Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হাসিনা-মোদি বৈঠক হবে

বিমসটেকে যোগ দিতে আজ নেপাল যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:৫১ এএম

সব প্রস্তুতি সম্পন। আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ ঘণ্টার সফরে নেপাল যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য কাঠমান্ডুর বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান। সেখানে আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ কর্মসূচি রয়েছে। সেটি হচ্ছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একাকী বৈঠক। চলতি বছরের শেষদিকে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ওই নির্বাচনের আগে সম্ভবত ঢাকা-দিলি­ শীর্ষ পর্যায়ে এটাই হতে যাচ্ছে শেষ বৈঠক। কূটনৈতিক অঙ্গনে বলাবলি আছে- ওই বৈঠকের গ্রীন সিগন্যাল পাওয়ার পরই ঢাকার তরফে প্রধানমন্ত্রীর কাঠমান্ডু সফর চূড়ান্ত করা হয়।
গতকাল বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়। কর্মসূচিতে বলা হয়. ৪র্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন-এ অংশগ্রহণের জন্য নেপালের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ (ভিভিআইপি ফ্লাইট নং- বিজি-১৮৭১)। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ এবং ৪র্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনসহ অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ। আজ বৃহস্পতিবার কাঠমান্ডুতে এই সম্মেলনে আঞ্চলিক এই জোটভুক্ত সাত দেশের নেতারাও অংশ নেবেন। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে শান্তির, সমৃদ্ধির, টেকসই বে অব বেঙ্গলের লক্ষ্যে। নেপালে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে চাপের মুখে থাকা মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি এ সম্মেলনে থাকছেন না। তার বদলে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট।
প্রধানমন্ত্রীর নেপাল সফর সামনে রেখে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এক সংবাদ সম্মেলন বলেন, নেপালে সম্মেলন অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলাদা বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হবে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী ঈশ্বর পোখারেল এবং নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশরাফি বিনতে শামস। বিমানবন্ধর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হবে হোটেল সোয়ালটি ক্রাউনি প্লাজায়। এই সফরে প্রধানমন্ত্রী সেখানেই থাকবেন। বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন বা বিমসটেক হল বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী সাত দেশের একটি জোট।
শাহরিয়ার আলম বলেন, সম্মেলনের উদ্বোধনে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর স্বাগত বক্তব্যের পরপরই বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই সম্মেলনে জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিমসটেক গ্রিড যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা এবং ফৌজদারি ও আইনি বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে দুটি সমঝোতা স্মরক স্বাক্ষরিত হতে পারে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট বিমসটেকের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে না, কারণ এই জোটের মূল লক্ষ্য হল অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা। আমরা আশা করছি, এই সম্মেলন থেকে আমাদের একটি বড় অর্জন হবে গ্রিড কানেকটিভিটি নিয়ে এমওইউ। মিয়ানমারসহ সব সদস্য দেশ ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একমত হয়েছে।
এবারের বিমসটেক সম্মেলনের মূল পর্বে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা খুব বেশি না থাকলেও রিট্রিট সেশনে নেতৃবৃন্দের আলোচনারয় বিষয়টি আসতেই পারে। এই সম্মেলন শেষ হবে একটি যৌথ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে। নেপালের কাছ থেকে বিমসটেক চেয়ারের দায়িত্ব পাবে শ্রীলঙ্কা। বিমসটেকের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বর্তমানে কাঠমান্ডুতে অবস্থান করছেন। আর গত মঙ্গলবার সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফরের প্রথম দিনই নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং তার দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। রাতে সম্মেলনে আসা নেতাদের সন্মানে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শার্মা ওলির দেওয়া নৈশভোজেও তিনি যোগ দেবেন। সফর শেষে শুক্রবার দুপুরে দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
বিমসটেক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির বিস্তারিত: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামিট অব দ্য বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) ৪র্থ সম্মেলনে যোগ দিতে দুইদিনের সরকারি সফরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু যাচ্ছেন। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, আঞ্চলিক যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজের উন্নয়নের বিষয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ার দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের অলোচনার মূল বিষয়বস্তু হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভুটান ও নেপালের নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে তাদের তিন বাহিনীর সম্মিলিত সামরিক অনুশীলন এবং একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়েও মতবিনিময় করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ স্থানীয় হায়াৎ রিজেন্সি হোটেলে তাঁদের সম্মানে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি আয়োজিত নৈশভোজেও যোগ দেবেন।
কাঠমান্ডুতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামসও তা-ই বলছেন। তার ভাষ্য হলো ‘বৈঠক হবে লেইট আফটারনুনে। আমি তাই জানি। বিস্তারিত ঢাকাই ভালো বলতে পারবে। কিন্তু সেই বৈঠকে কী থাকছে? টকিং পয়েন্টস তো তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে জানার চেষ্টা করা হলে এক কর্মকর্তা বলেন- আমি জানি, আপনিও জানেন, ঢাকা-দিলি­ বৈঠক টকিং পয়েন্টস ধরে হয় না। এর বাইরেও কথা হয়। সেখানে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আর সেই বৈঠক যদি হয় শীর্ষ নেতৃত্বের, দুই প্রধানমন্ত্রীর, তা হলো নিশ্চিতভাবেই সেখানে অনেক বিষয় আসবে, যা টকিং পয়েন্টস-এ থাকবে না। আগে বৈঠক হোক, তারপর বলা যাবে তারা কী নিয়ে কথা বললেন। অন্য এক কর্মকর্তা বলেন- টকিং পয়েন্টস তৈরি হয় গৎবাঁধা ফরমেটে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন বৈঠকে বসেন তখন ও সেগুলো গৌণ হয়ে যায়। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলে তো টকিং পয়েন্টস এর কোনো পাত্তাই থাকে না। আলোচনা ভিন্নমাত্রা পায়! ওই কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, টকিং পয়েন্টস এ উন্নয়ন কর্মকান্ড থেকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয়ই কম- বেশি উল্লেখ রয়েছে। সেখানে তিস্তা, রোহিঙ্গা, সীমান্ত সমস্যা, নিরাপত্তা বাণিজ্য সব বিষয়ই থাকছে। তবে কোনো কিছুতেই বিশেষ ফোকাস রাখা হয়নি। ভারতের তরফে আসাম ইস্যু আসতে পারে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। ঢাকার ওই কর্মকর্তা বলেন-আমরা যে ধারণা পেয়েছি তাতে বিষয়টি উঠবে বলে মনে হয় না। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়? দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের বিষয়ে জানতে বৈঠক শেষ হওয়ার পর মিডিয়া ব্রিফিং পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে!
গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক আসন্ন বৈঠক বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমসটেকের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন, স্বাভাবিকভাবেই দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হবে। গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর পশ্চিমবঙ্গের শান্তি নিকেতন সফরে মোদির সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল। সেখানে তিস্তা ছাড়া দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছিল। বাংলাদেশেরভাটের আগে বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিভিন্ন ইস্যুতে কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে আঞ্চলিক রাজনীতি। ভারতে আসামের চলতি এনআরসি বিতর্কের আঁচ ঢাকাতেও পড়েছে। যদিও ভারতের তরফে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন স্তরের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে, অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। ভোটের মুখে ঢাকার স্পর্শকাতরতার দিকটি অবশ্যই দিলি­ বিবেচনায় রাখছে। ভারতের তরফ থেকে এমন কিছু করা হবে না, যাতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়ে যায়।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ৬:০০ এএম says : 0
    ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে শেখ হাসিনার এই একান্ত বৈঠিক একটা আশীর্বাদ স্বরূপ বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের ও ভারতের শীর্ষ নেতার শেষ বৈঠক কাজেই এই বৈঠকই হবে সবচেয়ে অর্থবহ বৈঠক এটাই সত্য। এখন শেখ হাসিনা কতটুকু কার্যকর হতে পারবেন এটাই প্রশ্ন…
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ