সোমবার এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। এ খবর প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টে। এতে সাংবাদিক শিবানি মাহতানি লিখেছেন, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ সামরিক কর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচার করতে হবে।
গত আগস্ট থেকে তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যে নৃশংসতা চালায় তার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় নিন্দার ঝড় ওঠে। এক বছরের বেশি সময় ধরে সাক্ষাতকার, গবেষণা, জাতিসংঘের অনুমোদিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে ওই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। রাখাইন রাজ্য ও অন্যান্য স্থানে কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে সে বিষয়টিতে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন শুধু রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানেই সীমাবব্ধ থাকেনি। তারা ২০১১ সাল থেকে সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডের বিষয়ে তদন্ত করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এতে দেখা গেছে রাখাইন, কাচিন ও শান রাজ্যে ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। নির্যাতন করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ন্যাক্কারজনক অপরাধ। বাছবিচারহীনভাবে হত্যা, গণধর্ষণ, শিশুদের ওপর নির্যাতন, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার বিষয়কে কখনো সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা দিয়ে সাফাই গাওয়া যায় না। প্রকৃতপক্ষে যে নিরাপত্তা হুমকি দেখা দিয়েছিল তার প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী যে কৌশল নিয়েছিল তা ভয়াবহভাবে অযৌক্তিক।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলেছে, মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেলদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করার জন্য যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। এ বিষয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মন্তব্য নিতে চাইলে তাদের পাওয়া যায়নি। এই রিপোর্টে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারের সময় রাখাইনে কি জঘন্য মানবাধিকার বিষয়ক সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই সরকার নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা উলটো এ বিষয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ করেছে। তদন্তে দেখা গেছে রাখাইনে ধ্বংসলীলা চালানোর প্রমাণ রয়েছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তকারীদের সেখানে যেতে দেয়া হয়নি।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক কর্মকর্তা রিচার্ড হোরসে বলেন, এই রিপোর্টটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় রকমের প্রভাব ফেলবে। কারণ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়টি তদন্ত করেছে জাতিসংঘের অনুমোদিত তদন্তকারী ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। তারা শান ও কাচিন রাজ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষের বিষয়েও আলোকপাত করেছে। এই রিপোর্টে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচার করার জন্য পর্যাপ্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে।