Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

স্মরণকালের অধিক উষ্ণতা ও তাপদাহ ছিল এবারকার হজের মৌসুমে। এরই মধ্যে প্রাণের টানে সারাবিশ্বের ১২২টি দেশ থেকে বিশ লাখেরও অধিক মুসলমান নারী-পুরুষ ছুটে আসেন পবিত্র ভূমিতে। ৭ জিলহজ্জ থেকে তারা মিনায় সমবেত হতে থাকেন। ৮ তারিখ হয় প্রচন্ড বালুঝড়। মক্কা মিনা মুজদালিফা ও আরাফাতের এই ১৬ কিলোমিটার মরুঝড়ে প্রচন্ডভাবে আক্রান্ত হয়। কিন্তু সকল বাধা ছিন্ন করে, হৃদয়ের গহীন কন্দরে মহান সৃষ্টি ও পালন কর্তা রাব্বুল আলামিনের প্রতি কঠিন ভালোবাসায় অদম্য লাখো হজ পালনার্থী প্রেমিক বান্দা-বান্দীরা ছুটে আসেন আরাফাতের ময়দানে। আদি মানব মানবী হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও হাওয়া আলাইহাস সালাম-এর স্মৃতিবিজড়িত আরাফাতের ময়দানে গতকাল ছিল লাখো আদম সন্তানের ভিড়। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্ত থেকে যারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসে মিশেছিলেন মানবতার সর্বপ্রাচীন ও তাৎপর্যময় এই মিলন মেলায়। হজ মানেই আরাফাত- একথা বলেছেন মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এর পাশাপাশি মক্কা-মিনা-মুজদালিফা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম, হজরত হাজেরা আলাইহাস সালাম, হজরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম-এর জীবন স্মৃতির সাথে জড়িত। হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী এই হজ সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ রূপ ও চূড়ান্ত তাৎপর্য লাভ করে সাইয়্যিদুল মুরসালিন হজরত মুহাম্মদ সা.-এর যুগে। আজ থেকে ১৪২৯ বছর আগে ৯ জিলহজ শুক্রবার বিদায় হজ পালনের মাধ্যমে বিশ্ব নবী (সা.) আমাদের জন্য রেখে যান আজকের এই মহান হজ কার্যক্রম। তার পবিত্র পদরেখা অনুসরণেই শুরু হয় হজের কাজ। ৭ তারিখ মক্কায় খুতবা, ৮ তারিখ মিনায় এসে ৬ ওয়াক্ত নামাজ তাঁবুতে পড়া, ৯ তারিখ আরাফায় অবস্থান করা, দিবাগত রাত মুজদালিফায় অবস্থান, ১০ তারিখ কঙ্কর নিক্ষেপ শুরু এসবই মহানবী সাল্লাল্লাহু-এর নির্দেশিত হজ কার্য। পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চল থেকে তওহীদে বিশ্বাসী বিশ্ব নবীর উম্মতরা ছুটে এসেছিলেন আরাফাতের মাঠে। কণ্ঠে তাদের একই ধ্বনি, পরনে একই কাপড়, মনে একই ভাবনা, চোখে একই স্বপ্ন। আল্লাহর দয়া, ক্ষমা, করুণা ও মুক্তির আশায় মানব জাতির অন্তর নিংড়ানো আওয়াজই যেন ভাসছিল গতকালের আরাফাত প্রান্তরে। হাজির হে আল্লাহ আমি হাজির। তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে আমি উপস্থিত। তোমার কোন শরীক নেই। নিশ্চয় সকল প্রসংশা, সকল নেয়ামত ও সকল সাম্রাজ্য শুধুই তোমার। তোমার কোন শরীক নেই।
এভাবেই লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দানে বিশ লক্ষাধিক হাজীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হল পবিত্র হজের প্রধান কার্যক্রম ওকুফে আরাফা। গতকাল সউদী তারিখ ৯ জিলহজ দুপুরে হজের নিয়মানুযায়ী মসজিদে নামিরায় পবিত্র হজের খুতবা প্রদান করেন পবিত্র মসজিদে নববীর ইমাম শায়েখ হোসাইন বিন আবদুল আজিজ আলুশ শায়েখ। খুতবা শেষে যথারীতি এক আজান ও দুই ইকামতে পড়া হয় জোহর ও আসরের কসর নামাজ। নামাজ শেষে সূর্যাস্ত পর্যন্ত লাখো হাজী দোয়া, দুরুদ, জিকির ও মুনাজাতে রত থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের সাধনা করেন। সূর্য ডোবার পর তারা রওয়ানা হন মুজদালিফার পথে। সেখানে পৌঁছার পর একসাথে আদায় করেন মাগরিব ও এশা। মুজদালিফার খোলা প্রান্তরে রাত কাটিয়ে (এটি হজের একটি ওয়াজিব) তারা আজ ভোরে গিয়েছেন মিনায়। বড় জামারায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে হাজীরা কোরবানি দেবেন। মিনায় অবস্থান করে পরবর্তী দুই দিন তিনটি জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে তারা ফিরবেন মক্কা শরীফে। এর মধ্যে তাদের করতে হবে ফরজ তওয়াফ। এরপর বিদায়ী তওয়াফ শেষে হাজীদের দেশে ফেরার পালা। যারা আগে মদীনা শরীফ যাননি, তারা হজের পরে সেখানে যাবেন।
ইমাম সাহেব তার খুতবায় বলেন, হজ হচ্ছে মানব জাতির স্বীকৃতির ঘোষণা, যেখানে তারা এক আল্লাহর সার্বভৌমত্ব তথা তওহীদের স্বীকৃতি দেয়। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে নিজের জীবন, পরিবেশ ও বিশ্বকে গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি লাভ মানুষের কর্তব্য। এক আল্লাহয় বিশ্বাসী মানুষ এভাবেই বিশ্ব শান্তির প্রত্যয় পোষণ করে। একথা মনে রাখতে হবে এবং পৃথিবীকে জানাতে হবে যে, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ভালোবাসার ধর্ম, অপরের কষ্ট বোঝার ধর্ম, সহানুভ‚তির ধর্ম, উদারতার ধর্ম, মানবতার ধর্ম। মুসলমান সেই ব্যক্তি যার কথা কাজ ও আচরণে কোনো মানুষ কষ্ট পায় না। এবারকার আরাফাতের খুৎবা বিশ্ব মিডিয়ায় সম্প্রচারের ক্ষেত্রে সউদী কর্তৃপক্ষ যে থিম বেছে নেন সেটি ছিলো ‘মানবতা’। সবশেষে ইমাম সাহেব বিশ্বের সকল মানুষের শান্তি ও সুন্দর সহাবস্থান কামনা করে দোয়া ও রহমত বরকতের বাণীর মাধ্যমে খুতবা শেষ করেন।



 

Show all comments
  • Asad ২১ আগস্ট, ২০১৮, ৩:১৫ এএম says : 0
    লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়াননি'মাতা লাকা ওয়ালমুলক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক
    Total Reply(0) Reply
  • আমিন ২১ আগস্ট, ২০১৮, ৩:১৬ এএম says : 1
    আল্লাহ তায়ালা সকল হাজীদের হজ্ব কবুল করুন
    Total Reply(0) Reply
  • কববির ২১ আগস্ট, ২০১৮, ৩:১৭ এএম says : 0
    যারা হজে গিয়েছেন তারা হজে গিয়ে সেলফি তোলা ফেসবুকে প্রচার করা বন্ধ করুন হজের দিকে মনোযোগ দিন
    Total Reply(0) Reply
  • সুমন ২১ আগস্ট, ২০১৮, ৩:১৮ এএম says : 0
    আল্লাহতালা যাদেরকে হজ করার তৌফিক দিয়েছেন তাদেরকে সুস্থ রাখুন এই ঝড়-বৃষ্টি এগুলো মুসলমানদের জন্য সতর্কসংকেত'
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজ

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ