Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাসিন্দাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আস্থার সঙ্কট

পাহাড়ি সংগঠনগুলোর নতুন নীলনকশা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলের আঞ্চলিক দলগুলো
জুম্মদের আবারো শরণার্থী বানানোর কথা জানিয়ে দেয়া হচ্ছে
স্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি থেকে : শান্ত পাহাড়কে অশান্ত ও অস্থীতিশীল করতে নানা ধরনের গুজব ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী সংগঠনগুলো। এসব গুজবে পাহাড়ের বিভিন্ন লোকালয়ে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। গুজবের সূত্র ধরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষ তাদের যথাসর্বস্ব বিক্রি করে দিয়ে নগদ টাকা যোগাড় করে রাখছে যাতে বিপদের সময় তারা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমাতে পারে।
প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আঞ্চলিক দলগুলো আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই গুজবের কৌশল বেছে নিয়েছে। এদিকে সরকারি সংস্থাগুলো নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েও গুজবের ধারা ঠেকাতে পারছে না। এমনিতেই নানা ধরনের গুজবে কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই পার্বত্য দুই জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ঘটে যায় পাহাড়ি-বাঙলি সংঘর্ষসহ সাম্প্রদায়িকতার মতো স্পর্শকাতর নানা ঘটনা প্রবাহ। একের পর এক এই ধরনের ঘটনার ফলে পাহাড়ের বাসিন্দাদের আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পার্বত্যাঞ্চলের আঞ্চলিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে রাঙামাটির প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে ধারাবাহিকভাবে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। প্রথম সারি থেকে শুরু করে মধ্যমসারির নেতাসহ জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হওয়া এসব উঠান বৈঠকে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ-বিএনপি’র মতো রাজনৈতিকদল গুলোকে যাতে করে স্থানীয় উপজাতীয় বাসিন্দারা ভোট প্রদান না করে সে বিষয়ে স্পষ্টভাবেই হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টের উঠে এসেছে।
সূত্রে পাওয়া তথ্যে উল্লেখ রয়েছে, চলমান সশস্ত্র রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারে অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের লক্ষ্যে অভিযান আরো জোরদার করা হতে পারে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে জেএসএস-ইউপিডিএফ (মুল) একসাথে হয়ে সংস্কারপন্থী জেএসএস ও গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফকে রাঙামাটির জুড়াছড়ি-বাঘাইছড়ি ও লংগদু’র মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করা হবে। যদি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অত্যাচার শুরু করে, তাহলে আন্তর্জাতিক মহল জানবে যে শান্তি চুক্তি হওয়ার পরেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিরীহ পাহাড়িদের উপর অমানুষিক অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করার পাঁয়তারা করছে।
সম্প্রতি গোয়েন্দা রিপোর্টে এমনই তথ্য উঠে আসে এদিকে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় পাহাড়িরা তাদের হাঁস-মুরগী, গবাধি পশুসহ সৃজিত গাছ বাগানগুলো বিক্রি করা শুরুও করে দিয়েছে। রিপোর্টানুসারে বাঘাইছড়ির উপজেলার আওতাধীন শিজক, তাঙ্গুমাছড়া, জীবতলী, তালুকদার পাড়া, দোসর, এবং কচুছড়ি এলাকার, জেএসএস সমর্থিত পাহাড়িদেরকে বাঘাইছড়ির দপ্তর ও তথ্য প্রচার সম্পাদক দয়া সিন্ধু চাকমা ও আদিবাবুর নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র গ্রæপ এই ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বাঘাইছড়ির আদিবাবু, জুড়াছড়ির শিমন চাকমার নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জুম্মদেরকে আবারো শরণার্থী বানানোর কথা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার দুপুরে জেলার দূরছড়ি বাজারে আয়োজিত একটি বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায়ও এই ধরনের বিষয় তুলে ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তায় নিরাপত্তাবাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করেন। লংগদু সেনাজোনের জোন কমান্ডার এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। এদিকে, সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেএসএস নেতা ও বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বড় ঋষি চাকমা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষের মাধ্যমে এই ধরনের ভীতিকর গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এটা আমাদের দল করেনি। জানাগেছে, এই ধরনের আতঙ্কের বিষয়টি নজরে আসায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসনসহ নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। এই ধরনের গুজব ছড়ানোর বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ।
প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক জানান, আমাদের নজরে তথ্যটি এসেছি। এটা নিয়ে আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, এই ধরনের গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করে আমরা ব্যবস্থা নিবো। স্থানীয় বাসিন্দাদের এই বিষয়ে কোনো প্রকার আতঙ্কিত নাহওয়ারও আহবান জানিয়েছেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, নাগরিকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সরকার। আমরা শিগগিরই তৃণমুল পর্যায়ে যাবো স্থানীয়দের মতামতের ভিত্তিতে তাদের চাহিদা অনুসারে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করবো।
এদিকে এই ধরনের একটি তথ্য পুলিশ বিভাগও জানতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির। বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সাথেই নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার জানান, এই কাজের সাথে কারা কারা জড়িত তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথা সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রয়োজানীয় নির্দেশনা পেলেই আমরা আইনানুগভাবে ব্যবস্থা নিবো। জনসাধারণকে এধরনের কোনো গুজবে কান নাদিয়ে গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে তথ্যদিয়ে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার আহবানও জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ