Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পেছাচ্ছে তফসিল ঘোষণা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ১২:৩৭ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার সময় বা তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্রে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এর আগে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছিলেন অক্টোবরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করা হবে, নির্বাচন হবে ডিসেম্বরের শেষের দিকে। কমিশন সচিব গতকাল রাজধানীর নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন ডিসেম্বরের শেষে নির্বাচন হবে। তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যাবহারের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা কবে হবে সে বিষয়ে কিছুই বলেননি। নির্বাচন কমিশন সচিবের গতকালের এ বক্তব্যেও তফসিল ঘোষনা পিছিয়ে যেতে পারে এমন একটি আভাস রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, দেশের বর্তমান বিরাজমান রাজনৈতিক জটিল পরিস্থিতির সমাধান না হলে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন নতুন করে আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যাবহারের চিন্তাভাবনা করছে। এটি করতে হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মতামতের প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্যও নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করতে ইসির আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল এবং ডিসেম্বরের শেষের দিকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করতে পারে।
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী দশম সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। এ বিষয়টি সামনে রেখেই নির্বাচন কমিশন সচিব ইতিপূর্বে অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার কথা বলেছিলেন। তবে দিন যত ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ততই উত্তপ্ত এবং জটিল হওয়ার আশঙ্কা তৈরী হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনও হঠাৎ করে ইভিএম ক্রয় এবং আগামী নির্বাচনে ব্যাবহারের সিদ্ধান্ত নেয়ায় যথা সময়ে তফসিল ঘোষনার ব্যাপারে তাদের মধ্যেই যথেষ্ট সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য অক্টোবরে মাসে তফসিল ঘোষনা পিছিয়ে নভেম্বর মাসে দেওয়া হতে পারে এমন গুঞ্জন নির্বাচন কমিশনেই শোনা যাচ্ছে।
দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বা জোট আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখনো বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দলগুলো বলছে সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। অন্যদিকে মাঠের বিরোধীদল বিএনপি এবং তাদের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিকদলগুলো বলছে নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। বিরোধীদলের এর বাইরেও আরো অনেক দাবী থাকলেও মূলত নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে খুব শিগগির তারা জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোটও বিরোধীদলের আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার ঘোষনা দিয়েছে। এ অবস্থায় আগামী কয়েক মাস রাজনৈতিক অঙ্গণ বেশ উত্তপ্ত থাকবে এমনটা সহজেই অনুমেয়। রাজনৈতিক এমন প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় নির্বাচনের বিষয়টিই অনেকের কাছে বেশ কুয়াশাচ্ছন্ন বলে মনে হয়। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনায় তফসিল ঘোষনার বিষয়টিতো অবশ্যই পিছাতে পারে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক করে কমিশনের জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করা উচিত। তা না হলে আবারো এক অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের আগামী ভবিষ্যত নির্ভর করছে। নির্বাচন কমিশনের দিকে শুধু দেশের মানুষ নয়, আন্তর্জাতিক মহলেরও এখন সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ অনেক উন্নয়ন সহযোগী দেশ চায় বাংলাদেশে সকল দলের অংশগ্রহণমূলক একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। এ লক্ষে নানাভাবে তারা পরামর্শ, উপদেশ, সহায়তা দিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, দেশে কি ভাবে নির্বাচন হবে তা নির্ভর করবে সরকারি দলের উপর। এর পরে নির্ভর করে বিরোধী রাজনীতিক দল গুলোর উপর। কোনো সমস্য দেখা দিলে কমিশন দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবে। এর পরও যদি বিরাজমান পরিস্থিতির সমাধান না হয় তখন হয়তো তফসিল পিছিয়ে দিতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হবে। তাই এখনো হাতে যথেষ্ট সময় আছে। তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইনকিলাবকে বলেন, ভোটের লড়াইয়ে কিংবা আন্দোলনের মাঠে, দুই ক্ষেত্রেই বিএনপিকে মোকাবেলার প্রস্তুতি রয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে এলে কী কৌশল হবে, আর না এলে কী কৌশল হবে, তাও ঠিক করে রাখা আছে। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারেও বিএনপির থাকার সুযোগ নেই। সংসদে প্রতিনিধিত্ব না থাকায় গতবারের মতো এবার নির্বাচনকালীন সরকার হলেও তাতে বিএনপি স্থান পাচ্ছে না।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা তো বলেছি আমাদের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, তারপর নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর আমাদের এসব দাবি তীব্র গণআন্দোলনের মুখে সরকারেকে অবশ্যই মানতে হবে।
প্রসঙ্গত, দেশে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের ২৯ জানুয়ারি নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে বসেছিলেন। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিন অর্থাৎ এ বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ###



 

Show all comments
  • কাসেম ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ৫:৩০ এএম says : 1
    দয়া করে একটা সুষ্ঠ নির্বাচন দিন
    Total Reply(1) Reply
    • Shahadat ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ৭:২৬ এএম says : 4
      এটা কোন দয়া নয়, দায়ীত্ব
  • নাম অপ্রকাশ্য ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ৯:০৯ এএম says : 2
    নির্বাচনের দরকার কি?দেশ,ত, ভালই চলছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Modasser Hossen ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ১:০৮ পিএম says : 0
    দয়া করে প্রচন্ড অসুস্থ নির্বাচন দেবেন / তা না হলে আগামী পাঁচ বছর জীবন থাকবে একেবারে পানসে /
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mostafa Kamal ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ১:১৬ পিএম says : 1
    সরকার ভয় পেয়ে গেছে। তারা জানে ভোট হলে জিতবে না
    Total Reply(0) Reply
  • রাসেল আহাম্মেদ ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ১:১৭ পিএম says : 0
    ডাল মে কিছু কালা হে,,,একটা কিছু হবে এবার,,,,,,,
    Total Reply(0) Reply
  • Abdur Rashid ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ১:১৭ পিএম says : 0
    আবার কি হলো?
    Total Reply(0) Reply
  • Rasel Sarder ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ১:১৭ পিএম says : 0
    কি দরকার নির্বাচনের নামে তামাশা করার।
    Total Reply(0) Reply
  • ৩১ আগস্ট, ২০১৮, ৮:০২ এএম says : 3
    যত কিছুই ঘটক অন্য কোন জোট সরকারে আসতে পারবে না মহাজোট ছাড়া এটি পানির মত পরিষ্কার. বি এন পি জোটের অতৗত দুঃশাসন দুরনৗতি প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে সাধারণ ভোটাররা বি এন পি কে বিশ্বাস করে না. বি এন পি মানে দুরনৗতি বি এন পি মানে হাওড়া ভবন বি এন পি নামে দুঃশাসন কাজেই বি এন পি জোট কেউ বিশ্বাস করে না নিজ দলের নেতা কমিরা ছাড়া.
    Total Reply(1) Reply
    • Rasel Ahmed ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৯:০২ এএম says : 4
      বিশ্বাস করে কি করে না সেটা তো সুষ্ঠ নির্বাচন হতে দিতে হবে। আজাইরা মুখস্ত কথা বলে লাভ কি জনাব?? এই ধরণের কথা আপনাদের লোকদের মুখেই মানায়, আর কারো না। নির্বাচন সুষ্ঠ হতে দিন, তারপর জনগন কাকে চায়, আর কাকে না চায় সেটা জানা জাবে।১. ব্যাংকের টাকা২. শেয়ার মার্কেট টাকা৩. প্রকল্পের টাকা দ্বিগুন বৃদ্ধি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ গুণও হয়েছে। দেশের সেই টাকা কোথায়?? এ রকম শত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না।দেশকে ভালোবাসলে মন থেকে ভালোবাসুন। রক্ষক হয়ে ভক্ষকের মত খাওয়া লোক হলে তো কিছু বলার থাকে না।ধন্যবাদ

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

১৬ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ