মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের ওপর সংঘটিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার ছবিকে রাখাইনে রোহিঙ্গা কর্তৃক বৌদ্ধ নিধনের ছবি হিসেবে প্রচার করছে। নতুন করে রচিত একটি বইতে ছবিটিকে এভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বইটিতে ব্যবহৃত আটটি ঐতিহাসিক ছবি বিশ্লেষণ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এগুলোর মধ্যে তিনটি ছবি ভুয়া। ছবি বিকৃত করে ও ভুয়া ক্যাপশন দিয়ে এগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা নিধনকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণের চেষ্টায় ভুয়া ছবি আর বানোয়াট তথ্য দিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বইটি রচনা করেছে বলে মনে করছে দ্য গার্ডিয়ান।
গত বছরের আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে প‚র্ব পরিকল্পিত ও সংগঠিত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ওই অভিযানে জাতিগত নিধনযজ্ঞের আলামত পেয়েছে। তবে শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। উল্টো রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে তাদের। এবার মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রকাশিত নতুন বইটিতেও সে চেষ্টা দেখা গেছে।
‘মিয়ানমার পলিটিক্স অ্যান্ড টাটমাডো: পার্ট ওয়ান’ নামের ১১৭ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশিত হয়েছে গত জুলাইয়ে। মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গনের বুক স্টোরগুলোতে বইটি বিক্রি হচ্ছে। বইয়ে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি কৃষিকাজে ব্যবহৃত একটি সরঞ্জাম নিয়ে দুইটি মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে আছে। ক্যাপশনে এটিকে রাখাইনের ছবি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দাবি করা হয়, ১৯৪০-এর দশকে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গার সময় রোহিঙ্গা কর্তৃক বৌদ্ধদের হত্যার ছবি এটি। বরাবরের মতোই রোহিঙ্গাদেরকে এখানে বাঙালি হিসেবে উল্লেখ করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ১৯৪০-এর দশকে মিয়ানমারে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে লেখা অংশে ছবিটি যুক্ত করা হয়েছে। তবে ছবিটি বিশ্লেষণ করে রয়টার্স জানায়, সাদা-কালো এ ছবিটি বাংলাদেশের। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো গণহত্যার ছবি এটি।
আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে, অসংখ্য মানুষ লং মার্চ করে করে যাচ্ছে। ওই ছবির বর্ণনায় বলা হয়েছে: মিয়ানমারের নিম্নাঞ্চলীয় এলাকা ব্রিটিশ উপনিবেশের দখলে যাওয়ার পর বাঙালিরা মিয়ানমারে অনুপ্রবেশ করে। মূলত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে প্রমাণের চেষ্টায় ছবিটি যুক্ত করা হয়েছে। তবে ছবি বিশ্লেষণ করে রয়টার্স বলছে, ১৯৯৬ সালে রুয়ান্ডার গণহত্যা থেকে বাঁচতে তানজানিয়ায় পালাতে থাকা শরণার্থীদের ছবি এটি। রঙিন ছবিটিকে সাদা-কালো রূপ দেওয়া হয়েছে সেখানে। মূল ছবিটি তুলেছিলেন মারথা রিয়াল। পিটসবার্গ পোস্ট গেজেট পত্রিকার জন্য ছবিটি তুলেছিলেন তিনি। রুয়ান্ডার ছবির রঙ পরিবর্তন করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ছবি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
ওই বইয়ে সাদা-কালো আরও একটি ভুয়া ছবি সনাক্ত করেছে রয়টার্স। ওই ছবিতে দেখা গেছে, একটি নৌকাভর্তি মানুষ। এর ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, জলপথ দিয়ে বাঙালিরা মিয়ানমারে প্রবেশ করছে। তবে রয়টার্স বলছে, মূল ছবিটি প্রবেশের নয়, বের হওয়ার। ২০১৫ সালে বাংলাদেশি অভিবাসী ও রোহিঙ্গারা নৌপথে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় ইয়াঙ্গনের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় উপক‚ল থেকে নৌকাটি আটক করেছিল মিয়ানমারের নৌবাহিনী। মূল রঙিন ছবিটিকে উল্টে দিয়ে এবং রঙ পরিবর্তন করে এমন করা হয়েছে।
বইটিতে সব মিলিয়ে ৮০টি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, যার মধ্যে আটটি ঐতিহাসিক ছবি। রয়টার্স কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ ও টিন আই টুল ব্যবহার করে ছবিগুলো পরীক্ষা করেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ছবিগুলোর ব্যাপারে কথা বলতে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হতে ও সেনা মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আর তথ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব উ মিয়ো মিন্ত মং বইটি পড়েননি দাবি করে এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
বইটির লেখক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কিয়াও ও বইয়ের ভ‚মিকায় বলেছেন, ‘বাঙালিদের ইতিহাস প্রকাশ’ করার লক্ষ্যে এটিতে কিছু ডকুমেন্টারি ছবি যুক্ত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদেরকে বাঙালি উল্লেখ করে সেখানে লেখা হয়, মিয়ানমারে যখনই রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয় কিংবা জাতিগত সশস্ত্র সংঘাত হয় তখনই এ বাঙালিরা একে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে।
রয়টার্স জানায়, লেখক কিয়াও ও এর সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।