Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সালাম মুর্শেদী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত!

প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাহেদ খোকন : বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদের, ঢাকা মোহামেডানের ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভুঁইয়া ও সাবেক তারকা ফুটবলার দেওয়ান শফিউল আরেফীন টুটুল। বাফুফে নির্বাচনে কাদের সিনিয়র সহ-সভাপতি, লোকমান সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি এবং টুটুল সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সদস্য পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা প্রত্যাহার করে নেন। গতকাল ছিলো মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন কাদের, টুটুল ও লোকমান নিজেদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়ায় বাফুফে নির্বাচনে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আব্দুস সালাম মুর্শেদী বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হন।
নির্বাচনকে ঘিরে গতকাল দিনভর নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে বাফুফে ভবনে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কখনো সালাউদ্দিনের সম্মিলিত প্যানেল আবার কখনো কামরুল আশরাফ খানের ‘বাঁচাও ফুটবল’ প্যানেলের নাম ঘুরে-ফিরেই উচ্চারিত হয়েছে মুখে মুখে। এদিন জোরালো আলোচনায় ছিলো সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে দুই প্যানেলের সমঝোতার বিষয়টিও। সারাদিনই গুঞ্জন ছিলো সমঝোতার ভিত্তিতেই বাফুফে নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু দিনশেষে সেই গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন নিজেই। সন্ধ্যায় মিডিয়ার সামনে হাজির হয়ে তিনি ঘোষণা দিলেন, ‘আমি নির্বাচনে আছি এবং থাকবো। কোন মহল থেকেই আমার ওপর কোনো চাপ নেই। আমার নেতৃত্বাধীন পূর্ণ প্যানেলই ৩০ এপ্রিলের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচনে আমার প্যানেল কাজ শুরু করে দিয়েছে।’ নির্বাচনে যদি উচ্চ মহলের চাপের কথা আলোচনায় থাকে, তাহলে ফিফা থেকে এ নিয়ে আপত্তি তুলতে পারে। বিষয়টি সালাউদ্দিনের নজরে আনলে তিনি বলেন, যেহেতু কোনো চাপই নাই, সেহেতু ফিফার বিষয়টি আলোচনায় আসার প্রশ্নই ্ওঠে না।’ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। প্রয়োজন হলে আলোচনা করব।’ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সালাম মুর্শেদীর নির্বাচিত হওয়াকে প্যানেলের জয় বলে উল্লেখ করেন বাফুফের বর্তমান সভাপতি।
তবে বাফুফে নির্বাচনে যে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বীতার আভাষ ছিলো, সেই পদেই কিনা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হলেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। যিনি সালাউদ্দিনের প্যানেল থেকেই নির্বাচনে মনোনয়ন নেন। তার দাঁড়িয়েছিলেন ছিলেন ‘বাঁচাও ফুটবল’ প্যানেলের মনজুর কাদের, দেওয়ান শফিউল আরেফীন টুটুল ও লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। কাদের-লোকমান গেল পরশু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও নির্বাচনি ময়দানেই ছিলেন এই প্যানেলের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফীন টুটুল। কিন্তু কাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে সবাইকে চমকে দিলেন টুটুল। শুধু সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকেই নয়, সদস্য পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে সেখান থেকেও নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার। তিনজন হেভিওয়েট প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তৃতীয়বারের মতো বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হলেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। আজ তাকে নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করবে। গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় পার করে মিডিয়াকে এমনটাই জানান বাফুফে নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। সালাম মুর্শেদী বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হওয়ার এখন সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সদস্য এই তিন পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটার তালিকা ক্রম অনুসারে আজ প্রকাশিত হবে। গতকাল সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় থাকায় এখন আর কোনো প্রার্থীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশন মেজবাহ এমনটাই জানান। বাফুফে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন গতকাল সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা চলে এর কার্যক্রম। এই সময়ের মধ্যে ১১টি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার হয়। সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদ থেকে মনজুর কাদের, দেওয়ান শফিউল আরেফীন টুটুল ও লোকমান হোসেন ভূইয়া নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিলে এদিন সদস্য পদের ৭ জন নাম প্রত্যাহার করেন। এরা হলেন- আজমল আহমেদ তপন, একেএম মমিনুল হক সাঈদ, দেওয়ান শফিউল আরেফীন টুটুল, শেখ নিজাম উদ্দিন, আ ন ম আমিনুল হক মামুন, আব্দুস মান্নান এবং মোস্তাফিজুর রহমান মাইনু।
এদিকে বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে,অনেকটা সমঝোতার ভিত্তিতেই সালাম মুর্শেদী সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সুত্রটি জানায়,বাফুফে নির্বাচনকে সামনে রেখে এতোদিন আব্দুস সালাম মুর্শেদী বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদের প্যানেলেই ছিলেন। কিন্তু গতকাল দুপুরে ডিগবাজী মারেন তিনি। এদিন আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী নেতার বারিধারা বাসভবনে গিয়ে সালাম সভাপতি পদপ্রার্থী কামরুল আশরাফ খান পোটনের প্যানেলের পক্ষে কাজ করার অঙ্গিকার করেন। আর তার এই অঙ্গিকারের কারণেই পোটনের প্যানেল থেকে তিনজন হেভীওয়েট সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
অবশ্য সমঝোতার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন সালাম। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়ে মিডিয়াকে তিনি বলেন,‘ সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা নির্বাচনী ময়দানে ছিলাম, আছি। কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদ প্যানেলে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি। আমাকে কেউ পদ ছেড়ে দেয়নি। সমঝোতার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব।’
সমঝোতার আরেকটি বিষয় কাল বেশ জোরশোরে শোনা গেছে। দুই প্যানেল থেকে দু’জন করে মোট চারজন সহ-সভাপতি নাকি মনোনীত হয়ে গেছে। সালাউদ্দিন প্যানেল থেকে কাজী নাবিল আহমেদ এমপি ও সামশুল হক চৌধুরী এমপি এবং ‘বাঁচাও ফুটবল’ প্যানেল থেকে আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু ও নজিব আহমেদের নাম শোনা গেছে এ তালিকায়। তবে দিনশেষে বিষয়টি যে গুজব তা পরিস্কার করেন সালাম ও কাজী সালাউদ্দিন। তবে দুই প্যানেলে সমঝোতায় হোক বা না হোক সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন ঠিকই করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, পুলিশের অতিরিক্ত পরিদর্শক মুহম্মদ মারুফ হাসান এবং মমিনুল হক সাঈদ। এই পদে আছেন বাদল রায়, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি ও খুরশিদ আলম বাবুলও।
এদিকে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি ও ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিল একেএম মমিনুল হক সাঈদ সদস্য পদে নাম প্রত্যাহার করলেও সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন। শুরুতে কাদেরের প্যানেল ‘ফুটবল বাঁচাও’ সদস্য হিসেবে পরিচিত হলেও কাল নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বলে ঘোষণা করেন তিনি। কোনো প্যানেলে নাই এবং নির্বাচন থেকে সরেও দাড়াচ্ছেন বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন সাঈদ। একই সঙ্গে তিনি এও বলেন, ‘বাঁচাও ফুটবলের সঙ্গে নির্বাচনী ময়দানে নেই। কিন্তু তারা যদি ফুটবল স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আন্দোলন করে তাতে অংশ নিবেন।’ নির্বাচনে যে সমঝোতা হচ্ছে এমন খবর সরাসরি নাকচ করেননি সাঈদ।  এ বিষয়ে তার কানেও খবর এসেছে বলে জানান তিনি।

যারা নির্বাচনে থাকছেন
সভাপতি: কাজী সালাউদ্দিন (সালাউদ্দিন প্যানেল), কামরুল আশরাফ খান (বাঁচাও ফুটবল প্যানেল), গোলাম রব্বানী  হেলাল ও মো. নুরুল ইসলাম নুর (স্বতন্ত্র)।
সিনিয়র সহ-সভাপতি: আব্দুস সালাম মুর্শেদী (সালাউদ্দির প্যানেল-বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত)।
সহ-সভাপতি: কাজী নাবিল আহমেদ, বাদল রায়, আলহাজ্ব শামসুল হক চৌধুরী, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি (সালাউদ্দিন প্যানেল), খুরশিদ আলম বাবুল, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, নজিব আহমেদ (বাঁচাও ফুটবল প্যানেল), একেএম মমিনুল হক সাঈদ, তাবিথ আওয়াল ও শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান (স্বতন্ত্র)।
সদস্য: হারুনুর রশীদ, আমিরুল ইসলাম বাবু, সত্যজিৎ দাশ রূপু, ফজলুর রহমান বাবুল, ইলিয়াস হোসেন, মাহফুজা আক্তার কিরণ,শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর, মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম, আব্দুর রহিম, জাকির হোসেন চৌধুরী, অমিত খান শুভ্র, সালেহ জামান সেলিম, আরিফ হোসেন মুন, আলমগীর খান আলো, তৌফিকুল ইসলাম তোফা (সালাউদ্দিন প্যানেল)। নওশের উজ্জামান, শেখ মো. আসলাম, আব্দুল গাফফার, আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স, আজফার -উজ জামান খান সোহরাব, হাজী মো. টিপু সুলতান, মো. ইকবাল, কামরুন নাহার ডানা, সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালিদ সাব্বির ও কায়সার হামিদ (বাঁচাও ফুটবল প্যানেল)।
ইমতিয়াজ সুলতান জনি, বিজন বড়ুয়া, আমের খান, মো. ইকবাল হোসেন, হাসানুজ্জামান খান বাবলু, সাইফুর রহমান মনি, ও আসাদুজামান মিঠু (স্বতন্ত্র)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সালাম মুর্শেদী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত!
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ