়াজ্জেম।
বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৭৬ কোটি ৩২ লাখ (৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন) ডলার। এরমধ্যে বাংলাদেশ ভারত থেকে ৫৪৫ কোটি ২৮ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ ভারতে রফতানি করেছে মাত্র ৬৮ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের পণ্য। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪৭ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।
গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬৩৭ কোটি ১৭ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। বিপরীতে ভারতে রফতানি করেছে ৮৭ কোটি ৩২ লাখ ডলারের পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে ১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছিল, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৫-১৬) চেয়ে ছয় দশমিক ৬১ শতাংশ কম।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ভারতে আট কোটি ৭২ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৪ শতাংশ বেশি। ওই পাঁচ মাসে উভেন পোশাক পণ্য রফতানি হয়েছে পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধির হার ৫১ শতাংশ। আর নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছিল তিন কোটি এক লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি ছিল ৬৯ শতাংশ।
গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ (৩৬.৬৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে, যার ৮৩ দশমিক পাঁচ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে।
চলতি ২০১৮-১৮ অর্থবছরে রফতানি আয়ের মোট লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে চার শতাংশ বেশি। এরমধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে ৩২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার আসবে বলে ধরা হয়েছে, যা মোট রফতানি লক্ষ্যমাত্রার ৮৩ দশমিক ৮২ শতাংশ।
বাংলাদেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের আশা চীনের পোশাক পণ্যে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর ফলে ভারতে বাংলাদেশের পণ্যর রপ্তানি আয় আরো বাড়বে। এ ছাড়া সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের ভারতে বাংলাদেশের পোশাকের রফতানি বেড়েছে প্রায় ১১৫ শতাংশ। আর প্রতিবেশী দেশ, জাহাজীকরণে সময় কম ও কম খরচে উন্নতমানের পণ্য সহজেই রফতানি করতে পারবে। ফলে দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাকের কদর আরো বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো।
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি (সিআইটিআই) সূত্রে জানা যায়, ভারতের বাজারে সবচেয়ে বড় পোশাক রফতানিকারক দেশ চীন। এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় তুলা উৎপাদনকারী দেশ হওয়ার পরও গত অর্থবছরে বস্ত্র ও পোশাক খাতের পণ্য আমদানিতে দেশটিতে চীনের আয় বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। ভারত এ সময় ৭০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে এর মধ্যে ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য আসে চীন থেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।