Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বপ্ন বুনছেন টার্কি খামারে

ফেনী থেকে মো. ওমর ফারুক | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

এক সময়ের ব্রয়লার খামারি ফুলগাজীর বাসিন্দা একরাম এখন টার্কি খামার করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কয়েক বছর ব্রয়লার মুরগি খামার চালিয়ে লাভের মুখ না দেখলেও ভালোই লাভ করছেন এখন টার্কি খামারে। তাকে দেখে আশপাশের এলাকায় এখন অনেকেই চালু করেছেন টার্কি খামার।
জানা যায়, ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ গাবতলা গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে একরামুল হক একরাম। ২০০৬ সালে যুব উন্নয়ন থেকে পশু পালনসহ ছয়টি বিষয়ে ট্রেনিং নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় ওমানে পাড়ি দিয়ে তিন বছর কাজ করেন। পরে দেশে এসে ব্রয়লার মুরগির খামারি ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন এ মুরগি লালন-পালন করে লাভের মুখ না দেখায় বাড়ির পাশে টিনশেড়ের ঘরে শুরু করেন টার্কি খামার। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে আয়ারল্যান্ড প্রবাসী মামা সলিম উল্ল্যাহ মজুমদারের পরামর্শে বাণিজ্যিকভাবে তিনি এ খামার চালু করেন।
খামারি একরাম জানান, এর আগে ইউটিউবে টার্কি সম্পর্কে অনেক ধারণা লাভ করি। একপর্যায়ে চট্টগ্রামের কাপ্তাই এলাকা থেকে ৬৩ হাজার টাকা দিয়ে এক মাস বয়সী ৬৩টি টার্কি বাচ্চা নিয়ে শুরু করি খামারের কার্যক্রম। ওই সময় ৫৩টি বাচ্চা মারা গেলেও হাল ছাড়েননি তিনি।
এখন একরামের খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে তিন শতাধিক টার্কি রয়েছে। প্রতি মাসে ডিম থেকে ফোটে ২৫০টির মতো বাচ্চা। তার খামার থেকে আশপাশের ছোট খামারিরা ডিম ও বাচ্চা নিয়ে খামার চালু করছে।
তিনি জানান, তার খামারে এক থেকে ১৫ দিন বয়সের বাচ্চা প্রতিপিস ৪০০ টাকায়, এক মাস বয়সি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, ৪৫ দিনের টার্কি প্রতিপিস ৮০০ টাকা ও দুই মাস বয়সি টার্কি প্রতিটি এক হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। টার্কি ছয় মাস থেকেই ডিম দেয়া শুরু করে। একাধারে ১৮০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত ডিম দেয় প্রতিটি টার্কি। প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। একরাম শুধু খামার স্থাপন করেই বসে থাকেননি। তিনি নিজস্ব প্রযুক্তিতে ইনকিউবেটর বানিয়ে নিজেই ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে যাচ্ছেন। ইউটিউব থেকে ইনকিউবেটর বানানোর বিষয়ে ধারণা নিয়ে ঢাকার নবাবপুর থেকে সার্কিট ও মিটার কিনে নিজেই বানিয়েছেন বাচ্চা ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটর। তার ইনকিউবেটরে নির্ধারিত আদ্রতায় ডিম রাখলে ২৮ দিনের মধ্যেই বাচ্চা বেরিয়ে আসে। তিনি ইনকিউবেটর যন্ত্রটি বানিয়ে চার হাজার টাকায় দরে বিক্রি করছেন আশপাশের খামারিদের মাঝে।
দানাদার খাদ্য ছাড়াও কলমির শাক, বাঁধাকপি ও সবজি জাতীয় খাবার খায় টার্কি মুরগি। চার মাস পর থেকে খাওয়ার উপযোগী হয় টার্কি। ছয় মাসে এ মুরগির ওজন প্রায় ছয় থেকে সাত কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঠিকমতো তত্ত্বাবধান করলে একটি টার্কি মুরগির ওজন প্রায় ৩০ কেজি পর্যন্ত হয়। অনেকটা খাসির গোশতের মতোই এ টার্কির গোশতের স্বাদ। এ মাংসে অধিক পরিমাণে প্রোটিন ও চর্বি কম থাকায় রশিক ভোক্তাদের খাদ্য তালিকায় যোগ হয়েছে এ টার্কির গোশত।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদক কর্মকর্তা ডা. মো. আনিসুর রহমান জানান, টার্কি এখনো মুরগি হিসেবে স্বীকৃত নয়। এটি মূলত এক ধরনের পাখি। টার্কির রোগ-ব্যাধি কম হওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেকটা কম।এ জাতের মুরগি পালন করে কম সময়ে ভালো লাভ করা যায়। ফেনীর পরশুরামে এ প্রজাতির ব্যবসা করে ভালো টাকা আয় করেছেন কয়েকজন খামারি। টার্কি পালনে কয়েকটি ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ও পল্লি ঋণের নতুন নীতিমালায় এই পাখি পালনে ঋণ দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী খামারিরা সর্বোচ্চ ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ